জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল দেশ-বিদেশে জায়গা করে নিচ্ছে। অনেক সময় জাতীয় অনেক ইস্যুতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডাকা হচ্ছে। এ বছর জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৯ জন স্থান পেয়েছে। বিশ্ববিজ্ঞানীদের তালিকায়ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে। খুলনা বিশ^বিদ্যালয় কোয়ান্টিটিতে নয়, কোয়ালিটিতে বিশ^াস করে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ^বিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে অংশীজনের অংশগ্রহণে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এ কথা বলেন।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এতদাঞ্চলের আপামর মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পীঠস্থান হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সকল মহলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
মতবিনিময় সভায় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি, গবেষণা ক্ষেত্রে অগ্রগতি, ডিজিটালাইজেশন, ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান পাওয়ারপয়েন্টে উপস্থাপন করেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকতর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে নতুন হল তৈরি, প্রশাসনিক, একাডেমিকসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের গতি ত্বরান্বিত করতে সফট ইনফ্রাস্ট্রাকচারের আওতায় হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যাকবোন, সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম স্থাপন এবং স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করার উদ্যোগ, নিয়মিত জাতীয়, আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন, জীববিজ্ঞান স্কুলের জন্য গ্রিনহাউস স্থাপন, কেন্দ্রীয় গবেষণাগারকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত করার লক্ষ্যে আইএসও সার্টিফাইড করা উদ্যোগ, খেলার মাঠের উন্নয়ন, আবাসিক হলসমূহে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব তৈরি, সার্বিক কাজে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুবিধার্থে ইন্টারন্যাশনাল হল/ডরমেটরি তৈরি, সুন্দরবনের উপর বিশ্বমানের রিসার্চ করার জন্য যুগোপযোগী সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, জীববিজ্ঞানভিত্তিক ৭টি বিভাগসমূহের জন্য মাঠ গবেষণারে প্রয়োজনীয় জমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী ১০০ বছরের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ, আরো ৩০০ কিলোওয়াট সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুতের মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ, রিসার্চ ইনফরমেশন সেন্টার ডেস্ক তৈরি, সেন্ট্রাল কম্পিউটিং ল্যাব নির্মাণ, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন-প্রবীণ গবেষকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে গবেষণা অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৪-২০০৫ সালে যেখানে গবেষণায় বরাদ্দ ছিল ১৫ হাজার টাকা, সেখানে বর্তমানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। গত বছরে ১২৬৬টি গবেষণা নিবন্ধ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে আমি মনে করি।
উপাচার্য বলেন, র্যাংগিং ও মাদকের বিরুদ্ধে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেছে। এজন্য শিক্ষাবর্ষের শুরুতে নবাগত শিক্ষার্থীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে র্যাংগিং ও মাদককে না বলে শপথ করানো হয়। র্যাংগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেক সময় অভিযোগের অভাবে র্যাংগিংয়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য র্যাংগিং হলেই অভিযোগ জানাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল দেশ ও বিদেশে জায়গা করে নিচ্ছে। অনেক সময় জাতীয় অনেক ইস্যুতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকা হয়। এ বছর জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশীপে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৯ জন স্থান পেয়েছে। বিশ্ববিজ্ঞানীদের তালিকায়ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. মতিউল ইসলাম।