
মশা নিধন ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়: বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য)
শেখ আব্দুল হামিদ : খুলনা বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখন প্রতিদিনই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা আনাচে-কানাচে জমে থাকা পানিতে এখন এডিস মশার লার্ভা। ফলে প্রতিদিনই হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর। ইতিমধ্যে ডেঙ্গু ১০ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর আগ্রাসি রূপ থাকবে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন। সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ডেঙ্গু রোগীদের সামাল দিতে গিয়ে অন্য রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগী এ ভাবে বাড়তে থাকলে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা আগামীেেত মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হবে। ডেঙ্গু চিহ্নিত শত্রু, তারপরও তা দমন করা যাচ্ছে না। এডিস মশা নির্মূল করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘদিনের পুরোনো রোগ হলেও রোগটি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। উল্টো এটি আরও শক্তিশালী হয়ে শহুরে ডেঙ্গু এখন গ্রাম-গঞ্জেও সমান দাপট বিস্তার করছে। প্রতিদিন বিভাগে প্রায় দু’শ মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে খুলনা বিভাগে ৮৫৫ জনের দেহে ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত হয়েছে। খুলনা-যশোর এবং মাগুরা জেলায় পাল্লা দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গত সাত দিনে খুলনা জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ১৪২ জন, যশোর জেলায় ১৫৬ জন ও মাগুরা জেলায় ১৬৩ জন। অথচ সপ্তাহের প্রথম তিন দিনে যশোর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭২ জন, খুলনায় ৭১ জন এবং মাগুরা জেলায় ৬৬ জন। প্রতিদিনই ডেঙ্গু শনাক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত সাত মাসে বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৫৯ জন। ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ২ হাজার ২৭৫ জন আর রেফার্ড করা হয়েছে ৪০ জনকে। খুলনায় মোট শনাক্ত ৫৫৫ জন, বাগেরহাট ২০৪ জন, সাতক্ষীরায় ১৯২ জন, যশোর ৪৯৫, ঝিনাইদহ ১৮০, মাগুরা ৪৬০, নড়াইল ৩০৭, কুষ্টিয়ায় ২৪১, চুয়াডাঙ্গা ৩০ ও মেহেরপুর ৯৫ জন।
খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মনজুরুল মুর্শিদ বলেন, খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু এখন শুধুমাত্র শহরে সীমাবদ্ধ নেই। গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। বৃষ্টি যেমন বেড়েছে তেমনি মশাও বাড়ছে। এডিস মশার লার্ভা এখন বিভিন্ন গ্রাামেও মিলছে। লার্ভা নিধনের জন্য শুধুমাত্র সিটিকর্পোরেশনের উপর নির্ভর করলেই চলবে না। মানুষকে আরও বেশী সচেতন হতে হবে। প্রতিদিন যে ভাবে বাড়ছে আর আবহাওয়ার যে অবস্থা তাতে মনে হয় আগামী নভেম্বর মাসের আগে ডেঙ্গুর প্রভাব কমবে বলে মনে হয় না। এ ভাবে প্রতিদিন বাড়লে ডেঙ্গু খুলনা বিভাগেও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তখল ডেঙ্গু রোগী সামাল দিতে গিয়ে অন্য চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হবে। তিনি বলেন, আমার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৫০০ শয্যার। প্রতিদিন সেখানে ১৪০০ থেকে ১৫০০ রোগী ভর্তি থাকে। কখনও তার বেশীও রাখতে হয়। সেখানে যদি ৫০০-৬০০ রোগী আসে তখন সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তবে আশাকরি সমস্যা হবে না। উপজেলা পর্যায়েও হাসপাতাল রয়েছে। তাবে আমরা প্রস্তুত আছি।