জন্মভূমি ডেস্ক : চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় চাকরির জন্য টাকা দিয়ে নিঃস্ব আব্দুল্লাহ আল মামুন। টাকার অভাবে ছয়মাসের মেয়ে ফাইরা জেরিনের চিকিৎসাও করাতে পারেননি তিনি। গত বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আব্দুল্লাহ আল মামুন উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের কয়রাডাঙ্গা গ্রামের স্কুলপাড়ার বাসিন্দা।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চুয়াডাঙ্গা শহরে ‘বিগ বাজার’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। এরমধ্যে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য অলোক কুমার ঘোষের সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তিনি সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট দুই লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে তাকে টাকা দিই। এরপর থেকে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। চাকরিও দেননি আবার টাকা ফেরতও দেয়নি। টাকা চাইলে উল্টো আমাকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার ৬ মাস পর আমার মেয়ে জন্ম নেয়। জন্মের পর তার হার্টে ছিদ্র দেখা দেয়। চিকিৎসার জন্য আমি অলোক কুমার ঘোষের কাছে টাকা চাইলেও তিনি দেননি। আত্মীয়-স্বজনরা কিছুটা সহযোগিতা করলেও অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল মেয়ের চিকিৎসার জন্য। টাকার অভাবে মেয়েকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। অলোককে বারবার জানালেও তিনি টাকা দেননি। বৃহস্পতিবার সকালে মেয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর মেয়ে আমার দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, অলোক কুমার ঘোষ মেহেরপুরে এপিবিএনের নায়েব হিসেবে কর্মরত অবস্থায় এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করবেন- এমন আশ্বাসে ছয় বছরের এক সন্তানের মাকে স্বামীকে তালাক দেওয়ান। এরপর বিয়ে ছাড়াই স্বামী-স্ত্রীর ভুয়া পরিচয়ে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা গুলশানপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে ৯ মাস বসবাস করেন। ওই নারী বিয়ের জন্য চাপ দিলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং সেটি মামলা পর্যন্ত গড়ায়। এরপর ২০২১ সালের মে মাসে ওই নারী দামুড়হুদা মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলোক কুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সাংসারিক কাজের জন্য দুই লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। চাকরি দেওয়ার নামে কোনো নেইনি টাকা। আমার নিকট এভিডেন্স আছে। আগামী ২৭ আগস্ট টাকা ফেরত দিয়ে দেব।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার গোপীনাথ কান্দিলাল বলেন, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-৩ এ কর্মরত থাকাকালীন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনায় অলোক কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করি। তদন্তে জানতে পারি, তিনি প্রথমে চুয়াডাঙ্গায় একটি মুসলিম মেয়ের সঙ্গে বিবাহ করেন। নাম পালটে সবুজ নাম রাখা হয়। আমার তদন্তে বিভিন্নজনের নিকট থেকে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য উঠে আসে। তিনি কখনো জজের বডিগার্ড, কখনো পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর, কখনো এসপি পরিচয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এমনকি আমাদের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গেও প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।