শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : সোমবার দিন ব্যাপী ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ক্লাইমেট স্মাট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় এক দিনের কৃষক প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে আমের চারা বিতরণ।
উক্ত প্রশিক্ষণে সভায় সভাপতিত্ব করেন ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন,
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন,
উপ-পরিচালক মিজান মাহমুদ, মাধব চন্দ্র সানা, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ওয়ালিদ হোসেন ও আরাফত জামিল, প্রমুখ ৩০ জন কৃষক কৃষাণীদের কে একটি করে আমের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করেন।
উল্লেখ্য খুলনা কৃষি অঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বেশ ঝুঁকি রয়েছে। নড়াইলে এই ঝুঁকি সেভাবে না থাকলেও এ জেলার কৃষকেরা আধুনিক কৃষিতে পিছিয়ে পড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উচ্চ তাপমাত্রা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের কারণে এ অঞ্চলের ফসলের জমিতে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটে, শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টি পানির অভাব দেখা দেয়, শীতকাল থাকে কম সময়, মাটিতে বেশি দিন ‘জো’ ধরে রাখা যায় না। এসব কারণে রবি ও খরিপ মৌসুমে এ অঞ্চলের মোট ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমির মধ্যে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমি সাময়িক পতিত ও ৬৬ হাজার হেক্টর স্থায়ী পতিত জমি সম্পূর্ণ বা আংশিক অনাবাদী থাকে। এসব দিক বিবেচনা করে লাগসই কৃষি প্রযুক্তি, উত্তম পানি ও মাটি ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় ও জলবায়ুর অভিঘাত সহনশীল ফসল ও ফসলের জাত চাষের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হবে এবং পতিত ও আংশিক অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় এনে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা হবে।ও স্বল্প জীবনকালবিশিষ্ট সরিষার জাত, যেমন বারি সরিষা ৯ (জীবনকাল ৮০-৮৫ দিন), বারি সরিষা ১৪ (জীবনকাল ৭৫-৮০ দিন), বারি সরিষা ১৫ (জীবনকাল ৮০-৮৫ দিন) নির্বাচন করা যেতে পারে। বারি সরিষা-১৬ জাতটি খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল, কিন্তু জীবনকাল বেশি (জীবনকাল ১০৫-১১৫ দিন)। সাথী ফসল হিসেবে সরিষার চাষ করতে হলে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রতি বিঘায় প্রায় ১ কেজি বীজ বুনতে হয়। সরিষার জন্য হেক্টর প্রতি সারের মাত্রা হলো ইউরিয়া ২০০ কেজি, টিএসপি ১৫০ কেজি, এমওপি ৭০ কেজি, জিপসাম ১২০ কেজি ও জিংক সালফেট বা দস্তা ৫ কেজি। ফুল আসার আগে ও ফল গঠনের সময় প্রয়োজনে দুইবার সেচ দিতে হয়। মাঝারি নিচু থেকে মাঝারি উঁচু জমি এ ধরনের চাষের উপযুক্ত। সাতক্ষীরা, খুলনার ডুমুরিয়া ও দাকোপ এবং বাগেরহাট জেলার জন্য এ প্রযুক্তি প্রযোজ্য ।
এ প্রযুক্তি অনুসরণ করে চারটি ফসলভিত্তিক ফসল বিন্যাস গড়ে তোলারও সুযোগ রয়েছে (তালিকা ১)। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বিনা উদ্ভাবিত স্বল্পমেয়াদী ‘বিনা ধান-৭’, বারি উদ্ভাবিত স্বল্পমেয়াদী সরিষার জাত ‘বারি সরিষা-১৪, ব্রি উদ্ভাবিত স্বল্পমেয়াদী জাত ‘ব্রি ধান২৮’ এবং আউশের স্বল্পমেয়াদী জাত ‘পারিজা’ সমন্বয় করে রোপা আমন-সরিষা-বোরো-রোপা আউশ ফসল বিন্যাস উদ্ভাবন করেছে। এই ফসল বিন্যাস অবলম্বন করে কৃষক অধিক ফলন পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এছাড়া মৃত্তিকার উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানির সংরক্ষণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই ফসল বিন্যাস যথেষ্ট অবদান রাখবে।
ডুমুরিয়ায় কৃষক প্রশিক্ষণ ও আমের চারা বিতরণ
Leave a comment