জন্মভূমি রিপোর্ট
খুলনায় বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব শাহাদাত হোসেন মোল্লা হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় তার ছেলে আল মামুন বাদী হয়ে হরিণটালা থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনসহ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা (নাম্বার-০৭) তারিখ (১৭ জুন ২০১৭ ইং)।
যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত ১৮ জুলাই খুলনা মুখ্য মহানগর আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই মোল্লা লুৎফর রহমান ৩১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন। তবে বিজ্ঞ আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটে এই হত্যাকান্ঙের এজাহারকৃত প্রকৃত আসামিদের নাম বাদ দেওয়ায় সংক্ষুব্ধ মামলার বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব শাহাদাত হোসেন মোল্লার বড় ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা ও বাংলাদেশ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড’র কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আল মামুন সুমন মোল্লা ও তার আইনজীবী। তিনি বিজ্ঞ আদালতে দায়েরকৃত চার্জশিটে নারাজি দাখিল করবেন।
প্রকৃত হত্যাকারীদের নাম বাদ দিয়ে একাধিক নির্দোষ ব্যক্তিকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোল্লা লুৎফর রহমান। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় সিআইডি যাকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে কিন্তু উদ্ধার করা হয়নি ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র।
নিহতের বড় ছেলে এই মামলার বাদী আল মামুন (৩৩) জানান, নগরীর হরিণচালা থানায় গত ১৭ জুন, ২০১৭ ইং তারিখে মামলা দায়েরের পর থানার তদন্ত শেষে মামলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ন্যস্ত হবার পর ডিবি পুলিশের তৎপরতায় আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু যারা আমার পিতাকে হত্যা করিয়েছে সেই সব প্রভাবশালী ভূমিদস্যু গং এর প্রধানের ইশারায় মামলাটি এক রহস্যজনক কারণে ডিবি থেকে সি আই ডি তে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, তার পিতার হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহজাহান, ইন্সপেক্টর শাহজাহান এই হত্যা মামলাটি দীর্ঘদিন তদন্ত করে চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়ার আগ মুহূর্তে অদৃশ্য ইশারায় তাকে সিআইডি থেকে বদলি করা হয়।
মামলার বাদী তার পিতার হত্যা মামলাটি তদন্ত করতে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), সিআইডি এর প্রধান বরাবর লিখিত আকারে আবেদন করে। তবে এই মামলার আসামিরা তদবির করে, এই হত্যা মামলার একজন আসামি গোলাম মোস্তফার মেয়ের শশুর বাড়ির এলাকার একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) কে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির এসআই মোল্লা লুৎফর রহমান এজাহার ভুক্ত আসামিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে এই হত্যা মামলার আসামি প্রকৃত আসামিদের চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এই হত্যা মামলার বাদী অভিযোগ করেন,মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোল্লাা লুৎফর রহমান তাকে তার মোবাইলে ফোন করে প্রকৃত আসামিদের বাদ দেওয়ার জন্য অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছিল, সেই কথোপকথনের কল রেকর্ড বাদীর কাছে সংরক্ষিত আছে।
এই হত্যা মামলার বাদী নিহতের বড় ছেলে আল মামুন সুমন মোল্লার দাবী, তার পিতা হত্যা মামলাটিতে একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলা কে হালকা করার অপচেষ্টা করেছেন। বাদীর দায়েরকৃত আসামীদের মধ্যে ৪ জনকে অব্যাহতি ও ৩ জনের নাম শেষের দিকে দিয়েছে। আমার পিতা দেশমাতৃকার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা হত্যাকান্ডর সঠিক ও স্বচ্ছ চার্জশিট আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা জমা দেন নাই। এমনকি বাদীর জবানবন্দীও আদালতে জমা দেওয়া হয় নাই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে বাদী তার বক্তব্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারক মহলের কাছে তুলে ধরবেন।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সি আই ডি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা মোল্লা লুৎফর রহমানে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, তদন্তে যা পেয়েছি সেই অনুযায়ী বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীটা দিয়েছি।
উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন মোল্লা গত ১৪ জুন, ২০১৭ ইং তারিখ (বুধবার) ইফতারের পর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেনসহ ৭/৮ জন রায়েরমহল এলাকার হামিদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বসে কথা বলছিলেন। এসময় ৮/১০ জন সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি করে। ঘাড়ে, হাতে ও বুকে গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই শাহাদাত হোসেনের মৃত্যু হয়। এসময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন লিয়াকত খান ও তার ছেলে মোস্তফা, বুলবুল ও রুবেল। নিহত শাহাদাত হোসেন সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তুাবিত মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও ওয়ার্ড রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার শরীরে সর্বমোট ১১টি গুলি বিদ্ধ হয়।