
আঘাত হেনেছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। রবিবার দুপুরে এটির কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিট্যুয়েতে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেন্ট মার্টিনে ২ ও মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত ৩ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলীয় কয়েকটি এলাকা। এসব এলাকার ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উপড়ে গেছে।
এই আঘাতের মাধ্যমে বড় বিপদের শঙ্কা কেটে গেছে। সেইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যা ক্ষতি হয়েছে, এর চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তবে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করে চলেছেন।
অতীতে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়গুলোর ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কিছু মানুষ নিজের ঘরবাড়ি, গরু-ছাগল রেখে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। তাদেরই ক্ষয়ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি।
তবে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্যোমী কর্মকাণ্ডে এবার সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশ কম। তারপরেও যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেগুলো দ্রুততম সময়ে চালু করতে হবে।
ঘরবাড়ী বিদ্ধস্ত, সড়কে উপড়ে পড়া গাছ ও বৈদ্যুতিক খুটি অপসারণ, অনেক স্থানে বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই দুর্যোগ ও ত্রাণসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই পূর্বাভাস দিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই বাড়বে। অর্থাৎ ক্রমেই অধিক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বেশি করে আঘাত হানবে এবং ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে দুই কোটির বেশি মানুষ বসবাস করে। তাদের বেশির ভাগের ঘরদোরও তেমন মজবুত নয়। তাই উপকূলের দুই কোটি মানুষকে রক্ষায় দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা নিতে হবে। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ করেছিল, উপকূল রক্ষা বাঁধগুলোকে আরো উঁচু ও মজবুত করে গড়ে তুলতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এক কিলোমিটার দূরে দূরে বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। গবাদি পশু রক্ষায় উঁচু ঢিবি গড়ে তুলতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে কমিটির অনেক সুপারিশই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি।
আমরা মনে করি, ঘূর্ণিঝড় মোখা ও জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মানুষকে রক্ষায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পাশাপাশি উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলের দুই কোটি মানুষকে রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করতে হবে।