
তালা প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার গহীন জঙ্গল থেকে জঙ্গি সন্দেহে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম-সিটিটিসির অভিযানে আটক হয়েছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার একই পরিবারের তিনজন। আটকৃতরা হলো তালার খলিলনগর ইউনয়নের দক্ষিণ নলতা গ্রামের সাইকেল মিস্ত্রী শরিফুল ইসলাম (৪৫), তার স্ত্রী আমেনা বেগম (৩৫) ও কন্যা হাবিবা (১৮)। রাতভর অভিযান শেষে গত শনিবার বেলা সাড়ে ১০টায় তাদের আটক করা হয় এবং শিশুদের হেফাজতে নেওয়া হয়। গত ২৫ জুলাই বাড়ি থেকে এক সঙ্গে বের হন তারা। এরপর থেকে তাদের সাথে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
রোববার সকালে তালার দক্ষিণ নলতা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খুলনা-পাইকগাছা সড়কের পাশে ছোট্ট একটি দোকান রয়েছে শরিফুলের। দোকানটিতে সাইকেল মিস্ত্রীর কাজ করতো সে। সেটি এখন তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। বাড়িতে গিয়েও বসতঘরটি তালাবদ্ধ দেখা যায়।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ২৫ জুলাই স্ত্রী আমেনা বেগম ও মেয়ে হাবিবাকে নিয়ে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় শরিফুল ইসলাম। এরপর থেকেই মোবাইল বন্ধ। যোগাযোগ হয়নি কারো সঙ্গেই।
শরিফুলের বড় ভাই নজরুল মোড়ল জানান, ‘আমরা গরীব মানুষ। শরিফুল সাইকেল মিস্ত্রীর কাজ করে সংসার চালায়। কখনো খারাপ কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছে এমন কোনো খবর এলাকার মানুষ দিতে পারবে না। আপনারা খোঁজ খবর নিয়ে দেখুন।’
কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কিনা এমন প্রশ্নে নজরুল মোড়ল বলেন, জাকের পার্টি করে শরিফুল। প্রতি বছর ওরশ শরীফেও যায়। মাঝেমধ্যে আমি যাই সেখানে। এটা কোন রাজনৈতিক দল না। জঙ্গি সদস্য হয়েছে এটা আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। শুনে অবাক হচ্ছি। পরিবারের বাকি সদস্যরাও হতভম্ব হয়ে পড়েছেন জঙ্গি সন্দেহে আটকের খবর শুনে। একই কথা বলেন পরিবারটির বাকি সদস্যরাও।
শরিফুলের প্রতিবেশী সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য ময়না বিবি বলেন, টিভি খবরের মাধ্যমে তাদের আটকের খবরে শুনে রীতিমত হতবাক হয়েছেন তারা। শরিফুল খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে। রাস্তার পাশে একটি ঝুঁপড়ি ঘর বেঁধে স্ত্রী-সন্তানসহ সেখানেই বসবাস করেন এবং সাইকেল সারাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। শরিফুলের একমাত্র মেয়ের জামাই আমিনুল ইসলাম শান্ত প্রায় দুই বছর আগে জঙ্গী হিসাবে ধরা পড়লে ঐ পরিবারে মূলত অন্ধকার নেমে আসে। জামাই শান্ত বর্তমানে সিরাজগঞ্জ কারাগারে রয়েছে। তাকে জামিনে মুক্ত করতে ১৫/১৬ দিন আগে একটি গরু বিক্রি ও জমির হারির প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর তারা আর বাড়িতে ফেরেনি।
খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলু বলেন, বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এনিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না। তবে আমরা পরিবারটির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।