যশোর প্রতিনিধি : প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের তথাকথিত গণমাধ্যমের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাংবাদিক নেতা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। গণমাধ্যমের রূপ ধরে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ঐক্যের যে ডাক দিয়েছেন, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বস্তরে সেই আওয়াজ পৌঁছে দিতে হবে। দেশ নিয়ে যে অপপ্রচার মিথ্যা প্রচারণা এবং অপদার্থ ছড়ানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করব, সঠিক জবাব দেবো। দেশের পক্ষে মানুষের পক্ষে গণতন্ত্রের পক্ষে এবং ভোটাধিকারের পক্ষে আমাদের সকলের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত “সাংবাদিকদের আর্থিক সুরক্ষা ও কল্যাণে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম কিস্তির চেক বিতরণ উপলক্ষ্যে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর।
প্রধান অতিথি বলেন, একজন সাংবাদিক সারা জীবন মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা লিখতে লিখতে নিজেরাই বৈষম্যের শিকার হন। মানুষের অধিকার নিয়ে লিখতে লিখতে শেষ বয়সে দেখা যায় তিনি নিজেই অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন তার যখন চাকরির সক্ষমতা থাকে না বিছানায় পড়ে যান তখন ওষুধপত্র খাওয়ার মত অর্থ থাকে না। সেই সময় যদি অল্প হলেও ওষুধপত্র খাওয়ার জন্য কিছু অর্থ তাদের হাতে তুলে দেয়া যায় তাহলে তাদের জন্য অনেক বড় কাজ হবে। এই বিষয়টি মাননীয় তথ্য উপদেষ্টাকে অবহিত করা হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হন এবং প্রবীণ ও বয়োবৃদ্ধ সাংবাদিকদের জন্য মাসিক ভাতা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, আগামী বছর থেকেই আমরা এই ভাতার ব্যবস্থাটা করতে পারব বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের অনুদানের পাশাপাশি যাতে তাদের সন্তানেরা ঠিকমত পড়াশোনা করতে পারে, সে লক্ষ্যে আমরা যাদের প্রয়োজন সেই সব সাংবাদিকদের দুইজন সন্তানকে মাসিক অথবা এককালীন বৃত্তির ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি, সামনের জানুয়ারি মাসেই যেন তারা সেই সুবিধা তারা পেতে পারে- সেই লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নিয়েছি।
প্রধান অতিথি বলেন, গত ১৫ বছরে সাংবাদিকদের নির্যাতন, নিপীড়ন, গণমাধ্যম দমন ও বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে সাংবাদিক সমাজকে একদম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে পরিণত করা হয়েছে। এরপর অনুদান দেয়ার যে কৌশল এটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের ভিন্ন একটি কৌশল বলে বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা কোনও দান-অনুদান প্রাপ্তির জন্য সাংবাদিকতা করেন না। গণমানুষের অধিকার রক্ষায় তারা কাজ করেন। তারা মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার রক্ষায় এবং জনগণের পক্ষে কাজ করে বলেই সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা।
ট্রাস্টের দায়িত্ব নিতে চাননি দাবি করে মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, আমি মূলত লেখালেখির মানুষ, সাংবাদিক মানুষ। সাংবাদিকতা নিয়ে গবেষণা করাই আমার কাজ। কিন্তু আমাকে বলা হলো- দেশের সবচেয়ে বেশি সাংবাদিকের সঙ্গে আপনার পরিচয়। আপনি দায়িত্ব নিলে অতীতে ট্রাস্টের কাজ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, সেটি বন্ধ হবে এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের কাছে ট্রাস্টের টাকা পৌঁছে যাবে। এ কারণে আমি দায়িত্ব নিয়েছি।
তিনি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর আমি দেখেছি অনেক অবাক হওয়ার মতো তথ্য। প্রতিষ্ঠার পর এই ট্রাস্ট থেকে ৫ আগস্ট বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ১৪ হাজার সাংবাদিক ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ সহযোগিতা পেয়েছেন। অথচ, এই যশোরে আজকে যারা উপস্থিত হয়েছেন তারা সবাই পেশাদার সাংবাদিক। কিন্তু আপনারাই বলছেন গত ১৫ বছরে আপনারা ট্রাস্ট থেকে কোনও অর্থ সহায়তা পাননি। তাহলে সেই ১৪ হাজার সাংবাদিক কারা- এই প্রশ্ন থেকেই যায়।
ট্রাস্টের টাকা লুটপাট হয়েছে মন্তব্য করে প্রধান অতিথি আরও বলেন, আগের সরকার কল্যাণ ট্রাস্টের বিতরণযোগ্য ফান্ড একদম নিঃশেষ করে রেখে গেছে। আগস্ট বিপ্লবের আগে জুলাই মাসেই তারা বিপুল অংকের অর্থ বিতরণ করে তালিকা দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি নীতি নৈতিকতার কোন বালাই ছিল না সেখানে। তারা একেক জনকে দুই লাখ তিন লাখ করে টাকা দিয়ে একদম ফার্ম শেষ করে ফেলে।
সেপ্টেম্বর মাসে দায়িত্ব নিয়ে মাননীয় তথ্য উপদেষ্টা ও সচিব মহোদয়ের সহযোগিতায় কল্যাণ ট্রাস্টকে আবারও এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি- বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে অল্প কিছু অর্থ দেয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় চেয়ারে বসে নৈতিকতাবোধ হারিয়ে সেই টাকার অপব্যবহার যদি করা হয়, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছুই হয় না।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের উপ- পরিচালক এ বি এম রফিকুল ইসলাম, জেলার সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. রেজাউল করিম, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, প্রাচ্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক বেনজীন খান, প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সভাপতি নুর ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান, বিএফইউজের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু প্রমুখ।
সভায় জুলাই-আগস্টে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শেষে যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর জেলার ৩০ জন সাংবাদিকের মাঝে অর্থ সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়।
গণমাধ্যমের রূপ ধরে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে: সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি আবদুল্লাহ
Leave a comment