ক্রীড়া প্রতিবেদক : আগের দুই ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও টসে জিতে শ্রীলঙ্কাকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কুশাল মেন্ডিসের ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশকে ১৭৫ রানের লক্ষ্য দেয় শ্রীলঙ্কা। জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৪৬ রানে। ২৮ রানের হার দিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করেছে টাইগাররা।
বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। দ্রুত আউট হয়ে গেছেন ওপেনার লিটন দাস। তিনি ধনঞ্জয়া ডি সিলভার প্রথম বলেই অফ স্টাম্পের দিকে তুলে মারতে গিয়েছিলেন। সেই ক্যাচ সহজেই নিয়েছেন দাসুন শানাকা। ফলে দলীয় ১৩ রানেই উইকেট হারায় টাইগাররা।
এরপর সৌম্য সরকারের সঙ্গে উইকেটে যোগ দিয়েছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। নিজের প্রথম ওভারে এসে দ্বিতীয় বলেই শান্তকে আউট করেছেন নুয়ান থুশারা। শান্তর ব্যাট ও প্যাডের মাঝখানে একটা ফাঁকা জায়গা ছিল। নিচু হয়ে ভেত্রের দিকে ঢোকা বলে বোলফ হয়ে যান শান্ত।
পরের বলে তাওহীদ হৃদয়কে আউট করেন থুশারা। লেংথ থেকে সিমে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে বোল্ড হন শান্ত। এরপর তিনি মাঠ ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে লঙ্কান ক্রিকেটারদের সঙ্গে বাকবিতন্ডাও হয়। অবশ্য আম্পায়ার তানভির আহমেদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে।
এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে এলবিডব্লিউ বানিয়ে হ্যাটট্রিক তুলে নেন এই লঙ্কান পেসার। নিচু হওয়া বল ব্যাটের ফাঁক দিয়ে সোজা প্যাডে আঘাত হানে। মাহমুদউল্লাহ রিভিউ নিলে দেখা যায় বল ব্যাটে না লাগলেও বলের পিচিং ইনসাইড লাইন হলেও ইমপ্যাক্ট ও হিটিং ছিল আম্পায়ার্স কল ফলে ফিরে যেতে হয় মাহমুদউল্লাহকে।
ফলে ১৫ রানে ১ উইকেট থাকা বাংলাদেশের স্কোর নিমিষেই হয়ে যায় ১৫/৪। পঞ্চম শ্রীলঙ্কান বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক পেলেন তুশারা। এই বিপর্যয় থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। থুশারা পরের ওভারে এসে একপ্রান্ত আগলে রাখা সৌম্য সরকারকে আউট করেছেন। ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি।
জাকের আলী অনিক শিকার হয়েছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার। সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলা এই লঙ্কান স্পিনারের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন জাকের। এরপর বাংলাদেশের ইনিংস টেনেছেন শেখ মেহেদী ও রিশাদ হোসেন। বিশেষ করে রিশাদ ব্যাট হাতে দারুণ সাবলীল ছিলেন।
এই দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৩ বলে ৪৪। মেহেদী ফিরেছেন হাসারাঙ্গার বলে বোল্ড হয়ে। ২৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া রিশাদ আউট হয়েছেন ৩০ বলে ৫৩ রান করে। তাকে ফিরিয়েছেন মাহিশ থিকশানা। নিজের শেষ ওভার করতে এসে শরিফুল ইসলামকে আউট করে পঞ্চম উইকেট তুলে নেন থুশারা। এরপর শেষদিকে বাংলাদেশের ইনিংস টানেন তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের শেষ ওভারে তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছেন শানাকা।
এর আগে টসে জিতে বোলিংয়ে নেমে নতুন বল শরিফুলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। বেশ কয়েকটি জোরালো আবেদন ছিল প্রথম ওভারেই। ওভারের শেষ বলটিও ব্যাটে বলে করতে পারেননি ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। যদিও রিভিউতে দেখা যায় বল স্টাম্পের অনেক উপর দিয়ে চলে যেত। ফলে নট আউট ঘোষণা করেন থার্ড আম্পায়ার।
অবশ্য চতুর্থ ওভারেই বাংলাদেশকে উইকেট এনে দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। ওভারের প্রথম বলে মিড উইকেটে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ধনঞ্জয়া। ফলে শেষ হয়েছে তার ১২ বলে ৮ রানের ইনিংস। অবশ্য সেই ওভারেই তাসকিনকে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান নতুন ব্যাটার কামিন্দু মেন্ডিস। একটি চার হয়েছে লেগ বাইতে।
যদিও তাকে বেশিদূর এগোতে দেননি রিশাদ হোসেন। নিজের দ্বিতীয় বলেই খেয়েছিলেন ছক্কা। যদিও দুই বল পরেই এই লেগ স্পিনারকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে লং অফে শরিফুলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১২ রান করা এই ব্যাটার। এরপর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও কুশাল মেন্ডিস মিলে শ্রীলঙ্কার ইনিংস টানেন।
এই দুজনে ৩৩ বলে ৫৯ রান যোগ করেন। হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারের বলে আপার কাট করতে গিয়ে আউট হয়েছেন থার্ড ম্যানে শরিফুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। এরপর চারিথ আসালাঙ্ককাকে থিতু হতে দেননি শরিফুল। এই পেসারের শর্ট বলে জোরের ওপর খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়েছিলেন আসালাঙ্কা। ডিপ স্কয়ার লেগে মুস্তাফিজ সেই ক্যাচ নিয়েছেন আনায়াশে।
এই ম্যাচে শুরু থেকেই মারকুটে ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কার একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন কুশাল মেন্ডিস। তিনি মাত্র ৩৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। পেতে পারতেন সেঞ্চুরিও। তবে তাকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেছেন তাসকিন। এই পেসারের লেংথ বলে পুল কুরতে গিয়ে মিড উইকেটে সেই ক্যাচ সহজেই নিয়েছেন সৌম্য।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস শিকার হয়েছেন রিশাদের। এই লেগ স্পিনারকে জায়গা করে নিয়ে মিড অফের ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল চলে যায় সোজা লং অফে থাকা সৌম্যর হাতে। ইনিংসের শেষ বলে শানাকা ৯ বলে ১৯ রান করে রান আউট হলে শ্রীলঙ্কার ইনিংস থামে ১৭৪ রানে।