
জন্মভূমি ডেস্ক : তাপপ্রবাহের মধ্যে শনিবার অধস্তন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীদের কালো কোট এবং গাউন পরিধান করার আবশ্যকতা নেই বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এক বিজ্ঞপ্তিতেই পাল্টে গেছে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের চিত্র। সেই চিরচেনা কালো কোট-গাউনের বদৌলতে আইনজীবীদের গায়ে দেখা যায় সাদা শার্টের ছড়াছড়ি।
রোববার ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সরেজমিনে দেখা যায়, আদালতের বেশিরভাগ আইনজীবী শুধু সাদা শার্ট ও টাই পরে শুনানি করছেন। তীব্র গরমে হাইকোর্ট প্রশাসনের এ বিজ্ঞপ্তি আইনজীবীদের মাঝে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তীব্র গরমে কালো কোট ও গাউন পরে আমাদের শুনানি করতে অনেক কষ্ট হয়। দেশের ইতিহাসে এই রেকর্ড গরমের মধ্যে এভাবে শুনানি করতে দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। দেরিতে হলেও এই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই এবং প্রতিবছর এর ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মুন্নি আক্তার বলেন, কোট-গাউন পরার আবশ্যকতা উঠিয়ে দেওয়া আইনাঙ্গনে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
উল্লেখ্য, শনিবার (১৩ মে) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অধস্তন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীদের কালো কোট এবং গাউন পরিধান করার আবশ্যকতা নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের সব অধস্তন দেওয়ান ও ফৌজদারি আদালত, ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং আইনজীবী ক্ষেত্রমতো সাদা ফুল শার্ট বা সাদা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ ও সাদা নেক ব্যাড বা কালো টাই পরিধান করতে হবে। এক্ষেত্রে কালো কোট এবং গাউন পরিধান করার আবশ্যকতা নেই। এ নির্দেশনা ১৪ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশ প্রদান না করা পর্যন্ত বলবত থাকবে।
এর আগে গত ১১ মে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি গরমে আইনজীবীদের ড্রেসকোড পরিবর্তনে প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ জানান।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির, ব্যারিস্টার মো. কাউছার ও বায়েজীদ হোসাইন এ আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ মূলত একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। বছরের প্রায় ৮ মাস উচ্চ তাপমাত্রা থাকে। আইনজীবীদের আদালতে পরিধানের জন্য সিভিল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস, ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রুলস ১৯৭৩ এবং আপিল বিভাগের রুলস ১৯৮৮-তে শীত ও গ্রীষ্মকালে একই ধরনের পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত আইনজীবীদের পোশাকটি মূলত ব্রিটিশ ভাবধারা ও আবহাওয়া বিবেচনায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কালের বিবর্তে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হিসেবে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আইনজীবীদের কল্যাণ ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুবিবেচনায় পোশাকের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে দেশের হাজার হাজার আইনজীবী প্রতি বছরের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উচ্চমাত্রার গরম আবহাওয়ার কারণে নিদারুণ, অসহনীয়, অবর্ণনীয়, শারীরিক ও মানসিক কষ্ট সহ্য করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে লাখো লাখো বিচারপ্রার্থীকে আইনি সেবা দিয়ে আসছেন।
অতিরিক্ত গরমে নিয়ম অনুযায়ী, কালো কোট, গাউন, কলার, ব্যান্ড/টাই পরিধানের কারণে প্রতিবছর বহু সংখ্যক আইনজীবী হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন এবং অনেক আইনজীবী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা জেলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় শফিউল আলম ওরফে আলাউদ্দিন নামে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়। তার সহকর্মীদের দাবি, অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।