জন্মভূমি ডেস্ক : জনগণ এখন এই সরকারের পতনের দিন গুনছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে ফরিদপুর বিভাগীয় রোডমার্চের পথসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবি ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগ এ রোডমার্চের আয়োজন করে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা এখন হাটে মাঠে ঘাটে যেখানেই যাই সবাই জিজ্ঞেস করে ‘আর কয়দিন?’ এর মানে কী? মানে হলো এই সরকারের পতন হয় না কেন, এই সরকার আর কয়দিন ক্ষমতায় থাকবে? জনগণ এখন এই সরকারের পতনের দিন গুনছে। অনেকে ঘণ্টাও গুনছে।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ধানাই-পানাই অনেক করেছেন আর করতে দেওয়া হবে না। দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে এই গোলাপগঞ্জ-ফরিদপুরেই আওয়ামী লীগ অনেক সিট পাবে না। এই অঞ্চল থেকে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাদের সাথে কেউ নেই। দেশেও নেই, বিদেশেও নেই।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে যা দেখিয়েছে আমি এর নাম দিয়েছি ভোট চুরির প্রকল্প। নির্বাচনে জিততে এই ভোট চুরির প্রকল্পই তার একমাত্র ভরসা। শেখ হাসিনার এই ভোট চুরির প্রকল্পে দুর্নীতিবাজ দলীয় কিছু কর্মকর্তা আছেন, আছেন দলীয় কিছু পুলিশ, লুটেরা ব্যবসায়ী ও কতগুলো রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই সরকারকে আমি সরকার মনে করি না। এটা একটা ‘রেজিম’। এই সরকার নতুন করে এবার আরেকটা ভোট চুরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু এবার তারা সফল হবে না। বিদেশের যে গণতান্ত্রিক দেশগুলো আছে, এমনকিও জাতিসংঘও বলছে বাংলাদেশে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। অতএব তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিদেশিরা তো আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলবে না।
আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে আমীর খসরু বলেন, এই ভিসা নীতিতে তাদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছে। কার ভিসা ক্যান্সেল হয়,কার পরিবারকে দেশে পাঠিয়ে দেয় তারা এখন সেই চিন্তায় আছে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, দেশে আমরা যখন কোনো সভা সমাবেশ করতে চাই, তার প্রায় জায়গাতেই সরকার দলীয় গুন্ডারা হামলা চালানোর পাঁয়তারা করে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি যদি এভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান তাহলে এর সকল দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে।
পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নায়াব ইউসুফ প্রমুখ।
এই পথসভায় অন্তত ১৫০টি পিকআপ, ১০০টি মাইক্রোবাস ও দুই শতাধিক মোটরসাইকেলে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। পথসভা চলাকালে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এলাকায় গাড়ি চলাচল করে অত্যন্ত ধীরগতিতে। পথসভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোডমার্চের শুরু হয়। রাজবাড়ীর বসন্তপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে রোডমার্চের বহরটি দুপুর ২টার দিকে ফরিদপুরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে এসে অতিথিদের বক্তব্যের পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ধরে বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমার মোড়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এরপর ওই একই মহাসড়ক ধরে মাদারীপুরের দিকে আগাবে রোডমার্চের বহর। পথে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বরইতলা মোড়ে পথসভা করবে বিএনপি। সেখান থেকে মাদারীপুর জেলার মস্তফাপুর মোড়ে পথসভা শেষে মাদারীপুর শহর হয়ে শরীয়তপুর স্টেডিয়াম অভিমুখে আগাবে রোডমার্চের বহর। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রোডমার্চের বহর পৌঁছানোর পর স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হবে সমাবেশ। সেখানেই এই রোডমার্চের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।