অভিজিৎ পাল
বড় চামড়া ৫৫০ টাকা ও ছোট চামড়া ৩০০ টাকা আর ছাগলের চামড়া ফ্রি দরে ঈদের দিন রবিবার চামড়া সংগ্রহ করেছে খুলনার চামড়া পট্টির ব্যবসায়ীরা। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চামড়া পট্টির আট থেকে দশ জন ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করেছেন সাত থেকে আট হাজার।
অপরদিকে খুলনা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বলছে, খুলনায় পশু কোরবানী হয়েছে ৯ লাখ ২৬ হাজার ২০৯টি। যার মধ্যে গরু ২ লাখ ৩০ হাজার ২০৮টি, ষাঁড় ৪৫৫টি, গাভী ২৪ হাজার ৫৯১টি, ছাগল ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৪০২টি, ভেড়া ২২ হাজার ৫২৮টি, দুম্বা, উট সহ অন্যান্য প্রাণি ১৫টি।
তাহলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাকি কোরবানীর পশুর চামড়া কোথায় গেল? প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক। আর এই স্বাভাবিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি আমরা।
উত্তরটাও পাওয়া গেল খুলনা চামড়া পট্টির ব্যবসায়ীদের মুখেই। যেমন ইয়াসিন লেদার এর মালিক মোঃ আবু জাফর সোমবার বিকালে বলেন, এ বছর তিনি মাত্র ৩শত থেকে ৪শত চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এ বছর চামড়া পট্টির যে সকল ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করেছেন তারা সকলে মিলে কত চামড়া সংগ্রহ করতে পারেন? এমন প্রশ্নে তার উত্তর সাত থেকে আট হাজার চামড়া। এর বেশী হবে না।
এই সকল চামড়া পট্টিতে স্থান না পাওয়ায় শহরতলীর রূপসা আবাসিকের ভিতর তারা চামড়াগুলো লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে মজুত করেছেন। ওখান থেকেই পাঠানো হবে দেশের বিভিন্ন ট্যানারীতে।
শিল্পকলা একাডেমীর পাশে ডেকোরেটর দিয়ে তাবু টাঙ্গিয়ে চামড়া কিনছেন চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোঃ শহিদুল। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মামুন লেদার কমপ্লেক্স। তিনি বলেন, ঢাকায় বিভিন্ন ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পেয়ে পুঁজি হারিয়ে আমাদের অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এ বছর আমরা সাত আট জন চামড়া সংগ্রহ করেছি। সবমিলে ঐ সাত আট হাজারের বেশী হবে না।
তখন খুলনায় কোরবানীর পরিমাণ ও এ থেকে তৈরী হওয়া চামড়ার কথা বললে তিনি বলেন, এই চামড়া নষ্ট বা ভারতে পাচার হয়নি। এই চামড়া আমাদের ফুলতলা, নওয়াপাড়ায় যে সুপার ট্যানারীগুলো হয়েছে তারা সংগ্রহ করে নিয়েছেন।
তাদের কাছে চামড়া না এসে সরাসরি ট্যানারিতে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা ট্যানারী মালিকদের মত দাম দিতে পারিনি। তারা আমাদের থেকে বেশী দামে চামড়া সংগ্রহ করছে।
ট্যানারী মালিকরা অন্যদের কাছ থেকে বেশী দামে চামড়া কিনলেও তাদের কাছ থেকে দাম দিতে চায় না কেন চামড়ার। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা এখানে চামড়া দিই না। ঢাকার ট্যানারীতে চামড়া পাঠাই আমরা। সেখানে ট্যানারী মালিক ও তাদের লোকজন চামড়ার দাম দিতে চায় না। ১০ লাখ টাকার চামড়া বলে দুই লাখ। দিলে দেও না দিলে যাও। এই হচ্ছে অবস্থা।
অর্থাৎ নগরীর পরিচিত চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়ার মূল্য থামকো ধরায় মানুষ সরাসরি চামড়া বিক্রি করেছে শহরতলীর ট্যানারীগুলোতে। সেখানে চামড়াপট্টির থেকে বেশী দামে চামড়া বিক্রি করেছে তারা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া সংগ্রহ করেছে ট্যানারীগুলো নাকি আরো কমে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও।