By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: জলবায়ুর ক্ষত বহন করছেন উপকূলের ৪০‌লাখ নারীরা
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ALL E-Paper
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > জলবায়ুর ক্ষত বহন করছেন উপকূলের ৪০‌লাখ নারীরা
তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলবায়ুর ক্ষত বহন করছেন উপকূলের ৪০‌লাখ নারীরা

Last updated: 2025/12/07 at 2:35 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 2 weeks ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌: জলবায়ুর ক্ষত বহন করছে বাংলাদেশের উপকূলের ১৫জেলার ১৪৩ উপজেলার ৪০ লাখ নারী ‌। লবণাক্ততার কারণে জরায়ু ‌‌সংক্রান্ত রোগ সহ নারী গঠিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এই সমস্ত নারীরা ‌। এই সমস্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারে মারা গেছেন আর অধিকাংশ নারীরাই এই রোগ নিয়ে জীবনের সাথে যুদ্ধ করছেন ‌। অভিমত বিশেষজ্ঞদের ‌। উপকূলের লবণাক্ততা জেলাগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরা ,খুলনা, বাগেরহাট ,পিরোজপুর, ঝালকাঠি ,বরগুনা , পটুয়াখালী ‌,বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষীপুর ,ফেনী, নোয়াখালী ,চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ‌।আমাজনের নিঃশ্বাসে ভেজা ব্রাজিলের বেলেমে, ‘নারীর জলবায়ু-প্রণোদিত স্বাস্থ্যঝুঁকিকে অভিযোজন পরিকল্পনার কেন্দ্রে না রাখলে বৈশ্বিক অঙ্গীকার অর্ধেকই অপূর্ণ থেকে যাবে।’ এই সতর্কবার্তাই গত সোমবার ব্লুজোন জুড়ে আলোচনার সুর। এক গবেষণাচিত্রে জলবায়ুর অভিঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় নারীদের শরীরে যে ক্ষতচিহ্ন ফুটে উঠছে, তা যেন গোটা সম্মেলনকেই নাড়িয়ে দেয়। সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড (বিএফটিডব্লিউ) এবং হেক্স/ইপিআর-এর যৌথ আয়োজনে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় উঠে আসে সবচেয়ে উদ্বেগজনক চিত্র।
সিপিআরডির গবেষক শেখ নূর আতায়া রাব্বি বলেন, বাংলাদেশের উপকূলের ৪০০ প্রজননক্ষম নারীর ওপর করা সমীক্ষায় দেখা গেছে লবণাক্ততার কারণে তাদের পিআইডি বা পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২.৩ গুণ বেশি। পাশাপাশি বেড়েছে অনিয়মিত ঋতুচক্রে ভোগা নারীর সংখ্যা। এছাড়াও গর্ভকালীন জটিলতা, যৌন সংক্রমণ, গর্ভপাত, অকাল প্রসব বাড়ছে উপকূলের নারীদের মধ্যে। রাব্বির কণ্ঠে ক্ষোভ, ‘জলবায়ুর প্রভাব যত বাড়ছে, উপকূলের নারীর শরীর তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার পাতায় নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো কথা লেখা নেই। নেই জলবায়ু অর্থায়নের নথিতেও।’
আলোচনায় আরও অংশ নেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল, গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক ড. জেনি মিলার, ইউএন ইউনিভার্সিটির ফেলো ড. বিশ্বজিৎ চিতলে, পরিবেশ অর্থনীতিবিদ ড. শৌর্য দাশগুপ্ত এবং রিজেনারেট আফ্রিকার জেন্ডার-হেলথ লিড নাকুয়া নিয়োনা কাসেকেন্দেসহ আরও অনেকে। আলোচনায় সবার সুরই এক নারীর স্বাস্থ্যকে কেন্দ্রে না রাখলে অভিযোজন ব্যবস্থা ভঙ্গুরই থেকে যাবে। লিঙ্গভিত্তিক স্বাস্থ্য উপাত্ত সংগ্রহ, জলবায়ু-সহনশীল নজরদারি ব্যবস্থা এবং স্থানীয় পর্যায়ে লক্ষ্যনির্ভর পদক্ষেপের ওপর জোর দেন তারা।
কপ৩০-এর অন্যান্য আলোচনাতেও স্বাস্থ্যই ছিল মূল আলোচ্য বিষয়। ডব্লিউএইচও’র হেলথ প্যাভিলিয়নে ‘ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যাডাপটেশন’ সেশনে বলা হয় বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে অতিমাত্রার তাপপ্রবাহে প্রতি বছর ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকিও দিন দিন বাড়ছে। তাই বেলেম হেলথ অ্যাকশন প্ল্যানের আলোকে স্বাস্থ্যকে অভিযোজনের মূল ধারায় আনার দাবি জোরদার হচ্ছে।
একই দিনে ইউকে প্যাভিলিয়নে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট পার্টনারশিপ : ডেলিভারিং অ্যাকশন, মোবিলাইজিং ফাইন্যান্স’ সেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা তুলে ধরেন অর্থায়নের ঘাটতির করুণ বাস্তবতা। ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি, তা কাগজের অঙ্ক হয়েই রয়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর অর্থ সাহায্য অপ্রতুল, অনিশ্চিত, আর প্রাপ্তির পথও পর্বত ডিঙানোর মতো কঠিন।
বাংলাদেশ দলের জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ শাহ আদনান মাহমুদের ভাষায়, ‘আর্টিকেল ৯.১ এর দায় পূরণ হোক। ক্ষয়ক্ষতির তহবিলে দ্রুত ও ন্যায়সংগত অর্থপ্রবাহ দরকার। না হলে অভিযোজনের কাঠামো ভেঙে পড়বে।’
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হয়েও বাংলাদেশ এনডিসি, দীর্ঘমেয়াদি অভিযোজন পরিকল্পনা ও আগাম সতর্কতা ব্যবস্থায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে। কিন্তু বেলেম রোডম্যাপে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও উন্নত দেশগুলোর অর্থায়ন অপ্রতুল এবং অনিশ্চিত।
গত সোমবার ওয়াইল্ডফায়ার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কার্বন ক্যাপচার নিয়েও পৃথক  বৈঠকে ব্যস্ত ছিল কপ৩০। দিনের শুরুতে এক উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনের উদ্বোধনে ইউনাইটেড নেশনস ক্লাইমেট চিফ সাইমন স্টিল বলেন, বিশ্ব যতই বিভক্ত হোক, জলবায়ু সহযোগিতার সেতু ভাঙলে চলবে না। স্টিল বলেন, জলবায়ু বিপর্যয় লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন করছে, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারকে অস্থির করে তুলছে। এ অবস্থায় আলোচনায় বিলম্ব বা কৌশলগত  দোদুল্যমানতার জায়গা ন
বাংলাদেশের ১৫টি জেলা উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, ভোলা, নোয়াখালী ও কক্সবাজার বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা দেখা দিচ্ছে। একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেক স্থানে পানযোগ্য পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নারীর মৌলিক চাহিদার ওপর। পরিবারে পানির যোগান, রান্না, সন্তান লালন-পালন ও দৈনন্দিন গৃহকর্মে প্রধান ভূমিকা পালন করে নারীরা। ফলে পানির সংকট, খাদ্যাভাব বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাত তারা সরাসরি বহন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপকূলীয় অঞ্চলে দীর্ঘদিন লবণাক্ত পানি পান করার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, প্রসূতি জটিলতা, ত্বকজনিত রোগ ও কিডনি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলের গর্ভবতী নারীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা সমভূমির নারীদের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি পান করলে প্রি-এক্লাম্পসিয়া ও এক্লাম্পসিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগ দেখা দিতে পারে, যা মা ও নবজাতকের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া লবণাক্ত পানিতে গোসল করার কারণে অনেক নারীর ত্বক পুড়ে যায়, চুল পড়ে যায় এবং চুলকানিসহ নানা চর্মরোগে ভোগেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। লবণাক্ত মাটি ও পানির কারণে ধান, শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন কমে গেছে। ফলে খাদ্যে বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে, বাড়ছে অপুষ্টি। অপুষ্টি নারীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে রক্তশূন্যতা ও অকাল বার্ধক্য দেখা দিচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ পানির অভাব এখন একটি বড়ো স্বাস্থ্যঝুঁকি। লবণাক্ত পানির কারণে টিউবওয়েল ও পুকুরের পানি প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়ছে। নারীরা প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মিষ্টি পানি সংগ্রহ করে। এই পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি, শরীরিকচাপ এবং ভারি জলের পাত্র বহন করার ফলে কোমর ব্যথা, পিঠ ব্যথা, এমনকি গর্ভপাতের মতো জটিলতা দেখা দেয়। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের পর যখন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হয়, তখন পর্যাপ্ত টয়লেট ও স্যানিটেশন না থাকায় নারীদের স্বাস্থ্য ও মর্যাদা দুটিই হুমকির মুখে পড়ে। অনেক সময় মেয়েরা রাতে টয়লেট ব্যবহারের ভয়ে পানি না খেয়ে থাকে, ফলে তাদের প্রস্রাবের সংক্রমণ ও কিডনি সমস্যা দেখা দেয়।
জলবায়ু বিপর্যয়ে নারীরা শারীরিক ও মানসিক দু’দিক থেকে বড়ো আঘাত পায়। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, রোয়ানু বা আম্পানের পর বহু নারী তাদের ঘরবাড়ি, সম্পদ ও প্রিয়জন হারিয়েছে এবং দুর্যোগে বহু পুরুষ শহরমুখী শ্রমবাজারে চলে যায়, ফলে তখন তাদের কাঁধে পড়ে পরিবার টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব। এ চাপ, দারিদ্র্য ও অনিশ্চয়তার কারণে অনেক নারী হতাশায় ভোগে। গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের মধ্যে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি ও ট্রমাজনিত মানসিক ব্যাধির হার ক্রমবর্ধমান। কিন্তু এখনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রামীণ পর্যায়ে প্রায় অনুপস্থিত। সামাজিক কাঠামো ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের কারণে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপত্তাহীনতা, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চনা ও আর্থিক অস্বচ্ছলতা তাদের সংকটে ফেলে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় অনেক নারী সংস্কার বা লজ্জা-সংকোচে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না, ফলে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ কম থাকায় জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়ায় তাদের মতামত প্রায়শই উপেক্ষিত হয়।
বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব মোকাবিলায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০০৯ সালে প্রণীত এবং ২০২০ সালে হালনাগাদ করা Bangladesh Climate Change Strategy and Action Plan (BCCSAP), দেশের জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমের মূল ভিত্তি। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী, বিশেষত নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। লবণাক্ততার কারণে টিউবওয়েল ও পুকুরের পানির সমস্যার সমাধানে সরকার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ট্যাংক ও সংরক্ষণাগার স্থাপন করা হচ্ছে। আর্সেনিক ও লবণমুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে। স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্রে নারীবান্ধব টয়লেট ও স্যানিটেশন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। Safe Water Supply in Coastal Belt Project নামে একটি বিশেষ প্রকল্প বর্তমানে খুলনা, সাতক্ষীরা, ভোলা ও পটুয়াখালী জেলায় চলমান। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় উপকূলীয় এলাকায় Climate Resilient Health System গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করেছে। সাইক্লোনপ্রবণ অঞ্চলে মোবাইল মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যারা দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে মাঠপর্যায়ে চিকিৎসা প্রদান করে। প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নারী ও শিশুবান্ধব স্বাস্থ্যক্যাম্প পরিচালিত হচ্ছে। প্রসূতি ও জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দক্ষ ধাত্রী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে জলবায়ু অভিযোজন নির্দেশিকা চালু করেছে, যাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিবেশ-সম্পর্কিত রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেন।
সরকার জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ ও Gender Action Plan on Climate Change অনুসারে নারী ক্ষমতায়নমূলক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন উপকূলীয় নারীদের জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রশিক্ষণ, লবণ-সহনশীল ধান, সবজি চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন। স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের নেতৃত্বে কমিউনিটি সচেতনতা দল (Women Climate Forum) গঠন। মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় উপকূলীয় নারীদের অগ্রাধিকারভিত্তিক অন্তর্ভুক্তি। এনজিও ও সরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তা সহায়তা তহবিল, যা জলবায়ু-সহনশীল জীবিকা গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তার Standing Orders on Disaster (SOD)-এ নারীর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক নির্দেশনা যুক্ত করেছে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে নারীস্বাস্থ্য কর্ণার চালু করা হয়েছে, যেখানে নারী চিকিৎসক ও ধাত্রী দায়িত্ব পালন করেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্যানিটারি সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। দুর্যোগ-পরবর্তী সময় মোবাইল ক্লিনিক ও ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়, যেখানে নারীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পুষ্টি পরামর্শ দেওয়া হয়। জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে অনেক নারী পরিবার ও সম্পদ হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এ সমস্যা মোকাবেলায় সরকার সম্প্রতি Community Mental Health Programme চালু করেছে। উপকূলীয় জেলা হাসপাতালগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য কর্নার স্থাপন এবং ট্রমা–ভুক্তভোগী নারীদের কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
সরকার জলবায়ু-স্বাস্থ্য অভিযোজনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। UNDP, WHO I FAO–এর সহায়তায় চলছে Health Adaptation to Climate Change in Bangladesh প্রকল্প। Green Climate Fund (GCF) I World Bank–এর অর্থায়নে উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু সহনশীল হাসপাতাল ও ক্লিনিক নির্মাণ হচ্ছে। Coastal Embankment Improvement Project (CEIP)–এর মাধ্যমে উপকূলীয় জনগণের জীবন ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা জোরদার করা হয়েছে। নারী ও পরিবার পর্যায়ে জলবায়ু সচেতনতা গড়ে তুলতে সরকার একাধিক কর্মসূচি পরিচালনা করছে—কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নারীস্বাস্থ্য, নিরাপদ পানি ও পুষ্টি বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা সেশন চালু। স্কুল পাঠ্যক্রমে পরিবেশ ও জলবায়ু শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে মেয়েরা ছোটোবেলা থেকেই সচেতন হয়। স্থানীয় রেডিও ও টেলিভিশনে নারীস্বাস্থ্য ও জলবায়ু সচেতনতা বার্তা সম্প্রচার করা হচ্ছে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১-তে জলবায়ুজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলার নির্দেশনা যুক্ত হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২৫) নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে জলবায়ু অভিযোজনকে অন্যতম কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছে। জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (NAP ২০২৩) উপকূলীয় নারীদের নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নারীকেন্দ্রিক নীতি অপরিহার্য। নারী কেবল ভুক্তভোগী নয়, বরং পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো অভিযোজন কৌশল সফল হতে পারে না।
বাংলাদেশের দক্ষিণের উপকূল অঞ্চল যেন এক অন্তহীন সংগ্রামের নাম। লবণাক্ত জল, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা আর দারিদ্র্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকা এই অঞ্চল শুধুমাত্র প্রকৃতির সঙ্গে নয়, এই অঞ্চলের নারীরা তাদের শরীর ও স্বাস্থ্য নিয়েও এক অবিরাম যুদ্ধ করে চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাগরের পানি যখন ধীরে ধীরে বাসযোগ্য বা আবাদযোগ্য এলাকায় ঢুকে পড়ে, তখন সেই নোনাজল শুধু চাষাবাদই নয়, নারীর প্রজননস্বাস্থ্যকেও নীরবে বিপর্যস্ত করে তোলে।
উপকূলের বহু গ্রামে পরিষ্কার খাবার পানির অভাব আজও নিত্যদিনের সমস্যা। পানীয় ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত জলে লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নারীরা নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন—প্রজনন সংক্রমণ, ত্বকের সমস্যা, এমনকি উচ্চ রক্তচাপ পর্যন্ত দেখা দিচ্ছে। মাসিকের সময় নিরাপদ ও গোপনীয় পরিবেশের অভাবে মেয়েরা ও নারীরা অস্বাস্থ্যকর উপকরণ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে, সেই সাথে যন্ত্রণাদায়ক মানসিক অস্বস্তি তো রয়েছেই।
সমস্যার আরেকটি ভিন্ন দিক হলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা। এখনও অনেক পরিবারে মেয়েদের মাসিক নিয়ে কথা বলা লজ্জার বলে ধরা হয়। ফলাফল—তারা প্রয়োজনীয় সঠিক তথ্য, পণ্য বা চিকিৎসা কোনোটাই পায় না। অর্থনৈতিক কষ্টও তখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সামান্য স্যানিটারি প্যাড কেনার সামর্থ্যও অনেকের নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বন্যাকবলিত এলাকা সমূহের অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের জন্য আলাদা স্যানিটেশন বা গোপনীয় জায়গার ব্যবস্থাও থাকে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আইডব্লিউএফএম (ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট) ও সরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) তিনটি গবেষণা করেছে। প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। গবেষণাগুলোর ফলাফলে বলা হচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যে হারে বাড়ছে, তাতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত বা লবণাক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে উপকূলের ৪টি জেলার ৮ থেকে ১৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে উপকূলীয় জেলাগুলোর লবণাক্ততাও। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে উপকূলের প্রতিবেশ, মানুষের জীবনযাপন, কৃষি, ভূগর্ভস্থ পানি ও অবকাঠামোর ওপর। আইডব্লিউএফএমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের এ উচ্চতা বৃদ্ধি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। এ কারণে উপকূলের প্রতিবেশব্যবস্থা, ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা ও অবকাঠামোর ক্ষতি হতে পারে। এতে খাদ্যনিরাপত্তার সংকট ভবিষ্যতে বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।
সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে—মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার, মোবাইল ক্লিনিক, ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি—কিন্তু তা এখনও প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত পরিসরে। বাস্তব পরিবর্তন আনতে হলে জলবায়ু অভিযোজন নীতির সঙ্গে প্রজননস্বাস্থ্য সেবাকে সংযুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি, স্থানীয় নারী নেত্রী ও বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের যুক্ত করে সচেতনতা বাড়ানো গেলে সামাজিক ট্যাবু ভাঙা সম্ভব।
উপকূলের নারীরা কেবল ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী নয়; তারা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে লড়াইয়েরই অগ্রণী সৈনিক। তাদের জীবন-যাপনের অব্যক্ত কথা, তিক্ত অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বকে স্বীকৃতি না দিলে এই সংকটের সমাধান আশা করা কঠিন। এখনই সময়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় ও লবণাক্ত এলাকার নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে গুরুত্ব দেওয়ার।

জন্মভূমি ডেস্ক December 7, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article নড়াইলে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার
Next Article একজন সৎ কর্মদক্ষ জনবান্ধব নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago
খুলনা

ডুমুরিয়ায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

By জন্মভূমি ডেস্ক 7 hours ago
খেলাধূলা

মেসি ভারত সফর করতে কত টাকা নিয়েছেন জানা গেল

By জন্মভূমি ডেস্ক 7 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago
জাতীয়তাজা খবর

যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে

By জন্মভূমি ডেস্ক 9 hours ago
সাতক্ষীরা

তালায় শাহ্জালাল ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

By জন্মভূমি ডেস্ক 9 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?