জন্মভূমি রিপোর্ট
তীব্র তাপদাহে জনজীবন হাফিয়ে উঠেছে। মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। অনাবৃষ্টি ও খরায় গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজিসহ কয়েকটি ফসল লক্ষমাত্রার তুলনায় কম জমিতে চাষ হয়েছে।
মৃদু তাপ প্রবাহের মধ্য দিয়ে খুলনাঞ্চলে বৈশাখের শুরু হয়েছিল। গত শনিবারসহ আগের দু’দিন ছিল মাঝারি তাপ প্রবাহ। শনিবার খুলনায় ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। গতকাল রোববার বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে যশোরে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং খুলনায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। যা এ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সকাল ১০ টা-১১ টার পর থেকে সূর্যের তাপে ঝাঁঝ বাড়তে শুরু করে। দুপুরের রোদে যেন আগুন ঝরছিল। মাঝে-মাঝে বয়ে যাওয়া বাতাস রোদের ঝাঁঝ সঙ্গী করে ভীষণ উত্তাপ ছড়াচ্ছিল। প্রচÐ খরায় কৃষক, শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষের কাজ-কর্ম থেমে থাকে নি। যদিও অসহ্য তাপ এবং গরম তাদের ক্লান্ত করে তুলেছিল। বিকেল পাঁচ টার পর থেকে রোদের তেজ আস্তে-আস্তে কমতে শুরু করে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ বলেন, স্বাভাবিক নিয়মেই প্রকৃতিতে তাপমাত্রা বেড়েছে। আরও দু’-একদিন তীব্র তাপ প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এরপর আকাশে মেঘ জমতে পারে। কালবৈশাখি ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা ও গরম কমবে।
এদিকে, গত কয়েকমাস ধরে উল্লেখযোগ্য কোনো বৃষ্টিপাত নেই। প্রচÐ খরায় পুড়ছে মাঠ-ঘাট। এ পরিস্থিতিতে ডাটা, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির আবাদ কমে গেছে। মুগডাল, তিল ও ভুট্টার চাষও কম হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় তরমুজের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেনি। মুগডাল ও তীলের ফলন কম হওয়ায় শঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টি না হলে পাট চাষীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। খুলনা জেলা কৃষি অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানান, ৫ হাজার ৩শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫ হাজার ২শ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ৬শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে মুগ ডাল চাষের টার্গেট থাকলেও হয়েছে মাত্র ৩শ’ ৮ হেক্টর জমিতে। তিল চাষের লক্ষমাত্রা ছিল ১১শ’ হেক্টর জমিতে, কিন্তু হয়েছে ৬শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে। ১শ’ ৩৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর বিপরীতে মাত্র ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজিসহ কয়েকটি ফসলের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় নি। তরমুজ স্বাভাবিকের তুলনায় আকারে ছোট হয়েছে। তবে, বাজার দর ভাল থাকায় চাষীরা ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন না।
খুলনা আবহাওয়া অফিস কর্তৃপক্ষ বলছেন, গত নভেম্বর মাস থেকে গতকাল ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো বৃষ্টিপাত হয় নি। এই সময়ের মধ্যে মাত্র ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অথচ, গত ২০২০ সালের এপ্রিল মাসেই ১শ’৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল। এবার এপ্রিল মাস বিদায়ের পথে, চলতি মাসে একদিন মাত্র দু’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।