শেখ আব্দুল হামিদ : খুলনা জেলার সর্বত্র পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গত ১০ বছরে আড়াই হাজার সুপেয় পানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে প্রায় ৫শ’ থেকে ৭শ’ ফুট গভীরে প্রবেশ করে মানুষ স্বাধু পানি উত্তোলনের চেষ্টা করছে। বৃষ্টির পরিমাণ কম হওয়ায় ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বহু নলক‚পে প্রয়োজন মত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। নলক‚পের হাতল চেপে নীচে নামাতেও কষ্ট হচ্ছে। বহু বোরো ধান এবং তরমুজ ক্ষেতে পানি স্বেচ প্রায় বন্ধ রয়েছে। জেলায় পানির মোট উৎসের পরিমাণ ৩১ হাজার ৭৯২টি। ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে আছে ৩ হাজার ৪০৬টি।
খুলনা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেয়া সূত্রমতে, জেলায় পানির মোট উৎস চালু রয়েছে ২৮ হাজার ৩৮৬টি। অগভীর পানির উৎস্য ১২ হাজার ৬৩৯টির মধ্যে অকেজো হয়ে রয়েছে ১ হাজার ৪৮৮ এবং চালু আছে ১১ হাজার ১৫১। পুকুর খননসহ পানি সদন করে খাওয়ার সিস্টেম রয়েছে মাত্র ৯টি। তার মধ্যে অকেজো রয়েছে ২টি। অল্প গভীর স্তর (৩০ ফুট থেকে ৪০ ফুটের মধ্যে) থেকে পানি উত্তোলন করার জন্য ২৫৫টি নলক‚প রয়েছে। যার ১৯৮টি চালু আছে। অকেজো রয়েছে ৫৭টি। একই পদ্ধতিতে পানি উত্তোলনের জন্য (৫০ থেকে ৮০ ফুটের মধ্যে) ১ হাজার ৭৬৩টির মধ্যে চালু আছে ১ হাজার ৬২৫টি।
বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ৫ হাজার ২৮২টি ট্যাংকি চালু রয়েছে। প্রতিটি ট্যাংকিতে ৩ হাজার লিটার করে পানি ধরে রাখা সম্ভব। প্রতিটি পরিবারের জন্য ১টি করে ট্যাংকি সরকারিভাবে দেয়া হয়েছে। খাবার পানি হিসেবে বছরের প্রায় ৭-৮ মাস এ পানিতেই চলে। যে সব এলাকায় অগভীর বা গভীর নলক‚পে পানি ওঠেনা সেখানে এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। পাইকগাছা উপজেলায় এ পদ্ধতি চালু রয়েছে ১ হাজার ২৬৯টি, কয়রায় ৬৩৪, দাকোপে ১ হাজর ২২৮, ডুমুরিয়ায় ৮০, বটিয়াঘাটায় ১০৩ ও তেরখাদায় ৪৫টি। ট্যাংকি ব্যবহারকারীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বৃষ্টির সময় টিনের চাল থেকে পড়া পানি বিশেষ পদ্ধতিতে ট্যাংকিতে ধরে রাখা হয়। ট্যাংকি ভরে গেলে ভালো করে মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। বৃষ্টির সময় শেষ হলে তারা এ পানি পান করা শুরু করেন। এ ভাবেই তাদের প্রায় ৭-৮ মাস চলে। পুকুর বা অন্য কোন উৎস্য থেকে পানি ফিল্টার করে পানের উদ্দেশ্যে পিএসএফ পদ্ধতি চালু রয়েছে। ১ হাজার ৩১৬টি পদ্ধতির ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে আছে ৩৭৭টি।
সূত্রমতে, জেলায় মোট গভীর নলক‚পের সংখ্যা মাত্র ১৪ হাজার ১৪৭টি। এর মধ্যে চালু রয়েছে ১৩ হাজার ৯০৮টি। বাকী ২৩৯টি অকেজো। রূপসা উপজেলায় গভীর নলক‚প রয়েছে ১ হাজার ৬৬৭টি। যার ৪০টি অকেজো, দিঘলিয়া ১ হাজার ৮৫৩টি। অকেজো ১৭টি। তেরখাদায় ১ হাজার ১৭৩ অকেজো ১৪, বটিয়ঘাটায় ১ হাজার ৭৯৮ অকেজো ৩৭, ফুলতলা ১ হাজারটির অকেজো ১৮, ডুমুরিয়া ৩ হাজার ১৭২ অকেজো ৬০, দাকোপ ২টি অকেজো ২৩, পাইকগাছা ২ অকেজো ১২, কয়রা ২ হাজার ৫৪৪ অকেজো ১৮। খুলনা সদরে ২৯৮টি নলক‚প চালু রয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী বলেন, তার এলাকায় গঙ্গারামপুর, ভান্ডারকোট ও সুরখালী ইউনিয়নের কিছু অংশে নলক‚পে পানি ওঠেনা। সেখানে আরও গভিরের স্তরে নলক‚প বসালে হয়ত পানি উঠবে। তিনি বলেন জলমা ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর মৌজায় পূর্বের গভীরের চেয়ে আরও গভিরে যেয়ে অনেকে পানির স্তর পেয়েছেন। সরকারিভাবে টেস্ট টিউবঅয়েল পাওয়া গেলে চেষ্টা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এখন বৃষ্টির পানি ধরে রেখে ব্যবহার করার অভ্যাস করতে হবে।
খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আকমল হোসেন দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, ভুগর্ভস্থ্য পানির স্তর গত দশ বছর আগে যেখানে ছিল এখন আর সেখানে নেই। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভাবে নীচে নেমে গেছে। যে কারণে বহু নলক‚পে আর আগের মত পানি উঠছে না। তবে কোন কোন স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগে আরও গভীরে যেয়ে পানির লেয়ার পেয়েছে। সেখান থেকে তারা সুপেয় পানি উত্তোলন করছে। পরীক্ষা মূলক ভাবে ব্যবহারের জন্য কিছু টিউবঅয়েল বিভিন্ন স্থানে বসান হয়েছে। ১ হাজার থেকে ১২০০ ফিট নিচে স্থাপন করা এসব টেষ্ট নিউবঅয়েলে ভালই পানি উঠছে। তিনি বলেন নগরীতে এখন কোন কোন জায়গায় পানির স্তর ২৫ থেকে ৩০ ফিট নিচে নেমে গেছে। বৃষ্টি না হলে আগামীতে আরও নিচে নামার সম্ভাবনা রয়েছে।