তদন্তে জেলা প্রশাসনের ৯ সদস্যের কমিটি
জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনার রূপসায় বেসরকারি সালাম জুট মিলে অগ্নিকাণ্ডের উৎস নিয়ে তিন ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তাতে অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। রহস্যজনক এ অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটনে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্র সম্পর্কে তিন ধরনের বক্তব্য পেয়েছে পুলিশ। জানতে চাইলে রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবীর বলেন, কর্তৃপক্ষ বলছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। মিলের স্টাফরা বলছে, তিন নম্বর গুদাম থেকে আগুন লেগেছে। আবার অন্য শ্রমিক-কর্মচারীরা বলছে, ওয়েভ মেশিন থেকে আগুনের সূত্রপাত। আসলে কীভাবে আগুন লেগেছে, তা তদন্ত না করে বলা যাচ্ছে না। তিনি জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি হবে না। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিকে পুলিশ সহযোগিতা করবে।
খুলনা ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা মো. আব্দুল কাদের বলেন, গতকাল বুধবার বিকেলে রূপসায় বেসরকারি সালাম জুট মিলের পাটকলে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি এবং নৌবাহিনীর দুটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। ভোরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।
জানতে চাইলে জুট মিলের মালিক এম এম এ সালাম বলেন, আগুনে প্রায় ৭৫০ টন রপ্তানি উপযোগী পাটজাত পণ্য, প্রায় ৩৫ হাজার মণ কাঁচা পাট এবং মিলের যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। তবে কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্সে তাঁর ৫০ কোটি টাকার ইনস্যুরেন্স করা ছিল বলে জানান তিনি।
প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বশির আহম্মেদ বলেন, তিন নম্বর গুদামের একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূচনা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে দুই এবং এক নম্বর গুদামেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (খুলনা) ফারুক হোসেন শিকদার বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া মিলটিতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল। যা মিল পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে।
তদন্ত কমিটি সম্পর্কে ফারুক হোসেন বলেন, ‘সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে আমরা দ্রুত রিপোর্ট ঢাকায় পাঠাব। সেখান থেকেই তদন্ত কমিটি দেওয়া হবে। নিয়ন্ত্রণে এলেও বেলা ২টা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নেভেনি। চাপা ছাইয়ের মধ্যে আগুনের ফুলকি দেখা যাচ্ছে। তবে ঝুঁকি নেই। আমরা ডাম্পিংয়ের কাজ করছি।’
স্থানীয় শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, শুকনো পাট হওয়ায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মিলটিতে সুতা ও রপ্তানিযোগ্য পাটজাত পণ্য মজুত ছিল। ২০১২ সালের দিকে সালাম জুট মিলটি চালু হয়। মূলত এখানে পাটের সুতা উৎপাদন করা হতো।
শ্রমিকরা জানায়, মিলটিতে প্রায় ৪০০ শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। ঈদের আগে আগুন লাগায় তাদের বেতন-বোনাস নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কোহিনুর জাহান বলেন, ‘আমরা সার্বিক দিক নজরদারিতে রেখেছি। প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আপডেট জানানো হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তারা রিপোর্ট দেওয়ার পর সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।