নিজস্ব প্রতিবেদক : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর সমুদ্রে পাড়ি জমিয়ে ফি বছর দেশের অর্থনীতিকে কোটি কোটি যোগান দিলেও সরকারি খাস জমিতে অধিকার নেই সমুদ্রগামী জেলেদের। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে জেলের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ জেলে পরিবার খাস জমি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন না। জেলেদের দাবি, সুনীল অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে ‘সমুদ্রগামী জেলে’র জন্য খাস জমি বরাদ্দ নীতিমালা পরিবর্তন করতে হবে।
মৎস্য অফিসের তথ্য অনুসারে, দেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা পূরণে ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ যোগার দিচ্ছে সমুদ্রগামী জেলেরা। এ কাজে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫ লাখ জেলে জীবিকা নির্বাহ করেন। খুলনা জেলার মোট জেলের সংখ্যা ৪৩ হাজার ২১৯ জন। এরমধ্যে উপকূলীয় এলাকার সমুদ্রেগামী জেলের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার। কিন্তু এই জনগোষ্ঠী অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলে সম অধিকার থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলেরা নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-ভাঙনে গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়েন। কিন্তু কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা- ১৯৯৭ ও অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা- ১৯৯৫ অনুযায়ী জেলের খাসজমি প্রদান বিষয়টি না থাকায় তারা (জেলে) স্থায়ী বরাদ্দ পাচ্ছেনা।
খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ তীরের গ্রাম হেতামপুর। এখানকার বাসিন্দা রাম বিশ্বাস (৪৫) বলেন, অনেক জেলেদের জমিজমা কিছু নাই। কপোতাক্ষ খাইছে। তারা কোনভাবে সাগরে মাছ ধরে জীবন কাটাচ্ছে। অনেকে খাসজমি, ঘর পায়। কিন্তু জেলের কিছু না থাকলেও খাস জমি বরাদ্দ পায়না। এ নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। বোয়ালিয়া গ্রামের রুহিদাস বিশ্বাস বলেন, সাগরে পাড়ি দেই। বাড়িতে বউ, ছেলে-মেয়ে থাকে। কিন্তু সরকারি খাসজমি স্থায়ী বরাদ্দ না থাকায় উচ্ছেদ আতংকে দিন কাটাতে হয়।
রামনাথপুর এলাকার গৃহবধূ শেফালী বিশ্বাস বলেন, বাড়ির দুই পাশে ইটভাটা। ভাটার ছাই খাবারে পড়ে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। ইটের আগে আমরাই পুড়ে মরছি। কিন্তু কিছু বলতি গেলে হুমকি আসে। নদীর চরে বাস করছি। সরকার আমাদের স্থায়ী বরাদ্দ দিলে একটু বাঁচতে পারতাম। ভূমিহীনরা খাস জমি পেলেও জেলের কপালে কিছু নাই। জমি-জমা না থাকলেও খাস জমিতেও আবেদন করতে পারিনা। সরকার একটু ব্যবস্থা করলে বাঁচতে পারতাম।’
উপকূলীয় পানি সম্মেলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরফীন বলেন, ‘সমুদ্রগামী জেলেরা এদেশের সম্পদ। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তাদের সহায়তা কম। তাদের খাস জমিতে অধিকার নেই। আমরা এ বিষয়ে জেলেদের সাথে কাজ করছি। তারা (জেলে) খাস জমিতে নিজেদের অধিকার চান। আমরা বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের কাছে তুলে ধরতে চাই।’
খুলনা ৬ আসনের সংসদ মো. আখতারুজ্জামান বাবু খাস জমিতে জেলের অধিকার দাবিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সংহতি জানান। তিনি বলেন, সমুদ্রগামী জেলেরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাদের দাবি যৌক্তিক। বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হবে।