গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : তালায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘানি শিল্প। স্বল্প ব্যয়ে কম খরচে বাড়িতে তৈরী করা হতো খাঁটি সরিষার তৈল। বর্তমান প্রযুক্তির কাছে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারায় এ শিল্প এখন বিলুপ্ত প্রায়। গ্রাম বাংলার সেই শিল্প এখন আর তেমন দেখা যায় না। উপজেলায় হাতে গোনা দু-একটা গ্রামে এ শিল্প টিকে আছে। তাই বর্তমান প্রজন্মের কাছে এ শিল্প রহস্য বলে মনে হয়। এখন আর ঘানিতে ঘুরান খাঁটি সরিষার তৈল পাওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য। ঘূর্ণনযন্ত্র দ্বারা ঘানিতে গরুর সাহায্যে এ সরিষা জাতীয় তৈল বীজ থেকে বের করা হয় তেল। ঘানি টানার জন্য গরুকে চোখ বেধে টানানো হয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে কোন তৈলবীজকে নিষ্পেষণ করে তেল বের করা হয় তাকে ঘানি বলে। তৈল নিষ্পেষণ একটি প্রাচীন জীবিকা এই পেশার লোকদেরকে কলু বলা হয়। ঘানি টানা খুব পরিশ্রমের কাজ তাই আগেকার দিনে কারাদন্ডপ্রাপ্ত লোকদের দিয়ে ঘানি ঘোরানো হতো।
তাই প্রবাদে আছে জেলে যাওয়াকেই অনেক সময় জেলের ঘানি ঘোরানো বলা হতো। বর্তমান প্রযুক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে ঘানি। কারণ খাঁটি ঘানির তেলের দাম ৪শ’ টাকা কিন্তু সে তুলনায় মেশিনের তেল ১৮০টাকা। নতুন প্রযুক্তির কাছে ঘানি হার মানতে বাধ্য হচ্ছে ফলে এ শিল্প টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
উপজেলার পাটকেলঘাটা বাজার সংলগ্ন দাই পাড়াতে পুরান ঐতিহ্য ঘানি শিল্পটি কোনরকম টিকে আছে। সেখানে গিয়ে কথা হয় বিদেশ প্রবাসী ইয়াছিন সরদারের পুত্র অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ সরদারের সাথে। সে জানায়, আমার দাদাদের আমলের এ শিল্প প্রায় বিলিন হওয়ার পথে কোন রকমে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন এ ঘানি আঠারাে মাইল বেতা গ্রাম আমার নানা আহম্মদ আলী গাজী ও পাটকেলঘাটায় আমাদের এছাড়া এলাকায় কোন ঘানি নাই।
এ শিল্পে লোকবল কম লাগে, কম খরচে প্রাচীন আমলের সেই ঘানির মাধ্যমে খাঁটি তেল বের করা হয়। প্রতিদিন ঘানিতে ৪ থেকে ৬ কেজি তেল বের করা হয়। তেলের চাহিদা অনেক চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। প্রতি কেজি তেল ৪শ’ টাকায় বিক্রি করা হয়। খাঁটি সরিষার তেল নিতে দূর দুরান্ত থেকে লোক আমাদের এখানে আসে।
তালা উপজেলার তৈলকুপি গ্রামের রাধাপদ সাধু জানায়, ঠাকুর দাদারা ঘানির সাথে যুক্ত থেকে অনেক কিছু করেছে। আমাদের কাছে ঘানি এখন রূপকথার মতো।
পাটকেলঘাটা পশ্চিমপাড়া গ্রামের আবুল কালাম গাজী জানান, অনেক আগে থেকেই আমরা এ পেশা ছেড়ে দিয়েছি। আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারের সাথে এ শিল্প টিকে থাকতে পারেনা। তাছাড়া এ পেশা লাভজনক না, বর্তমানে আমরা ব্যবসা বাণিজ্য করে ভাল আছি।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া শারমিন বলেন, যেহেতু গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সাথে জড়িত ঘানি শিল্প। সেহেতু এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালায় বিলুপ্তির পথে ঘানি শিল্প
Leave a comment