
ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতালে ভর্তির প্রহসন
জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনার সরকারি হাসপাতালগুলোতে খুব পরিচিত একটি নাম হেমায়েত হোসেন ফারুক। কখনো জোরপূর্বক টেন্ডার লুফে নেওয়া, কখনোবা ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে টেন্ডার হাতিয়ে নেওয়া। আবার কখনো আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বেতন বছরের পর বছর আটকে রেখে খুলনায় আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করছেন ফারুক। খুলনা সদর হাসপাতাল এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে লোক নিয়োগের নাম করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ও অহরহ।
তবে সম্প্রতি মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিস খ্যাত প্রতিষ্ঠানের সত্ত্ব¡াধিকারী ফারুক হোসেন হেমায়েতের বিরুদ্ধে শত শত আউটসোর্সিং কর্মচারীরা শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করে। আর এই মামলাকে কেন্দ্র করে শ্রম অফিস থেকে তার নিকট নোটিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়া আউটসোর্সিং কর্মচারী ও সাংবাদিকদের চোখ ফাঁকি দিতে এই ফারুক নতুন প্রহসন সাজিয়েছেন। শ্রম আইনে দায়ের করা মামলা থেকে মুক্তি লাভের আশায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীরা এমনটি জানিয়েছেন দৈনিক অনির্বাণের প্রতিবেদককে।
এ বিষয়ে খুমেক হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারী নন্দকুমার দাস জানান, ঠিকাদার কোম্পানির দালালের মাধ্যমে আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে চাকুরী নেই। তবে ৮ মাস বেতন বকেয়া রেখেই আমাকে বাদ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বারংবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে, তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে জানান আরেক ভুক্তভোগী।
এ বিষয়ে মোঃ মনির হোসেন জানান, লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে এই চাকরি নিয়েছি। পরিবার নিয়ে কোন রকমে দিন কাটাতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা। তারপরে ফারুক আমাদের সাত-আট মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে তালবাহানা শুরু করেছে। আর এই ঘটনা হাসপাতালের পরিচালক কে জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষের দিকে ৩০২ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়, যার মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। এর অধিকাংশ কর্মচারীদের ছয় মাস থেকে এক বছরের বেতন বকেয়া রেখে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়।
পূর্বের কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ না করে পুনরায় আরো ১০০ জন কর্মচারীর মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়োগ- বাণিজ্য শুরু করে মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিস ও কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী ফারুক হোসেন হেমায়েত।
তবে শ্রম আইনে দায়ের হওয়া মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে হেমায়েত হোসেন ফারুক অসুস্থতার দোহাই দেখিয়ে কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, শ্রম অফিস আমাকে কোন নোটিশ প্রদান করেনি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, দয়া করে আমাকে বিরক্ত করবেন না। অথচ সরজমিনে তার কেবিনে সন্তানকে নিয়ে বিনোদনে মগ্ন থাকতে দেখা যায়।
শ্রম আদালতে দায়ের করা মামলার বিষয়ে শ্রম কর্মকর্তা নুরুজ্জামান জানান, ১১ এপ্রিল মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিস ও কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসের সত্ত্ব¡াধিকারী ফারুক হোসেন হেমায়েতের শুনানি ছিলো। তাকে আমরা জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু সেদিন সে অসুস্থ হয়ে খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো। তাই আমরা শুনানি আগামী মাসে করবো।
তিনি আরো বলেন, সাধারণত এ ধরনের মামলায় আমাদের নিষ্পত্তি করতে এতদিন সময় লাগে না। কিন্তু এ মামলায় সময় মত সকলকে না পাওয়ায় দীর্ঘদিন লেগে যাচ্ছে।
তবে এই সময়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার ব্যাপারটা নাটকীয়তার নতুন অধ্যায় বলে মনে করছেন হাসপাতালে কর্মরত পূর্বের ও বর্তমানের আউটসোর্সিং কর্মচারীরা।
সাবিনা ইয়াসমিন জানান, আমার ৬ মাসের বেতন পাওনা আছে। এদিকে আমরা না খেয়ে দিনযাপন করছি। অন্যদিকে আমাদের টাকা না দিয়ে আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন ফারুক। বকেয়া বেতন দেওয়ার ভয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রবিউল হাসান জানান, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিস ও কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসকে যথা সময়ে সম্পূর্ণ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এমতাঅবস্থায় বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যাপারে সম্পূর্ণ দায়ভার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। তিনি আরো জানান, কোন কর্মচারী কর্মরত থাকাকালীন সময়ে অভিযোগ করেন নি।” তবে চাকুরীর মেয়াদ শেষ হবার পরে কয়েকজন কর্মচারী তার নিকট অভিযোগ করেন বলে জানান তিনি।