
ডুমুরিয়া প্রতিনিধি : ডুমুরিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠান স্থলেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মনদা ধারী রায় (৬৯) নামের এক বৃদ্ধা মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সকাল ১০টায় ওই অনুষ্ঠানে যোগদানের পরই এ ঘটনা ঘটে। তিনি রুদাঘরা ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের কমল রায়ের স্ত্রী। এছাড়া অনুষ্ঠানে যোগদানের সময় সড়কদুর্ঘটনায় আরো দুই বৃদ্ধ গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তারা হলেন উপজেলার মাগুরখালীর হেতালবুনিয়া গ্রামের বিনয় মন্ডল (৮৫) ও রাজাপুর গ্রামের জামির শেখ (৮০)। উপজেলা প্রশাসন দশ হাজার প্রত্যক্ষ উপকার ভোগীর উপস্থিতি টার্গেট নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ভুক্তভোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, অনুষ্ঠানে না আসলে ভাতার টাকা বন্ধ হয়ে যাবে এমন প্রচারনা করে বয়স্ক ও অসুস্থদেরও অনুষ্ঠানে আনতে এক প্রকার বাধ্য করা হয়েছে। ফলে বৃদ্ধা বয়সে নানা অসুস্থার মধ্যেও অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন তারা।
মনদা ধারী রায়ের বড় সন্তান যুধিষ্ঠী কুমার রায় জানান, অনুষ্ঠান স্থলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মা মারা গেছেন। বিকেলে তার সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। তবে তার মা বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় সুস্থ্য ছিলেন। আহত বিনয় মন্ডল জানান, ইউপি সদস্য ও চৌকিদাররা গ্রামে প্রচার করেছে অনুষ্ঠানে না আসলে ভাতার টাকা সামনে আর আসবে না। তাই টাকা বন্ধ হওয়ার ভয়ে তিনি অনুষ্ঠানে এসেছেন। বিনয় মন্ডলের সন্তান অজিত মন্ডল জানান, অনুষ্ঠান স্থলের (ডুমুরিয়া কলেজ মাঠ) সামনে মহাসড়ক যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে কিছুটা দুরে তার বাবা নেমে যান। পরে সড়ক পার হতে গেলেই পাটকাঠি বোঝাই নছিমন তাকে ধাক্কা দিলে পিচের সড়কে পড়ে যেয়ে মারাত্নক আহত হন। অজিত মন্ডল জানান, ডুমুরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছে তার পিঠের একটি হাড় ভেঙ্গে গেছে।
আহত রাজাপুর গ্রামের জামির শেখ জানান, অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। ডুমুরিয়া স্ট্যান্ডে পৌঁছালে একটি ভ্যান তাকে ধাক্কা দেয়। পড়ে যেয়ে তার হাতের একটি আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান জানান, মৃত ওই নারী আগেও দুইবার স্ট্রোক করেছিলেন। পাশে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। অনুষ্ঠানটাও হাসপাতালের খুব কাছেই। অনুষ্ঠান স্থল কাছে থাকাই তিনি আসেন এবং ফের স্ট্রোক করে মারা যান। তবে আহত দুইজনের খবর তার কাছে আসেনি।
অনুষ্ঠানে না আসলে ভাতার টাকা বন্ধ হবে এমন প্রচারনা সম্পর্কে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, অনেক ভাতাভোগী মারা গেছেন অথচ নাম তালিকায় থেকে গেছে। তাই তালিকা আপডেট করতে ইউনিয়নপর্যায়ে লাইভ ভেরিফিকেশন করা হয়েছে। তবে এখানে সবাই নিজের ইচ্ছায় এসেছেন। কাউকে আসতে বাধ্য করা হয়নি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, এই অনুষ্ঠানে আয়োজক উপজেলা প্রশাসন। বিষয়টি সম্পর্কে তারাই কথা বলবেন। তবে ওই বৃদ্ধা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন এমন দাবি করেন তিনি। ডুমুরিয়া হাসপাতালের কর্তব্যরত মেডিকেল সহকারী মো. শাহীন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।