# হত্যাকান্ডের আগে বাহাউদ্দিন নেপালে যায়
# উচ্চ আদালতে রিট করে গ্রেফতার এড়ায়
# সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন, শুনানি কাল
জন্মভূমি রিপোর্ট
বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা খান মোঃ জাকির হোসেনকে হত্যাকাÐের প্রায় ১০ বছর পর সন্দেহভাজন অর্থযোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারী মোঃ বাহাউদ্দিন খন্দকার (৪৮) গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই এর একটি টিম সোমবার রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন বয়রা এলাকার মৌ মার্কেটের দ্বিতীয় তলা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
আসামি বাহাউদ্দিন হরিনটানা থানা এলাকার রায়েরমহল বাউন্ডারি রোডের বাসিন্দা। তিনি ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে।
পিবিআই খুলনা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আসামি বাহাউদ্দিন এ হত্যাকাÐের মাস্টারমাইন্ড। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে জাকিরকে খুন করায়। মঙ্গলবার দুপুরে পিবিআই কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, হত্যাকাÐের দুই দিন আগে আসামি নেপাল চলে যায়। খুনের ঘটনার পাঁচ দিন পর সে দেশে ফিরে আসে। এটা ছিল তার একটি কৌশল। এরপর উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি না করার জন্য একটি মিস পিটিশন দাখিল করে। সে তার আবেদনের স্বপক্ষে আদালতের আদেশের মেয়াদ বর্ধিত করে আসছিল। যা প্রায় গত বছর ধরে চলে। পিটিশনটির দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ১৪ ডিসেম্বর নিষ্পত্তি হয়। নিষ্পত্তির আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাÐে জড়িত অপর আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
এসপি মুশফিকুর বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি হত্যাকাÐে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সে বলেছে- নিহত জাকিরের তৃতীয় স্ত্রী ফিরোজার বিয়ের আগে থেকেই তার সাথে হৃদয় ঘটিত সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরেও তাদের যোগাযোগ ছিল। বিষয়টি টের পেয়ে জাকির একদিন বাহাউদ্দিনকে মারপিট করে। এতে সে ক্ষুব্ধ হয়। এছাড়া দলিল লেখক সমিতির আভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে আসামি তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
২০১২ সালের ২০ মে সন্ধ্যায় কেসিসি মার্কেটস্থ চেম্বারের তালাবন্ধ করে দলিল লেখক সমিতির যুগ্ম মহাসচিব জাকির বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হেলমেট পরিহিত দু’ আততায়ী সেখানে এসে তার নাম জিজ্ঞাসা করে। নাম বলা মাত্রই তাদের একজন পিস্তল বের করে তাকে গুলি করে। ঘটায়- বোমা বিস্ফোরণ। দু’-তিনটি মোটর সাইকেলে ঘাতক দলের অন্য সদস্যরা জেলা পরিষদের সামনের সড়কে অপেক্ষা করছিল। তারা ওই দু’জনকে নিয়ে অকুস্থল ত্যাগ করে। যাবার আগে ওই রাস্তায় তারা আরও একটি বোমা ফাটায়। মামলার নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ২২ মে নিহতের স্ত্রী জামিলা বেগম অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
থানা-পুলিশ, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি’র কয়েকজন কর্মকর্তা দীর্ঘসময় ধরে মামলার তদন্ত করেন। সর্বশেষ সিআইডি ইন্সপেক্টর মীর আতাহার আলী সকল আসামিকে মামলার দায় হতে অব্যাহতির জন্য আদালতে আবেদন করেন। তখন ভিকটিম পরিবারের পক্ষ থেকে সেই পুলিশ রিপোর্টের বিরুদ্ধে না-রাজি দরখাস্ত দাখিল করা হয়। শুনানি শেষে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই এর উপর দায়িত্ব অর্পণ করেন। মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) বলছেন, পূর্ববর্তী সকল তদন্ত কর্মকর্তাই হত্যাকাÐের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে বাহাউদ্দিনকে চিহ্নিত করে গেলেও উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার ও হয়রানি না করা সংক্রান্ত আদেশের মেয়াদ বার-বার বর্ধিত জনিত কারণে তাকে আইনের আওতায় আনতে পারছিলেন না।
(আইও) পিবিআই উপ-পরিদর্শক পলাশ চন্দ্র রায় বলেন, হত্যাকাÐের মূল রহস্য উদঘাটন, ঘাতকদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে গ্রেফতারের চেষ্টায় আসামিকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
আদালতের এক কর্মকর্তা বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে আসামি বাহাউদ্দিনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর অতিঃ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুমি আহমেদ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আগামী ১০ মার্চ রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য আদালত দিন ধার্য করেছেন।
কত টাকার বিনিময়ে ঘাতকদের ভাড়া করা হয়েছিল? কিলিং মিশনে কতজন অংশ নিয়েছিল? তাদের কাছে কি পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক ছিল? ঘাতক চক্রের শেল্টার কারা দিয়েছিল? আসামিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেলে এসব প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা চলবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, এর আগে হত্যাকাÐে জড়িত সন্দেহে রেজাউল করিম বাবলু (৫৫), শেখ আলমগীর হোসেন (৩৫), শেখ আজিম উদ্দীন (৩৬), মোঃ জামির হোসেন ওরফে জামির শেখ (৪৩), জহিরুল ইসলাম ওরফে লাল্টু (৩৬), শেখ হাসান (৪৮) এবং মোঃ ফারুক হোসেন গ্রেফতার হয়। তারা সবাই জামিনে আছেন। আসামি লাল্টু জামিনে মুক্তির পর পালিয়েছেন।
চাঞ্চল্যকর জাকির হত্যা মামলা প্রায় ১০ বছর পর মাস্টার মাইন্ড বাহাউদ্দিন গ্রেফতার
Leave a comment