রেজোয়ান হক : ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার ৫দিন পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংগে তার অফিসে কথা হয় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের। ঘটনাটি নিয়ে সম্পাদকদের মনোভাব বুঝতে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রনেই সেখানে গিয়েছিলেন মতি ভাই।
কথাবার্তার সময় তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন। কারা এ হামলা করতে পারে বলে মনে করেন-প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে মতি ভাই তার অনুমান থেকে আরো কয়েকটি গোষ্ঠীর পাশাপাশি ইসলামী জঙ্গীদের কথা বললে প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলেন- ‘আপনারা ধর্মীয় সংগঠনগুলো সম্পর্কে বাড়িয়ে বলেন, পক্ষপাতমূলক লেখালেখি করেন।’ ২০১৯ সালের এই দিনের প্রথম আলো’য় মতি ভাই বিষয়টি নিয়ে লিখেছিলেন।
তাতে তিনি জানান- ‘আমি অভিযোগ করেছিলাম, আপনারা আওয়ামী লীগের মামলা নিচ্ছেন না, নিহতদের লাশ দিচ্ছেন না এবং প্রতিবাদ সমাবেশ বা শোক পালন করতে দিচ্ছেন না। আওয়ামী লীগ কি শোক প্রকাশও করতে পারবে না? তখন খালেদা জিয়া উত্তেজিত ভাষায় বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে কিছু করতে দেওয়া হবে না, প্রয়োজনে শায়েস্তা করা হবে।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও ৩০ আগস্ট বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে দলের তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াসহ একাধিক মন্ত্রী গ্রেনেড হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন।
২ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘গ্রেনেড হামলা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’ সংসদে বেগম জিয়া বলেছিলেন, ‘ওনাকে মারতে যাবে কে?’ শেখ হাসিনা নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন।’
আক্রান্ত আওয়ামী লীগকেই দায়ি করার পক্ষে বিএনপি নেতৃবৃন্দ একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন যে, আওয়ামী লীগের সমাবেশটি মুক্তাঙ্গনে করার কথা ছিল কিন্তু কয়েক ঘন্টা আগে রহস্যজনকভাবে তা পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ দলের অফিসের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। মির্জা ফখরুল আজও তা বলেছেন। রাজনৈতিক বিষয়ক লেখক-গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বিএনপির এই অভিযোগ ছাড়া আর কোনো গবেষনায় পেয়েছেন কিনা জানিনা-তিনিও দেখলাম আজ প্রথম আলো’য় তার লেখাতেও বলেছেন ‘মুক্তাঙ্গন থেকে অজ্ঞাতকারণে তড়িঘড়ি করে সমাবেশের স্থান বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সরিয়ে আনা হয়।’
কিন্তু প্রথম আলো’র রেকর্ডই বলছে ২০ আগস্ট প্রথম আলো’র ১৫ নম্বর পাতায় এ সমাবেশ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের একটি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছিল যেখানে সমাবেশের স্থান হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এর কথাই উল্লেখ ছিল। পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞাপন ছাপাতে হলে অন্তত: একদিন আগে তা জমা দিতে হয়। সে হিসেবে তা দেয়া হয়েছিল অবশ্যই ১৯ আগস্টের মধ্যে। এর অর্থ-সমাবেশটি যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ হবে তা ঠিক হয়েছিল অন্তত: দু’দিন আগে। হঠাৎ,তড়িঘড়ি করে,কয়েক ঘন্টার নোটিশে নয়।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, মাছরাঙা টেলিভিশন।