By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে উপকূলবাসীর সংগ্রামের শেষ কোথায়?
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ALL E-Paper
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে উপকূলবাসীর সংগ্রামের শেষ কোথায়?
তাজা খবরসাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে উপকূলবাসীর সংগ্রামের শেষ কোথায়?

Last updated: 2025/12/09 at 2:16 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 2 weeks ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে ঘূর্ণিঝড় কেবল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, প্রতিবছর আঘাত হানা এক আজন্ম অভিশাপ। বিশেষ করে, বছরের বর্ষা মৌসুমের আগে এবং পরে আকাশে মেঘ দেখলেই তাদের মনে দানা বাঁধে এক চেনা ভয়, এই বুঝি হারালাম সবকিছু।
এই ভয়ের একটি ভৌগোলিক এবং বৈশ্বিক কারণও রয়েছে। পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশের উপকূলীয় ভূখ- প্রাকৃতিকভাবেই নিচু এবং সমতল। অসংখ্য নদী-নালা জালের মতো ছড়িয়ে থাকায় এই অঞ্চল যেমন উর্বর, তেমনই অরক্ষিত। বঙ্গোপসাগরের ফানেল আকৃতির উপকূলরেখা সামুদ্রিক ঝড়কে দানবীয় শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ করে দেয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন নামক বৈশ্বিক অভিশাপ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘূর্ণিঝড়গুলোকে আরও শক্তিশালী ও ঘন ঘন আঘাত হানার পরিবেশ তৈরি করছে। ফলে, যা ছিল প্রকৃতির এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তা এখন এক বিধ্বংসী ও নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। উপকূলের সাধারণ মানুষ, যারা এই জলবায়ু পরিবর্তনে সামান্যতম ভূমিকাও রাখেনি, তারাই এর সবচেয়ে নিষ্ঠুর শিকার।
তবে প্রকৃতির এই রুদ্র রূপের বিপরীতে উপকূলকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন- সুন্দরবন। সিডর, আইলা বা বুলবুলের মতো প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের সামনে সুন্দরবনই যেন হয়ে উঠেছিল এক প্রাকৃতিক বর্ম। এর অসংখ্য গাছপালা, শ্বাসমূল আর নদ-নদীর ঘন নেটওয়ার্ক ঝড়ের গতিকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়, জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা শোষণ করে নেয় এবং উপকূলের মূল ভূখ-কে সরাসরি আঘাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি, দূষণ এবং বনখেকোদের আগ্রাসনে সুন্দরবন নিজেই আজ বিপন্ন। এই প্রাকৃতিক রক্ষাকবচকে রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যতে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত বাংলাদেশের জন্য আরও কত ভয়াবহ হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। সুন্দরবনকে বাঁচানো তাই কেবল একটি পরিবেশগত বিষয় নয়, এটি উপকূলের কোটি মানুষের জীবন বাঁচানোর সমার্থক।
উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ প্রতিবছর হারায় তাদের স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা, নিকটাত্মীয়, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি। সিডর, আইলা, ফণী, আম্ফানÑ এসব নামের সাথে মিশে আছে হাজারো মানুষের কান্না আর হারানোর বেদনা। তবে এই দুর্যোগগুলোই তাদের আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও জোগায়। এই হারানোর যন্ত্রণা কেবল বস্তুগত বা শারীরিক নয়, এর একটি গভীর মানসিক প্রভাবও রয়েছে। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলের শিশুদের চোখে যে আতঙ্ক জমা হয়, তা ভোলার নয়। ঝড়ের রাতে বাতাসের হুংকার আর জলোচ্ছ্বাসের গর্জন তাদের শিশু মনে যে স্থায়ী ক্ষত তৈরি করে, তা সারাজীবনেও শুকায় না। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তৈরি হয় এক ধরনের উদ্বেগ। বারবার ঘরবাড়ি ও জীবিকা হারিয়ে তারা একসময় মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি প্রায়শই ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়।
এই সংকটের সবচেয়ে নীরব শিকার হয় নারী ও শিশুরা। দুর্যোগের সময় এবং পরে তাদের দুর্ভোগ পৌঁছায় চরমে। আশ্রয়কেন্দ্রে অপরিসর ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নারীরা তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকেন। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে তারা নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন, বিশেষ করে তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্যোগ পরবর্তী সময়েও সংসারের হাল ধরতে নারীদেরই সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়, যা তাদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। দুর্যোগের এই লিঙ্গভিত্তিক এবং বয়স-ভিত্তিক প্রভাবগুলো আমলে না নিলে কোনো পুনর্বাসন কার্যক্রমই পুরোপুরি সফল হতে পারে না।
এখানে ঘূর্ণিঝড় বৃষ্টি ও বাতাসের সাথে সাথে নিয়ে আসে লোনা পানির বিশাল ঢেউ আর জলোচ্ছ্বাস। মানুষ কেবল তার শেষ আশ্রয় হারায় না, খাদ্য-বস্ত্র-পানির অভাব তখন সবচেয়ে প্রকট হয়। বাঁধ ভেঙে নদীর লোনা পানি উপকূলে ঢুকে পুকুর, টিউবওয়েলসহ অন্যান্য পানির উৎস নষ্ট করে দেয়। দীর্ঘমেয়াদে ডেকে আনে খাদ্য সংকট এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি। সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে যায় লবণাক্ততা আর তীব্র বাতাসের তোড়ে। জেলে হারায় তার মাছধরার জাল ও নৌকা। অনেকেই হারায় তাদের জীবিকার অনুসঙ্গ, যার ফলে বেড়ে যায় অপরাধপ্রবণতা। লোনা পানির এই আগ্রাসন কেবল তাৎক্ষণিক সংকট তৈরি করে না, এটি উপকূলের কৃষি অর্থনীতি এবং বাস্তুতন্ত্রকে স্থায়ীভাবে বদলে দেয়। যে জমিতে একসময় সোনার ধান ফলত, লবণাক্ততার কারণে তা আজ বন্ধ্যা। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক তাদের শতবর্ষের পেশা ছেড়ে চিংড়ি চাষ বা অন্য পেশায় ঝুঁকছে। চিংড়ি চাষ লাভজনক হলেও এটি মাটির উর্বরতা আরও কমিয়ে দেয় এবং লবণাক্ততা বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে মিষ্টি পানির মাছ ও দেশীয় প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এটি একটি চক্রাকার সংকট তৈরি করে। ঘূর্ণিঝড় লবণাক্ততা বাড়ায়, আর সেই লবণাক্ততা কৃষিকে ধ্বংস করে মানুষকে এমন পেশার দিকে ঠেলে দেয়, যা পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করে। এর ফলে উপকূলের খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ওপর এক নীরব আঘাত নেমে আসে।
বেশিরভাগ মানুষ সঠিক খবর ও সচেতনতার অভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে না। যারা আশ্রয় গ্রহণ করে তারা ফিরে এসে বাড়ির খোঁজ নেয়, হারিয়ে যাওয়া গবাদিপশুটির খোঁজ নেয়। ঘূর্ণিঝড় বাড়িঘর আস্ত রাখে না, অনেকসময় মেরে ফেলে তাদের সম্বল গবাদি পশুদের। কিন্তু, এই অদম্য মানুষগুলো আবার ঘুরে দাঁড়ায়। চোখের পানিকে আড়াল করে ঘাম ঝরিয়ে পরিশ্রম করে, গড়ে তোলে আরেকটা বাড়ি, মাছে ভরা পুকুর, গোয়ালভরা গবাদি পশু-পাখি। কিন্তু, এসব আয়োজন যেন আবার ঘূর্ণিঝড়ের কাছে সঁপে দেওয়ার জন্যই।
তবে এই ঘুরে দাঁড়ানো এখন আর কেবল ভাঙা ঘর নতুন করে গড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। প্রকৃতির সাথে লড়াই করতে করতে উপকূলের মানুষ শিখে নিয়েছে অভিযোজনের নিজস্ব কৌশল। তারা এখন অতীতের অর্জিত জ্ঞানের সাথে আধুনিক প্রযুক্তিকে মিলিয়ে টিকে থাকার নতুন পথ খুঁজছে। অনেকেই মাটির ভিটার উচ্চতা বাড়িয়ে ঘর তৈরি করছেন। বর্ষাকালে বাড়ির চারপাশে ভাসমান সবজির বাগান তৈরি করছেন কেউ কেউ, যা জলোচ্ছ্বাসেও নষ্ট হয় না। লবণাক্ততা-সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন ও চাষাবাদ বাড়ছে। কমিউনিটি-ভিত্তিক দুর্যোগ প্রস্তুতি দল গঠন করে তারা নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছে।
উপকূল রক্ষায় বেড়িবাঁধগুলোই প্রথম প্রতিরোধ ব্যবস্থা। কিন্তু অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ, দুর্নীতি এবং নদী ভাঙনের কারণে অনেক বাঁধই দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ। একটি শক্তিশালী জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা তাদের থাকে না। আবার আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যেগুলো আছে, তার অনেকগুলোই মূল বসতি থেকে দূরে হওয়ায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য সেখানে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। দুর্যোগের সময় সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আশ্রয়কেন্দ্রের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
তাছাড়া, যখন একজন কৃষক নদী ভাঙনে তার জমি হারায়, একজন জেলে তার নৌকা হারায় এবং একজন দিনমজুর তার কাজ হারায়, তখন নিজের গ্রামে টিকে থাকার আর কোনো উপায় থাকে না। জীবন ও জীবিকার তাগিদে হাজার হাজার পরিবার প্রতি বছর উপকূল ছেড়ে শহরের দিকে পাড়ি জমায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম বা খুলনার মতো বড় শহরের বস্তিগুলোতে আশ্রয় নেয় তারা, যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করে এক ভিন্নধর্মী সংগ্রাম। মাটির সঙ্গে বেড়ে ওঠা এই মানুষগুলো শহরের ইট-পাথরের জীবনে খাপ খাওয়াতে পারে না। তারা তাদের পরিচিতি হারায়, সামাজিক বন্ধন হারায় এবং প্রায়শই ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এই জলবায়ু-শরণার্থীদের গল্পগুলো জাতীয় পরিসংখ্যানে প্রায়শই হারিয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে দাঁড়ায়, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে, এমনকি ঘর মেরামতের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু, স্থানীয় রাজনীতির চক্করে পড়ে অনেক সময় মূল ক্ষতিগ্রস্তরা এসব সাহায্যের বাইরে থেকে যায়। ত্রাণ কার্যক্রম প্রায়শই তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন, যেমন- টেকসই জীবিকার ব্যবস্থা করা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, অথবা জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণÑ এসব দিকে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয় না। ফলে, একটি দুর্যোগের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আরেকটি এসে আঘাত হানে, এবং মানুষগুলো এক ত্রাণ-নির্ভরতার দুষ্ট চক্রে আটকা পড়ে যায়।
এখন প্রশ্ন হলো, এই অন্তহীন সংগ্রামের শেষ কোথায়? কেবল ত্রাণ বা তাৎক্ষণিক সাহায্য দিয়ে এই সমস্যার মূল উৎপাটন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। টেকসই ও মজবুত বেড়িবাঁধ, পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরি করতে হবে, তেমনই লবণাক্ততা-সহনশীল কৃষি ব্যবস্থা ও বিকল্প জীবিকার সুযোগ তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ বা ক্ষয়ক্ষতি পূরণের তহবিল আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সকল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, তারাই এই সংকটের প্রধান ভুক্তভোগী এবং তারাই জানে টিকে থাকার সেরা উপায়। উপকূলকে বাঁচাতে হলে তাদের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাকেও সম্মান জানাতে হবে।
বাংলাদেশের গর্ব করার মতো যে কয়টি প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, তার মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো এই বনকে অনেক আগেই ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাণীকূল রক্ষার তাকিদ বরাবরই প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে আসছে। এটি শুধু বাংলাদেশেরই সম্পদ নয়, বিশ্বেরও সম্পদ। সুন্দরবন দেশকে ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষা করার অন্যতম প্রাকৃতিক বুহ্য। সর্বশেষ আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আমফানের তীব্রতা ঠেকিয়ে দিয়ে নিজের সক্ষমতা আবারো প্রমাণ করেছে সে। দানবের মতো আছড়ে পড়া সুপার সাইক্লোন আমফানের তাণ্ডব থেকে ঢাল হয়ে সুন্দরবন বৃহত্তর খুলনার উপকূলীয় ১০ উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে সহায়তা করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়টি বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলের ১০০ কিলোমিটারের কাছে আসার সময় এর বাতাসের গতি ঘণ্টায় ছিল ২২০ কিলোমিটার। কিন্তু সুন্দরবন অতিক্রমের পর বসতি এলাকায় আঘাতের সময় এর গতি কমে আসে ১৫১ কিলোমিটারে। অন্যদিকে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাবে ঝড়টির সঙ্গে আসা জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা থাকার কথা ১৫ থেকে ১৮ ফুট। কিন্তু তা উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় ১০ থেকে ১২ ফুটে নেমে আসে। অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড় আমফানের গতি অন্তত ৭০ কিলোমিটার কমিয়েছে সুন্দরবন। এর জলোচ্ছাসের উচ্চতাও ৫ থেকে ৬ ফুট কমিয়েছে। ফলে ঝড়ে যে পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি ক্ষতির হাত থেকে উপকূলের মানুষ ও সম্পদ রক্ষা পেয়েছে। এর জন্য অবশ্য সুন্দরবনকেও বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে গঠিত সুন্দরবনের ক্ষতি নির্ধারণ কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঝড়ের সাথে লড়াই করতে গিয়ে উপড়ে পড়েছে অন্তত ১২৩০০টি গাছ। পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষতি মিলিয়ে আমফানে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের। এর আগে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, রোয়ানু, বুলবুল ও ফণীর গতিও থমকে দিয়ে লাখো মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে সুন্দরবন।
আল্লাহপাক কোনো কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি। প্রতিটি সৃষ্টির পেছনেই রয়েছে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য। যেমন তিনি পাহাড়কে সৃষ্টি করেছেন কীলক বা পেরেক স্বরূপ, যাতে পৃথিবীর ভূ-ভাগ অহেতুক নড়াচড়া করতে না পারে। এটা তিনি কোরআনে নিজেই বলেছেন। তেমনি, পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনকে আমাদের জন্য করেছেন প্রাকৃতিক দেওয়াল, যা ঝড়-ঝাপটা থেকে বার বার আমাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করছে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা উইনরক ইন্টারন্যাশনালের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউট ‘সুন্দরবনের পর্যটন, ঘূর্ণিঝড় থেকে বসতবাড়ি সুরক্ষা এবং আহরিত সম্পদের আর্থিক মূল্যায়ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা করেছিল। তাতে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’-এর সময় সুন্দরবন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৪৮৫ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ বাঁচিয়েছিল, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। গবেষকরা বলছেন, ৬ লাখ ৩ হাজার হেক্টর আয়তনের সুন্দরবন না থাকলে টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতো। ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর আইলা, রোয়ানু, বুলবুল, ফণী এবং সর্বশেষ আমফানের গতি এবং জলোচ্ছাসের উচ্চতা কমিয়ে দিয়ে সুন্দরবন আমাদের ঠিক কী পরিমাণ জীবন ও সম্পদ বাঁচিয়েছে তা এককথায় কল্পনাতীত। শুধু কি ঝড়-ঝাপটা থেকেই সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করছে? না, বরং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকার উৎসও এই সুন্দরবন। এ বন থেকে গোল পাতা, মধু, মোম, মাছ, কাঠ এবং অন্যান্য বনজসম্পদ সংগ্রহ করে জীবন চলে বিপুল সংখ্যক মানুষের। প্রতি বছর সুন্দরবন থেকে পর্যটন ও বন বিভাগের বিশাল অংকের রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে অতিঘনত্বের একটি দেশ। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা এখানে অস্বাভাবিক বেশি। আর এই বিপুল জনগোষ্ঠির বেঁচে থাকার জন্য নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণের জন্য যে অক্সিজেন প্রয়োজন, আমাদের বায়ুমণ্ডলে তার সবচে বড় যোগানদাতা এই সুন্দরবন। পাশাপাশি মানুষ, পশু, পাখি প্রশ্বাসের সাথে প্রতি মুহূর্তে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছাড়ছে এবং মিল-কারখানা থেকে কার্বনসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যেসব উপাদান নির্গত হচ্ছে সেসব শোষণ করে আমাদের বায়ুমণ্ডলকে পরিশুদ্ধ করছে এই বন।
আসলে আমাদের জাতীয় জীবনে সুন্দরবনের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু তারপরও আমাদের জন্য এ অমূল্য সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে তদারকির কোনো বালাই নেই। বরং নানাভাবে এ বনকে ধ্বংস করার পাঁয়তারাই যেন চলছে। সুন্দরবনের চারপাশে শিল্পকারখানা স্থাপন করে, চিংড়ির ঘের দিয়ে, অবাধে গাছপালা কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ করে সুন্দরবনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক সময় শুধু বাংলাদেশ অংশেই যে বনের আয়তন ছিল ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার, তা এখন দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাছাকাছি। ভারতের অংশ মিলিয়ে তা ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মতো হবে। তারপরও থেমে নেই বন ধ্বংসের প্রক্রিয়া। ২০১৭ সালে সংবাপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুন্দরবন ঘেঁষে ৩২০টি শিল্পকারখানা গড়ে তোলার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ কমিটি। ১৯৯৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করলেও তার বরখেলাপ করে এসব শিল্পকারখানার অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে পরিবেশবিদরা অভিযোগ করেছেন। বলা হচ্ছে, জাতীয় পরিবেশ কমিটি দেশের শিল্পায়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে এসব কারখানাকে অনুমোদন দিয়েছে। যদিও এসব এলাকায় কলকারখানাসহ যেকোনো উন্নয়নকাজ করার আগে বন বনের প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন শর্ত দিয়ে বিধি করা হয়েছে। কিন্তু কয়লানির্ভর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বোতলজাত করার কারখানার মতো মারাত্মক পরিবেশ দূষণকারী শিল্পকারখানাও স্থাপন করা হচ্ছে সুন্দরবনের পাশে। পরিবেশবিদরা মনে করছেন, এসব শিল্পকারখানা সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। যতই বন ও বনের প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শর্তের কথা বলা হোক, তাতে কোনো কাজ হবে না। সুন্দরবনকে ঘিরে শিল্পকারখানা গড়ে উঠার অর্থই হচ্ছে, এর ক্ষতিসাধন। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক এবং এর বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিক সমাজ আন্দোলন পর্যন্ত করছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে সুন্দরবনের কী ধরনের ক্ষতি হবে তার বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে সরকারও বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বদ্ধপরিকর এবং ইতোমধ্যে তারা এর নির্মাণ কাজ অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে।
নির্মাণাধীন এবং অনুমোদন প্রাপ্ত সুন্দরবন সংলগ্ন সকল কারখানা চালু হলে বনটি যে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তাতে সন্দেহ নেই। যতই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হোক না কেন, অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ঘটলে এর প্রভাব যে সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর পড়বে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। দুর্ঘটনা না ঘটার গ্যারান্টি তো কেউ দিতে পারবে না। কয়েক বছর আগে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে শ্যালা নদীতে অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ ডুবে তেল ছড়িয়ে যাওয়ায় কী ভয়াবহ ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বৃক্ষরাজির ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি নদীর মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নদীতে কয়লাবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনাও ঘটেছে। অনুমোদনপ্রাপ্ত শত শত শিল্পকারখানা যখন পুর্নোদ্যমে চালু হবে, তখন সেগুলো থেকে নিঃসরিত বিষাক্ত ধোঁয়া ও কেমিক্যাল অবশ্যই সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠবে। এ ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো দৃষ্টিগোচর হবে না, তবে বছরের পর বছর ধরে নিঃসরিত হতে থাকা ক্ষতিকর এসব উপাদানের প্রভাব সুন্দরবনের উপর নিশ্চিতভাবেই পড়বে। দেশে কলকারখানা স্থাপন, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে এজন্য কেবল সুন্দরবন এলাকাকেই কেন বেছে নিতে হবে? সুন্দরবন ঘেঁষে যেসব কলকারখানা স্থাপন ও চালুর অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেগুলো দেশের অন্যান্য স্থানে করা অসম্ভব ছিল না। সুন্দরবনের অস্তিত্ব ও স্বার্থ রক্ষায় সরকারকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এ কথা মনে রাখা দরকার, শিল্পকারখানা যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে স্থাপন করা যেতে পারে। সুন্দরবনের ক্ষতি বা ধ্বংস হলে আরেকটি সুন্দরবন সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। তাছাড়া পরিবেশ রক্ষায় যেখানে দেশের মোট আয়তনের অন্তত ২৫ শতাংশ বন থাকা প্রয়োজন, সেখানে আমাদের দেশের আয়তনের ১০ শতাংশ বনভূমিও নেই। এই অবস্থায় যদি সুন্দরবনের আয়তন আরো সংকুচিত হতে থাকে তাহলে পরিবেশের উপর কতটা মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে তা ভাবনার বিষয়। আরো ভাবনার বিষয় হলো, পরিবেশবিদ এবং সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সরকারকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হলেও কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
আমাদের জাতীয় জীবনে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট সুন্দরবনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার শেষ নেই। এর অপরিহার্যতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মানুষের সংখ্যাও দেশে কম নেই। তারপরও নানা কারণে সকলের সামনেই তিলে তিলে ধ্বংস হচ্ছে এ বনটি। এর জন্য সরকারের নীতি নির্ধারকরা যেমন দায়ী, তেমনি বন বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কতিপয় অসাধু ব্যক্তির কাণ্ডজ্ঞানহীনতাও দায়ী। ফলে একদিকে অবাধে বন থেকে মূল্যবান কাঠ পাচার করা হচ্ছে, পশু-পাখি শিকার করে সুন্দরবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো সময় বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসবের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততার খবরও পাওয়া যায়। কিন্তু কখনো উপযুক্ত প্রতিকার পাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে অবাধে শিল্পকারখানা স্থাপন করতে দিয়ে গলায় ফাঁস পরিয়ে সুন্দরবনকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অস্তিত্ব হারাতে পারে আমাদের প্রাকৃতিক দেওয়াল সুন্দরবন। আর সুন্দরবন অস্তিত্ব হারালে তার কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে তা ধারাণাও করা অসম্ভব। তবে ঘূর্ণিঝড় আমফান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। দুর্যোগ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন না থাকলে কলকাতা শহরে ঘূর্ণিঝড় আমফান যে তাণ্ডব চালিয়েছে, একই পরিণিত হতো ঢাকাসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর। ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঢাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার, আর কলকাতায় ছিল ১১২ কিলোমিটার। সুন্দরবন না থাকলে ঢাকাতেও ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতি নিয়ে ঝড়টি চলে আসত। এ অবস্থায় এটি আমাদের সমুদ্র উপকূল থেকে শুরু করে ঢাকা অবদি কী পরিমাণ তাণ্ডব চালিয়ে মানুষের জীবন ও সম্পদ ধ্বংস করত তার হিসাব করাও অসম্ভব হয়ে পড়ত। ১৯৭০ এবং ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় দুটি আমাদের ভূখণ্ডে আঘাত করেছিল সুন্দরবন বহির্ভূত এলাকা দিয়ে। এই দুটি ঝড়ের আঘাতে বিপুল প্রাণহানি ও তাণ্ডবের কথা স্মরণ করলেই আঁচ করা সম্ভব হবে, যে সুন্দরবন অস্তিত্ব হারালে খুলনা-বাঘেরহাট এবং তৎসংলগ্ন এলাকাগুলোর অবস্থা কী ভয়াবহ হবে। শুধু তাই নয়, আজ যারা সুন্দরবন ঘিরে কলকারখানা স্থাপন করছেন কোনো কারণে যদি এ বন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তাহলে পরবর্তী কোনো ঝড়ে সেসব শিল্পকারখানাও যে উড়ে যাবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? কিংবা কলকাতায় ঘূর্ণিঝড় আমফান যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে সেই একই তাণ্ডবে ঢাকায় হলে কী ভয়াবহ অবস্থা হতো তা তো স্যাটেলাইট চিত্রগুলো দেখলেই অনুমান করা যায়।
সুন্দরবন আল্লাহপাকের দেয়া আমাদের জন্য এক অমূল্য নেয়ামত। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-ঝঞ্জা থেকে যেমন আমাদের রক্ষা করছে। তেমনি নানা রকম বনজ সম্পদ দিয়ে, কার্বন শোষণ করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে। এটি আমাদের বেঁচে থাকার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান অক্সিজেন উৎপাদনেরও প্রাকৃতিক কারখানা। এ বনের কাছে আমাদের ঋণের শেষ নেই। তাই যে কোনোমূল্যে সুন্দরবনকে রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সুন্দরবন শুধু একাই ধ্বংস হবে না, বরং আমাদের ধ্বংসও অনিবার্য হয়ে উঠবে। তাই নিজেদের স্বার্থেই সুন্দরবনকে টিকে থাকার সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দীর্ঘ উপকূলজুড়ে এবং বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা দ্বীপগুলোতে পরিকল্পিত বনায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বেষ্টনীকে আরো মজবুত করতে হবে। এর জন্য যদি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিবেচিত শিল্পকারখানাগুলোকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটাই করতে হবে। সুন্দরবনে সক্রিয় চোরাকারবারী, বনদস্যুদের নির্মূল করতে হবে। পাশাপাশি বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনিরাপদ হয়ে পড়ছে সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য। জলবায়ু পরিবর্তন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উচ্চ জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও মনুষ্যসৃষ্ট দূষণসহ নানা ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাদাবন (ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট) সুন্দরবন ও বনের জীব-বৈচিত্র্যকে।
সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাসে ১৩৪টি মৃত হরিণ ও চারটি বন্য শুকরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, সুন্দরবন বন বিভাগের মতে, বন্যপ্রাণী মৃতের সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি হবে। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের পর বঙ্গবন্ধুর চর, পুটনির চরসহ গহীন সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন বন এলাকায় বন বিভাগের কর্মীরা যেতে পারেনি।
তাদের মতে, গত ২৬ মে ভোরে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর চর, পুটনির চরসহ সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর অংশে ২০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। এতে বহু হরিণ সাগরে ভেসে গেছে। যার খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওগুলো পচে-গলে পানিতে মিশে গেছে। উদ্ধার করা মৃত বন্যপ্রাণীগুলো মূলত-সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী, দুবলা, নীলকমল, আলোরকোল, ডিমের চর, পক্ষীর চর, জ্ঞানপাড়া, শেলার চর এবং বিভিন্ন নদী-খাল থেকে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। এর আগে ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর একটি বাঘ ও ২৭টি হরিণের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর তিনটি হরিণ ও একটি বন্য শুকরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের প্রাণীর মৃত্যুর কোনো খতিয়ান নেই।
বন-জীবীরা জানান, প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনের গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে এবারই ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনের গাছপালার চেয়ে বন্যপ্রাণীর ক্ষতি বেশি হয়েছে।
বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার কর্মকর্তা মফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, এবারের ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের গাছপালার চেয়ে পশুপাখির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। সুন্দরবনের যেসব জায়গা উঁচু তা সর্বোচ্চ আট ফুট। অথচ সেখানে পানি উঠেছিল ১০-১২ ফুট। টানা ৩৬-৩৭ ঘণ্টা পুরো সুন্দরবন লবণপানির নিচে ছিল। এর আগে এ রকম জলোচ্ছ্বাস সুন্দরবনে কখনো হয়নি। যা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকির বিষয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাণী বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এম এ আজিজ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে এখন যে অভিঘাত হচ্ছে, এগুলো ধীরে ধীরে বাড়বে। উচ্চ জলোচ্ছ্বাস ছাড়াও আমরা যে অসুবিধাগুলো দেখছি, সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকা ভেঙে যাচ্ছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা অঞ্চলের সুন্দরবন। সাতক্ষীরা থেকে মান্দারবাড়ী হয়ে দুবলারচর, কটকা পর্যন্ত অনেক এলাকা ভেঙে যাচ্ছে। এটা সুন্দরবনের জন্য দৃশ্যমান ক্ষতি হচ্ছে।

জন্মভূমি ডেস্ক December 9, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article কয়রায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস পালন
Next Article সাতক্ষীরা নবাগ্ত পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
সাতক্ষীরা

বিপন্ন উপকূল, দিশেহারা মানুষ, কে শুনবে দুঃখ

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago
সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

By জন্মভূমি ডেস্ক 15 hours ago
খুলনা

ডুমুরিয়ায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

By জন্মভূমি ডেস্ক 19 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

বিপন্ন উপকূল, দিশেহারা মানুষ, কে শুনবে দুঃখ

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago
সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

By জন্মভূমি ডেস্ক 15 hours ago
জাতীয়তাজা খবর

যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে

By জন্মভূমি ডেস্ক 21 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?