
জন্মভূমি ডেস্ক : ২০২২-২৩ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এতে সাময়িক হিসাবের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৭৮ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির হিসাবের বিভিন্ন উপখাত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ব্যাংক ও আর্থিক খাত এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে প্রবৃদ্ধি একদম তলানিতে ঠেকেছে। এই উপখাতগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ উপখাতগুলোয় প্রবৃদ্ধি ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব অন্যান্য উপখাতেও পড়েছে। এতে করে সার্বিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবিএসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক ও বিমা খাতে প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের তুলনায় অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংক খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ছয় দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এটি দুই দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিকের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কম হয়েছিল। ওই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল চার দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর পরের অর্থবছর এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল পাঁচ দশমিক ৯৬ শতাংশ। একইভাবে বিমা খাতেও কমেছে প্রবৃদ্ধি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে বিমা খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে এক দশমিক শূন্য আট শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল তিন দশমিক ১৪ শতাংশ। এর আগের দুই অর্থবছর ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে দুই দশমিক ১৬ ও তিন দশমিক ২২ শতাংশ। আর সার্বিকভাবে ব্যাংক ও বিমা খাতে হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক ৫৫ শতাংশে, যা এর আগের বছর ছিল পাঁচ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতেও প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে ব্যাপকহারে। বিদ্যুৎ খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে তিন দশমিক ৪০ শতাংশ, যা এর আগের অর্থবছরে ছিল সাত দশমিক ৭৫ শতাংশ। সে হিসাবে এ খাতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে অর্ধেকেরও বেশি। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গিয়েছিল। অন্যদিকে গ্যাস উৎপাদনে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্যাস খাতে দশমিক ৬১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটি আরও বেশি নেতিবাচক হয়েছে। এ সময় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৮৪ শতাংশ। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ছিল।
গ্যাস, বিদ্যুৎ, ব্যাংক ও বিমা খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেলে সার্বিক অর্থনীতিতে তার কেমন প্রভাব পড়তে পারেÑএমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘গ্যাস, বিদ্যুৎ, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক বিষয়াদি কৌশলগত সেবা ও পণ্য। এসব খাতে যদি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায় তাহলে সার্বিক অর্থনীতিতে তার একটি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যবহার কমে গেলে বুঝতে হবে শিল্প খাতে উৎপাদন কম হচ্ছে। আর ব্যাংক খাতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার অর্থ হচ্ছে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়া। এর প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতিতে অবশ্যই পড়বে।’
এদিকে গ্যাসের উৎপাদন (ম্যানুফ্যাকচারিং) হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের উত্তোলনও অনেক কমে গেছে। গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম পণ্য উত্তোলনে বিগত দুটি অর্থবছরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। গত অর্থবছর এ খাতে চার দশমিক ১৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর আগের অর্থবছর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল চার দশমিক ৬৭ শতাংশ। তবে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে কয়লা উত্তোলনে। এ খাতে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১৭ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ, যা প্রবৃদ্ধির সব উপাদানের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কয়লা উত্তোলন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। বিষয়টিকে আবার ভালোভাবে দেখছেন না পরিবেশবিদ ও অর্থনীতিবিদরা। তারা ধীরে ধীরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছেন।