মাথাঘোরা, খিটখিটে মেজাজ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, স্মৃতিশক্তিলোপ
শেখ আব্দুল হামিদ
করোনা থেকে অনেকেই সুস্থ হলেও দীর্ঘমেয়াদী নানা জটিলতায় ভুগছেন। খুলনার বটিয়াঘাটায় বিরাট গ্রামের এক বিধবা এবং তার কন্যা চলতি জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বর পুরোপুরি ভালো হওয়ার আগেই হালকা গায়ে ব্যথা দেখা দেয়। জ্বর থাকতে থাকতেই তারা খাওয়ার রুচি হারিয়ে ফেলেন। খাবার বা অন্য সবকিছু তাদের কাছে গন্ধহীন হয়ে পড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা: মিজানুর রহমানের তত্বাবধানে ১৭ জুলাই বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁকে এবং তার কন্যাকে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষায় তাঁদের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বিধবাকে একপর্যায়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। ২২ জুলাই অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন না থাকায় একটু সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন ওই বিধবা এবং তার কন্যা। সোমবার তিনি দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, পেটে গ্যাসের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। করোনার পর বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘুমের জন্য রাতে ওষুধ খেতে হয়। আগে এই অভ্যাস ছিল না। শরীর এত দুর্বল যে উঠে দাঁড়াতে পারে না।
গত দুদিনে বিভিন্ন বয়সী ও বিভিন্ন পেশার ৯ জন নারী-পুরুষের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তাঁরা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এখন সুস্থ। তাঁদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই বলেছেন, করোনার কারণে নতুন শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে যেসব সমস্যা ছিল না। এখন সেসব দেখা দিয়েছে।
খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য ও বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার জানান, তিনি দু’বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথাম বারে টিকা নেয়ার আগেই করোনায় পড়েন। পরে সুস্থ হয়ে দুডোজ টিকা গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বার করোনায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিন আগে সুস্থতা লাভ করেন। এখন তার শরীর খুবই দুর্বল। কয়েক পা হাটলেই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। মাথা ঘুরায় কোন কিছু খেতে ভাল লাগে না, মেজাজ সব সময়ই খিটখিটে থাকে।
করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া খুলনার একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, করোনা থেকে রেহাই পেলেও অসুস্থতা থেকে রেহাই মিলছে না। পূর্বের মত শরীরের অবস্থা আর নেই। তিনি বলেন কোন কিছুই আর আগের মত মনে থাকছে না। তিনি বলেন, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার দুই মাস পরও খিটখিটে মেজাজ সমস্যায় ভুগছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন খুলনা’র সভাপতি ডা: বাহারুল আলম দৈনিক জ¥ভূমিকে বলেন, রোগটা একেবারে নতুন। প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয় জানতে পারছি। তবে যাঁরা সুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের চিকিৎসকের সংস্পর্শে বা ফলোআপের আওতায় থাকতে হবে। করোনা একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগ লান্সকে আক্রমণ করে, রক্তে জমাট বাঁধতে সহায়তা করে, মানুষের মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আঘাত করে। করোনা থেকে মুক্তি পেলেও দীর্ঘ সময় লাগে এর প্রভাব থেকে সেরে উঠতে। তিনি বলেন, যে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী তার তত কম ক্ষতি হয়। এ রোগের উপস্বর্গ মানুষের শরীরে কমপক্ষে এক বছর বা তার অধিক সময়ও থাকতে পারে। এসব নিয়ে এখনও প্রচুর গবেষণার প্রয়োজন আছে।
গত বছর ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর এই রোগ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা শুর হয়। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। শুরু থেকেই একে মারাত্মক তীব্র শ্বাসতন্ত্রের রোগ (সিভিয়ার ইকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফুসফুসসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন স্থানে এই ভাইরাস বাসা বাঁধতে বা বেঁচে থাকতে পারে। তবে মল, মূত্র ও রক্ত নিয়ে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের বাইরে শরীরের অন্য স্থানেও এই ভাইরাস বাসা বাঁধতে বা বেঁচে থাকতে পারে। কারো কারো শরীরে করোনা ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: বিধান চন্দ্র ঘোষ বলেন, করোনা একটি জটিল রোগ। এ রোগে কেউ ভোগে কেউ ভোগে না। যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম সাধরণত সেই বেশী ভোগে। যে কারণে করোনা থেকে সুস্থ হলেও তার দীর্ঘমোয়াদী ফল ভোগ করতে হয়।
করোনামুক্ত হলেও নানা জটিলতায় ভুগছেন আক্রান্তরা
Leave a comment