গত শনিবার দুপুরে ডুমুরিয়া উপজেলার শলুয়া এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ডের মূল ফটক পেরিয়ে কিছুদূর গেলেই মেডিকেল বর্জ্যরে স্তুপ চোখে পড়েছে। সেখানে এ্যামপুল, ¯øাইড, বøাড ব্যাগ, স্যালাইনের ব্যাগ-পাইপ, নিডেল, সুচ ও সিরিঞ্জসহ নানা চিকিৎসা বর্জ্য পড়ে রয়েছে। এর পাশেই মৎস্য ঘের, জলাভ‚মি। ৫শ’ গজের মধ্যেই জনবসতি। বৃষ্টির পানির সাথে মিশে ওই সব মেডিকেল বর্জ্যরে জীবাণু পাশর্^বর্তী জলাশয়ে যাচ্ছে। বাতাসের মাধ্যমেও রোগ-জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এ শঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কনজারভেন্সি শাখা সূত্রে জানা গেছে, কেসিসি কর্র্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে প্রদীপন এবং সদিচ্ছা মানব কল্যান সংস্থা নামে দুইটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মেডিকেল বর্জ্য অপসারণের কাজ করছে। প্রতিষ্ঠান দু’টির কর্মীরা হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে বটিয়াঘাটার রাজবাঁধ এলাকায় এবং ডুমুরিয়ার শলুয়া এলাকার ডাম্পিং পয়েন্টে অপসারণ করেন। এরপর তা আগুনে পুড়িয়ে ও মাটিতে পুতে বিনষ্ট করেন। বর্জ্য অপসারণ বাবদ এনজিও দু’টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো হতে চার্জ গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে, খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আসিফুর রহমান দৈনিক জন্মভ‚মিকে বলেছেন- মেডিকেল বর্জ্য অপসারণের কাজে যুক্ত ওই দুইটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অধিদপ্তর থেকে শুধুমাত্র অবস্থানগত ছাড়পত্র নিয়ে কার্যক্রম করছেন। তারা পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ করেন নি। যে কারণে তাদের কার্যক্রম বৈধ নয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সঠিক নিয়ম না মেনে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ করা হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেই যায়।
নগরীতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দু’ শতাধিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আরও ১৪ টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ৩০ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন প্রাপ্তির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা-২০০৮ অনুসারে মেডিকেল বর্জ্যকে সাধারণ, এনাটমিক্যাল, প্যাথলজিক্যাল, সংক্রামকসহ মোট ১১ টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে-হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে অস্ত্রপাচারের পর অপসারিত মানব দেহের অংশ কালো রঙের বক্সে, সিরিঞ্জ, স্যালাইনের প্যাকেটসহ বিভিন্ন জীবাণু বাহিত বর্জ্য হলুদ রঙের বক্সে, ভাঙ্গা কাঁচ, কাঁচের টুকরা ও ইনজেকশনের এ্যাম্পুল লাল রঙের বক্সে, প্যাকেজিং সামগ্রি, প্লেট, বোতল, পুণরায় ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রি, ওষুধের খোসাসহ বিভিন্ন বর্জ্য সাদা রঙের বক্সে এবং গজ ও ব্যান্ডেজ, রক্ত ও পুজ পরিষ্কার করার টিস্যু, নেপকিন, প্যাড, ডায়াপারসহ অন্যান্য বর্জ্য নীল রঙের বক্সে রাখতে হবে।
বিধিমালা অনুসারে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বর্জ্য রাখার জন্য পৃথক-পৃথক রঙের প্লাস্টিকের বক্স থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানেই সেগুলোতে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। ওগুলো শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য রাখা হয়েছে বলে বর্জ্য সংগ্রহকারী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানান, অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ ডাস্টবিনের মতো তৈরি করেছেন, সেখানে সকল প্রকার চিকিৎসা বর্জ্য একসাথে ফেলা হয়। বর্জ্য অপসারণের সময় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের হাতে কখনও সুচ ফোটে, কখনওবা তারা ধাঁরালো বেøডে জখম হন। যে কারণে মাঝে-মাঝে তাদেরকে টিটিনাস ইনজেকশন দিতে হয়।
সদিচ্ছা মানব কল্যান সংস্থা নামের প্রতিষ্ঠানের এক কর্তাব্যক্তি বলেন, তাদের কর্মীরা একটি সরকারি হাসপাতাল ও ১০-১৫ টি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন। এরপর বটিয়াঘাটার রাজবাঁধ এলাকায় তা অপসারণ করেন।
এদিকে, প্রদীপন নামের অপর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি বটিয়াঘাটা উপজেলার রাজবাঁধ এলাকায় ৪৫ শতক জমির উপর মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট তৈরি করেছেন। যেখানে স্থানীয় পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অপসারণ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
প্রদীপনের উপদেষ্টা বজলুর রহমান বলেন, তাদের নয় জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী দুইটি কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে শহরের ১শ’১৬ টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে বর্জ্য সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন গড়ে ৮শ’ থেকে এক হাজার কেজি বর্জ্য পাওয়া যায়। এরপর রাজবাঁধ এলাকার প্লান্টে নিয়ে বর্জ্য আলাদা করা হয়। সার্জিকাল বেøড, নরমাল বেøড, নিডল প্লান্টের পাকা ট্যাংকিতে ফেলা হয়। প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য ক্লোরিন ওয়াশ করে টুকরা-টুকরা করা হয়, যাতে কেউ পুণরায় ব্যবহার করতে না পারে। জীবাণু যুক্ত গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা ক্লোরিন ওয়াশ করে শলুয়া এলাকার সেনিটারি ল্যান্ড ফিল্ডে নিয়ে অপসারণ করা হয়, এরপর তা পুড়িয়ে ভষ্মিভ‚ত করা হয়।