হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : নড়াইল জেলা শহরের মানুষ জলাবদ্ধতার মধ্যে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। শহরের অধিকাংশ এলাকা ও সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। অধিকাংশ রাস্তায় গোড়ালি, আবার কোথাও হাঁটুপানি জমেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী। পর্যাপ্ত নালা ব্যবস্থা না থাকার কারনে এমনটা হয়েছে। আবার যা আছে তা অচল। শহরবাসির অভিযোগ অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই হ্টু পানি জমে যায়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে শহরের অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
নড়াইল পৌরসভার অফিস সহকারি শিমুল জানান, ১৯৭২ সালে ২৮.৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয় নড়াইল পৌরসভা। ১৯৯৯ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। এ শহরের জন্য প্রয়োজন ৫৫ কিলোমিটার নালার ব্যবস্থা। আছে মাত্র ৩ কিলোমিটার। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই সামান্য।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টিতে পৌরসভার উজিরপুর, বিজয়পুর, মাছিমদিয়া, ভাদুলিডাঙ্গা, বউবাজার, গো-হাটখোলা, ভওয়াখালি, দুর্গাপুর, আলাদাতপুর, মহিষখোলাসহ পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় ঘরবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাস্তায় পানি জমেছে। জলাবদ্ধতায় অনেক সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় অনেকে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন। কারো কারো রান্নাঘর-টিউবওয়েলও পানির নিচে। ফলে ভীষণ বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।
শহরের আলাদাতপুরের বাসিন্দা আলী হাসান বলেন, তাদের এলাকার প্রায় ৭০টি বাড়িতে পানি উঠে গেছে। তাদের বাড়ির নিচতলায় পানি উঠে গেছে। পাশর্^বর্তী কয়েকটি বাড়ির টিউবওয়েল পানির নীচে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে অনেক পরিবার। রান্নাঘর পানির নিচে থাকায় অনেক পরিবারের রান্না বন্ধ।
মহিষখোলার বাসিন্দা এ্যাডভোকেট মুন্সী শাহিন উল্লাহ মোহন বলেন, পৌরসভায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি বের হতে পারে না। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা প্রতিবছরই হয়। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
ভওয়াখালি এলাকার বাসিন্দা নান্নু বলেন, গত কয়েকদিন ধরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি নেমেছে। এরপর একরাতে ও একদিন একটু ভারী বৃষ্টি হয়েছে। তাতে শহরের অধিকাংশ এলাকায় পানি উঠে গেছে। বাড়ির চারপাশে হাঁটুপানি জমেছে।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বলেন, গত কয়েক দিনে থেমে থেমে হালকা হালকা বৃষ্টি হয়েছে। আবার অধিকাংশ সময় ফিসফিস বৃষ্টি হয়েছে। তবে গত সোমবার রাতে ১৮০মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতোটুকু বৃষ্টিতেই শহরের অনেক বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। অনেকগুলি রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। আর মাঝে মধ্যে পানি জমতে বাদ নেই শহরের কোন রাস্তা।
জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সোমবার সকালে পৌরসভার সচিব ওহাবুল আলম বলেন, পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে। প্রতি বছর এভাবে পানি জমে। সেই পানি নালা কেটে বের করে দেয়া হয়। তবে স্থায়ী ভাবে সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না,নানা প্রতিকুলতার কারনে। স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫৫ কিলোমিটার নালা নির্মাণ। যার মাত্র ৩ কিলোমিটার নালা আছে। নালা নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পৌরসভার নেই। বড় কোন ফান্ডিং পেলে নালা নির্মাণের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।