জন্মভূমি ডেস্ক : যশোরের ঝিকরগাছায় মোটরসাইকেল ঠিক করে না দেয়ায় এক মোটরসাইকেল মেকানিককে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে শিওরদাহ বাজারে এই গুলির ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের নাম রিকন হোসেন। তিনি শিওরদাহ পুলিশ ফাঁড়িতে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন। ঘটনার পরপরই তাকে প্রত্যাহার করে যশোর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর নাম রিপন হোসেন, সে যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। রিপন শিওরদাহ গ্রামের মতিয়ার হোসেনের ছেলে। শিওরদাহ বাজারে তার তরকারির দোকান আছে; পাশাপাশি সে মোটরসাইকেলের মেকানিক। ভুক্তভোগীর দাবি, গুলি করার আগে তাকে লাঠি দিয়ে বেদম পিটিয়েছে কনস্টেবল রিকন। পরে উত্তেজিত হয়ে রিকন রাইফেল থেকে গুলিও ছোড়ে রিপনের উপর। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তার শরীরে লাগেনি। কিন্তু লাঠির আঘাতে রিপনের কান ফেটে রক্তাক্ত হয়।
এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্ত ওই কনস্টেবলের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে এবং ফাঁড়ির সামনে অবস্থান নেয়। পরে নাভারণ সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) নিশাত আল নাহিয়ান এবং ঝিকরগাছা থানার ওসি কামাল হোসেন ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার সকালে ওই পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেল নষ্ট হলে সে শিওরদাহ বাজারের মেকানিক রিপনের কাছে আনেন। এসময় রিপন মোটর সাইকেলটি ঠিক করতে অপারগতা প্রকাশ করে, ভাল মেকানিক দেখাতে বলে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অভিযুক্ত কনস্টেবল। তিনি রিপনের উপর চরাও হয়ে লাঠি দিয়ে তাকে বেদম প্রহার করেন। এসময় স্থানীয়রা রিপনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে কনস্টেবল রিকন রাইফেল উঁচিয়ে গুলি করতে যান। তবে পাশের এক দোকানী রাইফেলের নল ধরে ফেললে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এ ঘটনায় গুলির বারুদের আগুনে পানিসারা গ্রামের আজিজ নামের এক ভ্যান চালক আহত হন। তার কাঁধের ডান দিকের একটি অংশ পুড়ে গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাজমিস্ত্রী তাইজেল হোসেন বলেন- ‘রিপনকে মারতে মারতে ওই পুলিশ বলে দোকান থেকে বের না হলে গুলি করে দেব। আর আশেপাশের লোকজনকে হুমকি দিতে থাকে এগোলেই গুলি করবে। পরে সে গুলি করে।’
ভুক্তভোগী রিপনের পিতা মতিয়ার হোসেন বলেন- ‘আমার ছেলেকে বিনা অপরাধে পুলিশ মেরেছে। সে মেকানিক না, তরকারি বিক্রি করে। তবে টুকটাক মোটরসাইকেলের কাজ জানে। ওর অপরাধ শুধু বলেছে এই কাজ আমি করতে পারবোনা। এতেই কনস্টেবল রিকন লাঠি দিয়ে আমার ছেলেকে মেরেছে, দোকান ভাঙচুর করেছে। পাশের এক দোকানদার বন্দুক ধরে ফেলায় ওর গায়ে গুলি লাগেনি।’
ভুক্তভোগী রিপন হোসেন বলেন- ‘ওই পুলিশের মোটরসাইকেলের সিডিআই নষ্ট হয়ে গেছে। আমি বলেছিলাম যশোর থেকে এনে লাগালে ঠিক হয়ে যাবে। সে কথা না শুনেই আমাকে মারতে থাকে, পরে গুলি করে।’
ঝিকরগাছা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন- ‘আমাদের একজন পুলিশ সদস্য যশোরে ডিউটিতে যাচ্ছিলেন। পথে তার মোটরসাইকেল নষ্ট হলে সে শিওরদাহ বাজারে গ্যারেজে যায়। সেখানে লোকজনের সাথে তার কথা কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কির পর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ওর কাছে থাকা একটি রাইফেল থেকে অসাবধানতাবশত গুলি বের হয়ে যায় যেটাকে আমরা মিসফায়ার বলি। পরে এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এসময় সিনিয়র অফিসারসহ আমরা সেখানে যাই, ক্যাম্প থেকে ওকে আমরা পুলিশ লাইনে নিয়ে আসি। ওর কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি সিজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’