
গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ৫টাকা থেকে ১৫টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এরমধ্যে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬টাকা, আর চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৫টাকা পর্যন্ত। এতে করে চালের দাম চলে গেছে গরিবের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে, দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) তালা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষের চাপা কান্না। পকেট ফাঁকা করে, পেট বাঁচাতে পারছে না সাধারণ মানুষ। বন্যার তলিয়ে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে কৃষকরা জমিতে চাষ করেছিলেন সবজি, বাজারে সবজির দাম হতাশাজনক, সার, বীজ, মজুরি তো দূরের কথা, সবজি বাজারে নিয়ে গেলে দর-দামও করছেন না কেউ। তার উপর ১৫দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম ৫-১০টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর অতিবৃষ্টিতে সাতক্ষীরার তালায় দু’টি ইউনিয়নে ফসলি জমি তলিয়ে গেলেও বাকি ১০টি ইউনিয়নসহ জেলার বাকি উপজেলার ফসল উৎপাদন হয়েছিল। এরমধ্যে কৃষকের ধানের জমি যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল তাঁতে চালের দাম বেশি হওয়ায় কথা না। কোথাও কোন সিন্ডিকেট সিস্টেম এমন সংকট সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
উপজেলার একাধিক হাটবাজারে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিআর-২৮ ধানের চাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৪টাকা, আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০টাকা। রড মিনিকেট চাল ৬৪ থেকে ৬৮টাকা, আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০টাকা। এছাড়া বাসমতি চাল প্রতি কেজি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০থেকে ৯৫টাকা, আগে বিক্রি হয়েছে ৮২ থেকে ৮৫টাকা। যা গত ১৫দিনের ব্যাবধানে চালের বাজার এমন হয়েছে।
তথ্য বলছে, জেলার কোন বাজারে নেই কোন ধরণের মনিটারিং, নিয়ন্ত্রণহীন সমাজ ব্যবস্থা, অসাধু রা রয়েছে কঠোর অবস্থানে, ইচ্ছে খুশিতে দাম হাঁকাচ্ছেন দোকানদাররা। বারাবরই যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে থাকে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষেরা। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর এখনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি সরকার এমন মন্তব্য করেছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীপেশার মানুষ।
তালা বাজারে চাল কিনতে আসা আজহারুল ইসলাম বলেন, সারাদিন ভ্যান চালিয়ে দুই কেজি চাল কিনতে পারি না। কোন রকম কমা দামের চাল কিনতে পারলেও, তৈল, মসলাসহ অন্যান্য উপকরণ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। সকলের ছুটছে নিজ নিজ গন্তব্যে আমাদের (গরিবের) কথা কেউ শুনতে পাবে না।
আরেক ক্রেতা বিপ্লব হোসেন কবিতা শুনিয়ে বলেন, ‘চাহিনী তো মুঠি মুঠি স্বর্ণ, চাহিনী তো ক্ষমতার অস্ত্র, পেটভরে খেতে পাব নিত্য, আর পাবো পরিদেহ বস্ত্র ,এই তো সহজ দাবি এ দাবী মানতে হবে।
চাল বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম আগের তুলনায় ঠিক আছে, যদি কোন খুচরা বিক্রেতা দাম বেশিতে বিক্রি করে তাহলে তাদের বিষয়। এছাড়া তিনি আরও বলেন, বাজার মনিটরিং করলে ঠিক হয়ে যাবে।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মেহেদী হাসান তানভীর জানান, সারাদেশে ন্যায় সাতক্ষীরা জেলায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের মনিটারিং অব্যাহত আছে। যদি কোন ব্যবসায়ী বেশি দামে চাল বিক্রি করেন এবং সেটি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।