অভিজিত পাল
খুলনা-যশোর অঞ্চলে অর্ধেকের বেশী রেলগেট অনুমোদনহীন ও অরক্ষিত। খুলনা ও যশোর অঞ্চলে অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন রেলগেট ১৭১টি। যার মধ্যে ৭৩টি অনুমোদিত আর অনুমোদনহীন ৮৮টি। আর ১০টি অনুমোদিত গেটে নেই গেটম্যান। খুলনা অঞ্চলে রয়েছে নয়টি অনুমোদিত রেলগেট, আর দু’টি অনুমোদিত রেলগেট। আর যশোরে রয়েছে ১৬০টি রেলগেট। যার মধ্যে অনুমোদন হীন ৮৬টি, অনুমোদিত ৬৪টি। আর ১০টি অনুমোদিত গেট থাকলেও নেই গেটম্যান।
তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সরেজমিনে খুলনা রেল স্টেশন থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত অনুমোদিত রেলগেট দেখা গেছে অসংখ্য। স্থানীয়দের যাতায়াত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে অনুমোদনহীন অরক্ষিত এই সকল গেট। আবার অনুমোদিত গেটে দেখা যায় না গেটম্যান, যদিও রয়েছে নির্দিষ্ট অফিস।
শনিবার বেলা ১২টায় নগরীর মুজগুন্নি দিঘীরপার এলাকায় অনুমোদিত গেটে গিয়ে দেখা যায় গেটম্যানের কক্ষ তালাবদ্ধ। কিছুক্ষণ পরে হাজির হলেন গেটম্যান। তাদের দাবি ট্রেন যখন স্টেশন থেকে ছাড়ে বা স্টেশনের দিকে যায়, তখন তাদের ফোন করে জানিয়ে দেয়। তখন তারা একটিভ হন। এর আগে আশপাশেই থাকেন। একই চিত্র দৌলতপুর বাজারের। সেখানেও নেই গেটম্যান।
অবশ্য গেটম্যানদের এই ডিউটির পক্ষেই বলছেন খুলনা-যশোর অঞ্চলের রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওলিউল হক। তিনি বলেন, স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার সময় ও ঢোকার সময় গেটম্যানদের ফোনে সতর্ক করা হয়। তাদের কাজে গাফিলতি করার সুযোগ নেই। সবসময় মানুষ কর্মস্থলে থাকতে পারে না। হয়তোবা আশপাশে ছিল।
আর মুজগুন্নি ও খালিশপুর এলাকার সংযোগ স্থলে দেখা যায় অনুমোদনহীন অরক্ষিত গেট। সেখানে একটি সমাজসেবামূলক সংগঠনের ব্যানার রয়েছে মানুষকে সতর্ক করার জন্য। পাশের মুদি দোকানদার সেলিম বলেন, কয়েকদিন আগে এখানে বিএল কলেজের একজন মেধাবী ছাত্র দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এখান থেকে আমাদের রাস্তা না থাকায় যানবহন নিয়ে পার হওয়া যায় না। অনেকপথ ঘুরে বাড়ি ঘরে যেতে হয় যানবহন নিয়ে। পায়ে হেটে এই ক্রসিং পার হয়ে খুলনা-যশোর রোডে যাওয়া সহজ হওয়ায় মানুষ এই ক্রসিং পার হয়। আর গেট না থাকায় প্রায়শই ঘটে দুর্ঘটনা। কয়েক মাস আগে এখান থেকে একগজ দূরে এক মহিলা মারা যান ট্রেনে কাটা পরে।
একই অবস্থা সরকারি বিএল কলেজের সামনে অনুমোদন হীন রেল গেটেও। ইব্রাহিম খলিল বলেন, বিএল কলেজে ৪০ হাজারের উপরে ছাত্র। প্রতিদিন কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা এখান দিয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নাই। মাঝে-মাঝেই ছোটখাট দুর্ঘটনা চলতেই থাকে।
খুলনা-যশোর অঞ্চলের রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওলিউল হক বলেন, অভিযোগকারী ব্যাক্তিরা অনুমোদনহীন রেলগেট ব্যবহার করছেন রেলকে না জানিয়ে। এগুলো ব্যবহারে ঝুঁকি বাড়ছে। মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অনুমোদনহীন রেলগেট ব্যবহারকারীরা আমাদের অবহিত করলে আমরা সেটা বিবেচনায় নিয়ে তাদের আওতায় গেট নির্মাণ হবে। তারাই নিয়োগ করবেন গেটম্যান। অথবা গুরুত্ব বিবেচনায় রেল নিজেও গেট তৈরি করে, সেখানে গেটম্যান নিয়োগ দিয়ে সেবা প্রদানও করতে পারে। শিঘ্রই এসকল স্থানে গেটম্যান নিয়োগের চাহিদা উর্ধ্বতন মহলে প্রেরণ করা হবে।
খুলনা-যশোর অঞ্চলে অর্ধেকের বেশী রেলগেট অনুমোদনহীন ও অরক্ষিত
Leave a comment