By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: জলবায়ু বিপর্যয়ে অস্তিত্ব সংকটে শামুক ঝিনুক পাচার হলে মুন্ডারা ‌খাবে কি
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ALL E-Paper
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > জলবায়ু বিপর্যয়ে অস্তিত্ব সংকটে শামুক ঝিনুক পাচার হলে মুন্ডারা ‌খাবে কি
তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলবায়ু বিপর্যয়ে অস্তিত্ব সংকটে শামুক ঝিনুক পাচার হলে মুন্ডারা ‌খাবে কি

Last updated: 2025/12/05 at 3:51 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 3 weeks ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : অস্তিত্ব সংকটের মুখে আছে সুন্দরবন-সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও তালা উপজেলায় মুন্ডা সম্প্রদায়। জায়গা-জমি থেকে শুরু করে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি পর্যন্ত হারাতে বসেছে তারা। একসময় অনেক জমি থাকলেও এখন তাদের বেশিরভাগই ভূমিহীন। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে হুমকিতে পড়েছে তাদের উপকূলীয় জীবন-জীবিকা ও ভাষা-সংস্কৃতি। বর্তমানে জলবায়ুর বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধ করে টিকে আছে তারা।
শ্যামনগরের রমজাননগরের সুন্দরবন সংলগ্ন কালিঞ্চি নদীর পাড়ে বসেছিলেন ৭৯ বছর বয়সী রনজিত মুন্ডা। নিজেদের বর্তমান জীবন সংগ্রামের কথা জানিয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের আসল বাড়ি রাঁচি। জমিদাররা এনে সুন্দরবন পরিষ্কার করিয়েছিল। তখন বাঙালিরা বলতো, মুন্ডা পরিচয় দিও না, সরদার পরিচয় দিও। এমনিভাবে এখানে থেকে গেলাম। আমাদের বাপ-দাদারা সুন্দরবনের জঙ্গল কেটে বসতি গড়ার কাজ করতেন। সেই সময় থেকেই এই অঞ্চলে টিকে থাকার যুদ্ধ শুরু আমাদের। এখন তো আমাদের জীবন ব্যবস্থাটাই হুমকিতে পড়ে গেলো। উপকূলের নদী-পানি ও মাটিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। জুংড়া ফসল হয় না। কচ্ছপ, কুঁচিয়া, শামুক কিছুই পাওয়া যায় না। ঘরবাড়ি প্রতি বছর বন্যা নিয়ে যায়।’
রনজিতের মতোই বদলে গেছে মুন্ডাদের জীবনচিত্র। সুন্দরবন ঘিরে গড়ে ওঠা সম্প্রদায়টি পড়েছে জীবন-জীবিকার হুমকিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় এসব মানুষের জীবন নানাভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে সুপেয় পানির সংকট, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও কৃষিজমি নষ্ট হওয়া। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের (যেমন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস) কারণে জীবন-জীবিকার ওপর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে তাদের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আগে প্রধান খাবার ছিল ইঁদুর, শামুক, জুংড়া। এখন বাধ্য হয়ে বাঙালিদের মতো ডাল-ভাত ও ভর্তা খেতে হয়
পরিবেশবিদদের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন, উপকূলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণে মুন্ডা জনগোষ্ঠীর ৯৫ শতাংশ পরিবার এখন খাদ্য এবং জীবিকার সংকটে ভুগছে। গত এক দশকে অন্তত চারটি বড় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে জীবন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কঠিন রূপান্তরের মুখোমুখি হয়েছে তারা।
গবেষণা অনুযায়ী, মুন্ডা সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষদের ব্রিটিশ আমলে রাঁচি থেকে এনে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল পরিষ্কার করানো হয়। নদীর তীরে ছোট ছোট গ্রাম গড়ে ওঠে। নদীর পাড়ে বাঁধ তৈরি হয়। পাশাপাশি চাষাবাদ শুরু হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই বসতি এখন জলবায়ুর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।
সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার (সামস) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় আড়াই শ বছর আগে ভারতের ঝাড়খন্ড এলাকা থেকে মুন্ডাদের এই অঞ্চলে আনা হয়। সুন্দরবন কেটে আবাসভূমি গড়ে তোলার কাজে নিযুক্ত করা হয় তাদের। বর্তমানে শ্যামনগর ও তালা উপজেলায় প্রায় ৫০০-৫৫০টি মুন্ডা পরিবার আছে। তাদের জনসংখ্যা প্রায় চার হাজার। এসব পরিবারের ৯৫ শতাংশ ভূমিহীন। অশিক্ষা, অজ্ঞতা ও অভাবকে পুঁজি করে ভূমিদস্যুরা তাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে। সুন্দরবনে মাছ ধরে এবং শামুক সংগ্রহ এবং কৃষিকাজ করে জীবন চলে।
আইলা, আম্পান, রেমাল, নার্গিস ও সিত্রাংসহ প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় মুন্ডা গ্রামগুলোতে আঘাত হানায় আগের চেয়ে আরও দুর্বল করেছে তাদের জীবনযাত্রা। ঘরবাড়ি ধসে গেছে, বাঁধ ভেঙেছে, পানির উৎস নোনা হয়ে গেছে। এই জনগোষ্ঠীর গ্রামীণ সংস্কৃতির বড় আয়োজন ছিল কারাম উৎসব। একসময় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকঢোল, করতাল আর মাদল তালে মেতে উঠতেন মুন্ডা তরুণ-তরুণীরা। হতো নাচ-গান, পূজা ও খাওয়া-দাওয়া, যা চলতো গভীর রাত পর্যন্ত। এখন সে উৎসব নেই, শুধু গল্প হয়ে বেঁচে আছে স্মৃতিতে। তাদের ভাষ্যমতে, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বাঁধভাঙা নোনাপানির ঢেউয়ে ডুবে যায় উৎসবের মাঠ, উঠান আর বেদি। জমির লবণাক্ততা এমনভাবে জমে বসে, যে কারামগাছ আর বাঁচে না। এজন্য উৎসবও আর হয় না। এভাবে আরও অনেক কিছু জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তাদের। এখন প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়।
আছে নিরাপদ পানি সংকট, কয়েক মাইল দূর থেকে আনতে হয়
কালিঞ্চি নদীর পাড়ের বাসিন্দা দিপালী রানী মুন্ডা বলেন, ‘ঘর বানাইলে ঝড় এসে নিয়ে যায়। নোনাপানি ঢুকলে ফসল হয় না। জীবিকার তাগিদে নদীতে নামতে হয়। কিন্তু আগে যা পেতাম এখন অর্ধেকও পাই না। নোনাপানির কারণে ধান, পাট, শাকসবজি কমে গেছে। মাঠের কাজও কমে গেছে। এখন নদী-খাল-বনে নির্ভরতা বেড়েছে। কিন্তু সেখানেও জীববৈচিত্র্য কমে যাওয়ায় আগের মতো কিছু পাওয়া যায় না। নিষেধাজ্ঞাকালে নদীতে নামতে দেয় না। বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থাও নাই। খাবার পরিষ্কার পানিও নাই। টিউবওয়েলের পানি লবণাক্ত। নোনাপানির কারণে শরীর জ্বালাপোড়া করে। চর্মরোগে ভুগতে হয়।
মুন্ডাপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী খাবার তালিকায় ছিল; ইঁদুর, কচ্ছপ, শামুক, জুংড়া, কুঁচিয়া, বুনো মাছ, গঙ্গামাছ, ঘাসফড়িং ও বনশাক। কিন্তু জলবায়ুর প্রভাবে উপকূল ও নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় এসব প্রাণী দ্রুত কমে গেছে। এখন খুবই কম পাওয়া যায়। আবার কোনোটি পাওয়াই যায় না।
মুন্ডাপাড়ার বাসিন্দা সবিতা রানী মুন্ডা বলেন, ‘প্রধান খাবার ছিল ইঁদুর, শামুক, জুংড়া। এখন আর এগুলো পাই না। নদীতে গেলে নোনাপানি, জঙ্গলে গেলে নিষেধাজ্ঞা। বাধ্য হয়ে বাঙালিদের মতো ডাল-ভাত ও ভর্তা খেতে হচ্ছে। আমাদের সাদরি ভাষাও হারিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চারা আর শিখতে চাইছে না। বাঙালিদের সঙ্গে মিশে এখন বাংলা ভাষাই শিখছে আমাদের সন্তানরাও। এখন আগের অবস্থা নেই। আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করছে, প্রশিক্ষণ পাচ্ছে, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিও পাচ্ছে। সামাজিক বৈষম্য কিছুটা দূর হয়েছে। তবু মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আমরা এখনও পুরো মাত্রায় নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারিনি।’
গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা এটিকে শুধু খাদ্য সংকট নয়, পরিচয়ের সংকটও বলছেন। কারণ ঐতিহ্যগত খাবার হারানো মানে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সংস্কৃতি স্থানান্তর বন্ধ হয়ে যাওয়া।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে হুমকিতে পড়েছে তাদের উপকূলীয় জীবন-জীবিকা ও ভাষা-সংস্কৃতি।
মুন্ডাদের মাতৃভাষা ‘সাদরি’। কিন্তু স্থানীয় স্কুলগুলোতে বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা পড়ানোর পরিবেশ নেই বললেই চলে। ফলে শিশুরা স্কুলে গিয়ে ভাষাগত সমস্যায় পড়ে। অনেক শিশু কিছু দিন পর ঝরে যায়।
এমনটি জানিয়েছেন কালিঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধনঞ্জয় কুমার বৈদ্য। তিনি বলেন, ‘মুন্ডা শিক্ষার্থীরা সাদরি ভাষায় কথা বললে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বোঝে না। সে কারণে তারা বাধ্য হয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাদের জন্য আলাদা বই এবং শিক্ষক নিয়োগ করা যায় কিনা সেই বিষয়টি সরকার ভেবে দেখতে পারে। তা হলে তাদের ভাষাটা টিকে থাকবে। আমাদের শিশুরা আগে মুন্ডা শিশুদের সঙ্গে মিশতে চাইতো না। এখন মুন্ডা শিশুরা বাংলায় কথা বলে। আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে।’
ভাষার এই বিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ভাষার এই বিবর্তন মানেই তারা অস্তিত্ব সংকটে আছে। ব্রিটিশ আমলে সুন্দরবন অঞ্চল আবাদ উপযোগী করতে জমিদাররা রাঁচি থেকে তাদের এখানে এনে বসতি গড়ে তোলে। জঙ্গল কাটতে, বাঁধ নির্মাণ করতে এবং অনাবাদি জমি আবাদে তাদের ব্যবহার করা হতো। উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসতি স্থাপনের শুরু থেকেই তারা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জমিজমা হারানো এবং বদলে যাওয়া জলবায়ুর প্রভাবের কারণে ক্রমাগত সংকটে পড়ে গেছেন।’
নোনাপানিতে কাজ, দীর্ঘ সময় হাঁটু–কোমর ডুবিয়ে শামুক, জুংড়া সংগ্রহ করায় নারীরা ত্বক ও শারীরিক সমস্যায় বেশি ভোগেন। ঘর ভাঙা, জলাবদ্ধতা ও স্যানিটেশন সংকটেও তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে জলবায়ুর বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধ করে টিকে আছে তারা
রুনু বালা মুন্ডা বলেন, ‘ঘরবাড়িতে জল উঠলে টয়লেট থাকে না। বাচ্চাদের নিয়ে খুব বিপদে পড়তে হয়। মেয়েরা স্কুলেও ঠিকমতো যেতে পারে না। বছরের বেশিরভাগ সময়ে অসুস্থ অবস্থায় কাটাতে ।
জীবিকার তাগিদে নতুন পথে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে মুন্ডাদের। লুই পাজ্জি মুন্ডা ও কৃষ্ণপদ মুন্ডার মতো তরুণরা শিক্ষিত হয়ে এনজিও, স্কুল বা সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত হয়েছেন। কেউ কেউ গরু-ছাগল পালন, হাঁস-মুরগি, এমনকি ছোট ব্যবসা শুরু করেছেন। সরকারি সহায়তায় কিছু পরিবার আধাপাকা ঘরও পেয়েছে।
তবে অধিকাংশেরই ঘর বাঁশ-টিনের। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা একেবারেই অল্প কিছু পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু পরিষদের সদস্যসচিব ও পরিবেশবিদ অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহী বলেন, ‘মুন্ডাদের শুধু নিজস্ব খাবার, ভাষা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন হচ্ছে না; তাদের আচার-আচরণেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আগে নিজেদের মধ্যে দলনেতা ঠিক করতো, এখন সেই প্রথা নেই। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী ও শিশুরা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষির ধরন বদলে যাওয়ায় তাদের কাজেও পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তিত পারিপার্শ্বিক চাপ তাদের মূল জীবন-জীবিকাকে সরাসরি আঘাত করছে।’
সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার (সামস) নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণপদ মুন্ডা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের জনগোষ্ঠী পাঁচটি বিষয়ে সমস্যায় পড়ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং ভেষজ চিকিৎসা। আগে কেউ অসুস্থ হলে প্রথমে কবিরাজের মাধ্যমে গাছ-গাছড়ার চিকিৎসা দেওয়া হতো, পরে প্রয়োজন হলে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে নেওয়া হতো। ঔষধি গাছ-গাছালি লবণাক্ততার কারণে মারা যাওয়ায় খাবার এবং ভেষজ চিকিৎসা এখন পাওয়া যায় না। ওষুধ তৈরি করাও যাচ্ছে না।’
হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী উৎসবও
তিনি বলেন, ‘কারাম উৎসব মূলত কারামগাছের ওপর নির্ভরশীল। আইলার পর জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার কারণে গাছগুলো মরে গেছে। সর্বশেষ কয়রায় যে একটি গাছ বেঁচে ছিল, সেটিও একই কারণে মারা গেছে। এজন্য কারাম উৎসব হারিয়ে গেছে। একইভাবে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। আগে মুন্ডারা আলাদাভাবে, নিরিবিলি ও বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করতো। কিন্তু এখন হিন্দু-মুসলমান সবার সঙ্গে বসবাসের কারণে সংস্কৃতি চর্চা আগের মতো করা যাচ্ছে না। ঐতিহ্যবাহী খাবার শামুক, ঝিনুক ও জুংড়া পাওয়া যাচ্ছে না। যা কিছু পাওয়া যায়, তা আবার রফতানি হচ্ছে। আগে যেগুলো আমরা খেতাম, এখন অন্যরাও তা খাচ্ছে। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ দেখছি না।’

সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক সায়েদুর রহমান মৃধা বলেন, ‘মুন্ডা জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু ঝুঁকি, লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড় এবং জীবিকার সীমাবদ্ধতার কারণে বহুমুখী বঞ্চনার মধ্যে আছে। বিশেষ করে সুন্দরবন ঘেঁষা এলাকায় বসবাস করায় জীবন-জীবিকার চ্যালেঞ্জ অন্যদের তুলনায় বেশি। খাদ্য, নিরাপদ পানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবায় সীমাবদ্ধতা তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদফতর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় বিভিন্ন ভাতা সুবিধা, বাসস্থান সহায়তা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কর্মসূচি এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। মুন্ডা জনগোষ্ঠীর সঠিক তথ্যভান্ডার তৈরির উদ্যোগ আমরা নেবো। যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়। স্থানীয় প্রশাসন, এনজিও, গবেষক এবং জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে চাই। যাতে তাদের অধিকার, পরিচয়, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও জীবনমানের উন্নয়ন হয়।’এদিকে সুন্দরবন সহ উপকূলের নদ-নদী থেকে নিয়মিত পাচার হচ্ছে শামুক ঝিনুক যার কারণে একদিকে জীববৈচিত্রের উপর হুমকি হয়ে পড়েছে অন্যদিকে মন্ডা সম্প্রদায় খাদ্য থাকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে সুন্দরবন থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার টন শামুক ঝিনুক। পাচার হয়ে দেশের চাহিদা মিটে বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে। শামুক-ঝিনুক সংগ্রহের এ ধারা শুধু বনসম্পদ নয়, দেশের সামগ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও গুরুতর হুমকির সৃষ্টি করছে। সংঘবদ্ধের সাথে যারা জড়িত তারা রাতা রাতে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে।
উপকূলের অধিকাংশ মানুষই জানে না শামুক ঝিনুক পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী একটি প্রাণী।সুন্দরবনে ২৬০ প্রজাতির প্রাণী আছে তার মধ্যে শামুক ঝিনুক অন্যতম। প্রতিনিয়ত অবৈধ ভাবে আহরণের কারণে অনেক প্রাণী সুন্দরবন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। শামুক ঝিনুক সুন্দরবনের নদীর তলদেশের মাটির ভারসাম্য রক্ষায় সহযোগিতা করে।
পরিবেশবিদ অধ্যক্ষ আশেক এলাহী জানান, শামুক ঝিনুক পরিবেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাণী। শামুকের চলাফেরার কারণে মাটির গুণগত মান বজায় থাকে। মাটির উর্বরতা ঠিক থাকে।পাশাপাশি সুন্দরবনের নদীতে বসবাসরত মাছের খাদ্য তৈরি কাজে সহায়তা করে। সুন্দরবনে পটাশিয়ামের যোগান দিয়ে থাকে।
সুন্দরবনের ভিতরে যা কিছু আছে সব কিছু নিয়েই সুন্দরবন সুতরাং সুন্দরবনকে রক্ষিত রাখতে কোন প্রাণী ধরা ঠিক না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। লেখক গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন শামুক ঝিনুক এরা পানির গুণগত মান বজায় রাখতে সহায়ক এবং নদীর তলদেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।কিন্তু ব্যাপক হারে এদের নিধন নদী জীববৈচিত্র্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নদী, খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে শামুক ও ঝিনুক কুড়িয়ে নেওয়া বা পরিবহন করা নিষিদ্ধ।
এসব প্রাণী পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) ও জলজ সম্পদ সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ এর আওতায় দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরার  রেন্জ পচ্শিম সুন্দরবনে পশুরতলা খাল, কৈখালীর মাদার নদী ও জয়াখালীর খাল, বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে অবৈধ শামুক ও ঝিনুক।
এলাকার কিছু ব্যাবস্যায়ীএগুলো ১৫ টাকা দরে কিনে ৮০ টাকা দরে পদ্মা হ্যাচারিতে বিক্রি করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে নদী সীমান্ত পথে এসব জলজ প্রাণী ভারতে পাচার করা হয়ে থাকে। এই শামুক ঝিনুক চক্রকে ঠেকাতে বন বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানা যায়। আগস্ট মাসের শুরু দিকে পার্ক সংলগ্ন মালঞ্চ নদী থেকে শামুক ও ঝিনুক ভর্তি নৌকা জব্দ করেছে মুন্সিগঞ্জ ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির সদস্য ও নৌ পুলিশ। এর কিছুদিন পরে বন বিভাগের কদমতলা স্টেশন থেকে দশ বস্তা সামুক ঝিনুক উদ্ধার করে নদীতে ছেড়ে দেন।
শ্যামনগর উপজেলার পরিবেশকর্মী  শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু অভিযান চালিয়ে নৌকা জব্দ করলেই হবে না। এ চক্রের মূলব হোতারা কোথা থেকে পরিচালনা করছে তা খুঁজে বের করতে হবে। সুন্দরবন ও উপকূল রক্ষা করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ফজলুল হক বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি । শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ ও পাচার সরাসরি নদী সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের লঙ্ঘন। অভিযুক্তদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া এ ধরণের অপরাধ দমন করতে স্থানীয়দের সহযোগিতাও প্রয়োজন। পাচার চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বন বিভাগ কাজ করছে।

জন্মভূমি ডেস্ক December 5, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article ডুমুরিয়ায় এক ঘন্টার দুধের হাট বিক্রিয়‌ হয় লক্ষ লক্ষ টাকা
Next Article বটিয়াঘাটায় জামায়াতের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
ঝিনাইদাহ

ঝিনাইদহ-৪ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মুর্শিদা জামান বেল্টু

By জন্মভূমি ডেস্ক 22 minutes ago
আন্তর্জাতিক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে ১৫ হাজার ‘শক্তিশালী’ পুলিশ মোতায়েন

By জন্মভূমি ডেস্ক 23 minutes ago
রাজনীতি

সরকারের ব্যর্থতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হয়েছে : মির্জা ফখরুল

By জন্মভূমি ডেস্ক 24 minutes ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

কলারোয়ায় হামিদপুর লিল্লাহ বোডিং এর নামে টাকা তুলতে গিয়ে ৩ প্রতারক আটক

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
জাতীয়তাজা খবর

একনেকে ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

By জন্মভূমি ডেস্ক 2 hours ago
সাতক্ষীরা

বিপন্ন উপকূল, দিশেহারা মানুষ, কে শুনবে দুঃখ

By জন্মভূমি ডেস্ক 7 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?