
ডেস্ক রিপোর্ট : থাইল্যান্ডের রাজমাতা সিরিকিত মারা গেছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২১ মিনিটের দিকে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। দেশটির বর্তমান রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মা ছিলেন রাজমাতা সিরিকিত।
থাই রয়্যাল হাউজহোল্ড ব্যুরোর তরফ থেকে শনিবার (২৫ অক্টোবর) মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
রয়্যাল হাউজহোল্ডের বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৯ সাল থেকে তিনি অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ছিলেন। চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার রাতে মারা যান তিনি।
পুত্র রাজা মহা বাজিরালংকর্ন ও তিন মেয়েকে উত্তরসূরি হিসেবে রেখে গেছেন রাজমাতা সিরকিত।
তাকে শেষ বিদায় জানাতে চলছে রাজকীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনের প্রস্তুতি। সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য মরদেহ রাখা হবে ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেসের ডুসিট থ্রোন হলে। তার সম্মানে এক বছরের শোক পালন করবে থাই রাজপরিবার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থাই রাজতন্ত্রে গ্ল্যামার ও মর্যাদার পুনরুত্থান ঘটিয়েছিলেন সিরকিত। পরবর্তী বছরগুলোতে সময়ে সময়ে রাজনীতিতেও প্রভাব রেখেছেন। ২০১২ সালে স্ট্রোকের পর থেকে তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি।
থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল রাজমাতার মৃত্যুতে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান সম্মেলনে তার সফর বাতিল করেছেন। শনিবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে রাজকীয় শেষকৃত্য নিয়ে আলোচনা হবে।
রাজমাতা সিরিকিত ছিলেন থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম সময়ের রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের স্ত্রী। ১৯৪৬ সাল থেকে ৭০ বছরের রাজত্ব করেছে রাজা ভূমিবল। স্বামীর সঙ্গে দাতব্য কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে জনগণের ভালোবাসা অর্জন করেন সিরকিত। বিদেশ সফরকালে তার সৌন্দর্য ও ফ্যাশন রুচি বিশ্বমাধ্যমের প্রশংসা কুড়ায়।
১৯৩২ সালে জন্ম নেওয়া সিরিকিত কিতিয়াকারা ছিলেন ফ্রান্সে নিযুক্ত থাই রাষ্ট্রদূতের কন্যা। প্যারিসে সংগীত ও ভাষা অধ্যয়নের সময়ই ভূমিবলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ১৯৪৯ সালে তারা বাগদান সম্পন্ন করেন এবং পরের বছর ১৭ বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তিনি বিখ্যাত ফরাসি ডিজাইনার পিয়ের বালমাঁর সঙ্গে মিলে থাই সিল্কে তৈরি ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নতুন মাত্রা যোগ করেন, যা থাইল্যান্ডের সিল্কশিল্প পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজা ভূমিবলের সঙ্গে তিনি থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত গ্রামগুলো সফর করেছেন, দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছেন।
১৯৫৬ সালে রাজা সাময়িকভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করলে সিরিকিত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রিজেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সাল থেকে থাইল্যান্ডে তার জন্মদিনের তারিখ ১২ আগস্টকে মাদারস ডে ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
রাজা ভূমিবলের মৃত্যুর পর ২০১৬ সালে তার একমাত্র পুত্র মহা বাজিরালংকর্ন রাজা হিসেবে সিংহাসনে আরোহন করেন এবং ২০১৯ সালে তার অভিষেকের পর সিরিকিতের আনুষ্ঠানিক উপাধি হয় রাজমাতা।

