সোহেল আহমেদ, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে আলোচিত মেছো বাঘ হত্যা ও ঝুলিয়ে রাখা ঘটনায় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে যশোর বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের ইজিবাইক চালক জাহিদুল ইসলাম (৩৫) ও নলডাঙ্গা বাজারের ইজিবাইক ষ্টান্ডের স্টাটার মোশারফ হোসেন (৬০)।
বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্তৃক মামলার অভিযোগে জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ-নলডাঙ্গা সড়কের কাদিপুর নামক স্থানে একটি মেছো বাঘ কে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে জাহিদুল ইসলাম নামক ওই ইজিবাইক চালক মৃত বাঘটি বাজারে নিয়ে যান। নলডাঙ্গা বাজারের ইজিবাইক স্টান্ডে নেওয়ার পর সেখানে উপস্থিত কিছু মানুষ মৃত বাঘটি একটি দোকানোর সামনে খুটির সঙ্গে বেঁধে তারা গলায় ফুলের মালা দিয়ে সজ্জিত করে। বাঘের মুখের মধ্যে সিগারেট আর সামনে চায়ের কাপে চা রেখে ছবি উঠায়। পরে সেটা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এটা দেখে বনবিভাগের ঝিনাইদহ ও যশোর সকল ইউনিটের কর্মকর্তারা শুক্রবার ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনা যাচাই শেষে কালীগঞ্জ থানায় প্রথমে একটি অভিযোগ দেন এবং পরবর্তীতে ২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেন । শনিবার নলডাঙ্গা বাজারে গেলে স্থানীয়রা জানান, ঘটনার দিন চলন্ত যানবাহনে বাড়ি লেগে মেছো বিড়ালটি মারা যায়। সেটা মজা করার জন্য একজন চালক তার ইজিবাইকে করে বাজারে নিয়ে আসেন। পরে বাচ্চা বয়সের কয়েকজন এটাকে সাজিয়ে ছবি উঠায়। তাদের ইচ্ছা ছিল ছবিটি ভাইরাল করা। কাদিপুর জামে মসজিদের ইমাম নূর ইসলাম জানান, তিনি ভোরে নামাজ পড়ানোর পর ফেরার পথে বিড়ালটিকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছেন। তার ধারনা রাতে কোনো এক সময় চলন্ত যানবাহনে ধাক্কা খেয়ে বিড়ালটি মারা গেছে। এরপর সকালে ইজিবাইক চালকরা সেটা বাজারে নিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ওয়াইল্ড লাইফ এন্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশের কালীগঞ্জের দায়িত্বে থাকা আইন বিষয়ক সম্পাদক আদনান মীম জানান, তারা ঘটনাটি তদন্ত করছেন। কিভাবে মেছো বিড়ালটি মারা গেল এখই বলা যাচ্ছে না। তবে যেভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল সেটা ঠিক হয়নি। তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর তারা এলাকায় গিয়ে সচেতনতামূলক সভাও করেছেন। আগামীতে যেন এ জাতীয় ঘটনা কেউ না ঘটায় তার জন্য কাজ করছেন। আঞ্চলিক বন সংরক্ষক কর্মকর্তা জহির আকন জানান, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি দেখে সেখানে কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছিলেন। ঘটনা নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ আসামী গ্রেপ্তার করেছে। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ওসি তদন্ত মোফাজ্জেল হক জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগে তারা দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে । ঘটনাটিতে অন্য যারা জড়িত তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি যোগ করেন।