টেকসহ বেড়িবাঁধ রক্ষায় ১ হাজার ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে কংক্রিটের সিসি ব্লক
মোজাফ্ফর রহমান, সাতক্ষীরা : সুন্দরবন উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা। চারিদিকে নদী বেষ্টিত এ ইউনিয়নের মানুষ ঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে টিকে আছে সেই যুগযুগ ধরে। ৩৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের উপকূলরীয় গাবুরা ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে ৩৮ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে। এখানকার মানুষ সুন্দরবনের প্রকৃতিক সম্পদ আহরনের পাশাপাশি মৎস চাষ ও কৃষি কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, প্রলয়ংকারী ঘূণিঝড় আইলা, সিডর, বুলবুল, আম্পান, ফনী ও ইয়াসের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এ ইউনিয়নে বহু মানুষের প্রাণহানিসহ ফসলী জমি, মাছের ঘেরে আর্থিক ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে বহুবার। ক্ষয়ক্ষতির ফলে গাবুরায় ইউনিয়ন জুড়ে সৃষ্টি হত মানবিক পরিস্থিতির। জন্মস্থানের বসত-বাড়ি ফেলে যেতে হত অন্য জায়গায়। উদ্বাস্তুর মতন জীবন-যাপন করতে হত এ অঞ্চলের মানুষের এমন কথা জানিয়েছে উপকুলের মানুষ।
সাতক্ষীরা পানিউন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সালাউদ্দীন জানান, ভবিষ্যতে এসব প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্দোগে ইউনিয়নের চারপাশে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকার গাবুরা ইউনিয়নে চারপাশে সাড়ে ২৯ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণে ১ হাজার ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন।
গাবুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান স ম শফিউল আযম লেনিন জানান, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর অধিনে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ আরও দুই মাস আগে থেকে শুরু হয়েছে। এ স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ দৃশমান হওয়ায় সহায় সম্পদ হারানো মানুষের মুখে দেখা মিলেছে স্বস্তি এবং আনন্দের হাসি। বালি ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলে নদী ভাঙ্গন রক্ষা, পাথর, বালি এবং সিমেন্ট জমিয়ে সিসি ব্লক তৈরি করে বেড়িবাঁধের নদীর পাশে বসিয়ে নির্মান করা হচ্ছে কংক্রিটের টেকসই বেড়িবাঁধ। বাঁধ নির্মাণে যেন চলছে এক মহা কর্মযজ্ঞ।
সাতক্ষীরা-৪ শ্যামনগর এলাকার সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার জানান, এ টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান কাজ সম্পন্ন হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্বীপ ইউনিয়নের মানুষের জান, মাল ফসলী জমি, মাছের ঘেরের ক্ষতি হবেনা ছাড়তে হবে না জন্মস্থানের বসত-বাড়ি। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুন্দরবন উপকূলীয় গাবুরা ইউনিয়নে মানুষের রক্ষায় টেকসই এ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন হলে গাবুরা ইউনিয়ন ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা পাবে উপকূলের মানুষ। মানুষের অর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়নসহ সুন্দরবনে পর্যটন শিল্পের বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধে সুন্দর দৃষ্টি নন্দন হচ্ছে এসব কর্মযজ্ঞ দেখে মানুষের মাঝে স্বস্তির হাসি দেখা দিয়েছে।