জন্মভূমি ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় সাত মাস ধরে চলা নির্বিচার এই হামলার জেরে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।
এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজার অর্ধেক মানুষ ‘অনাহারে’ আছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
এমনকি গাজায় বর্তমানে যে পরিমাণ সাহায্য ঢুকছে তা প্রয়োজনের খুবই অল্প বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার (২৪ এপ্রিল) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার জনসংখ্যার – আনুমানিক ২৩ লাখ মানুষ – অর্ধেক অনাহারে রয়েছে রয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, ডব্লিউএফপি প্রতি মাসে গাজায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে। সংস্থাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, তারা খাদ্য সহায়তা প্রদান করলেও বাস্তবিকভাবে সহায়তার প্রয়োজন এতোটাই তীব্র যে তাদের এই ধরনের প্রচেষ্টা ‘প্রয়োজনের তুলনায় সাগরে কেবল একটি ফোঁটার মতো।’
গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘের এই খাদ্য ত্রাণ সংস্থাটি।
এর আগে গাজার ফিলিস্তিনিরা ‘দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে বলে গত মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটি সেসময় জানায়, গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। এই পরিস্থিতিতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা বিতরণ করাই হচ্ছে ‘সবচেয়ে কার্যকর এবং নিরাপদ উপায়। গাজা উপত্যকায় সহায়তার নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন এবং টেকসই প্রবেশাধিকার এখন জীবন ও মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।
ইসরায়েল গাজার ওপর ব্যাপকভাবে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। এর ফলে এই ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা অনাহারের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ১৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৬ হাজারের বেশি মানুষ।
এছাড়া ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে।