
আহাম্মদ ইব্রাহিম অরবিল, দশমিনা(পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন থেকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে বিলুপ্ত প্রায় হয়ে যাওয়া কাচারি ঘরের বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। গ্রামীন জনপদের অধিকাংশ ধনাঢ্য গৃহস্থের বাড়িতে বিশ্রাম,রাত্রিযাপন করার জন্য এই কাচারি ঘর ছিল। এই ঘর গ্রাম বাংলার ইতিহাস,ঐতিহ্য,কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একটি অংশ ছিল। আধুনিক জীবনযাপন ও বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় ব্যাপক পরিবর্তনের কারনে কালের বিবর্তনে কাচারি ঘর বাঙালির সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে গেছে। অতিথিশালা কিংবা বিশ্রাম রুমের বিকল্প হিসাবে এই কাচারি ঘর ছিল। গ্রামীন জনপদে এখন আর এই ঘর তেমন দেখা যায় না।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ৭০ থেকে ৮০ দশকে মূলত বাড়ি থেকে একটু দূরে আলাদা খোলামেলা যায়গায় কাচারি ঘরের অবস্থান ছিল। এক সময়ে কাচারি ঘরে বসে জমিদাররা কর ও খাজনা আদায় করতো। উপজেলার অনেক স্থান এখনও কাচারি বাড়ি বা কাচারি বাজার হিসাবে পরিচিত রয়েছে। গ্রামীন জনপদে কোন ব্যক্তি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাবার পথে অনেক সময় যাত্রা বিরতির জন্য এই ঘরে এসে বিশ্রাম নিতেন। এছাড়া অন্য এলাকার কোন বাসিন্দা, অতিথি, পথচারী এই কাচারি ঘরে এসে বসতেন। প্রয়োজনে কোন অতিথি থাকার ব্যবস্থা না থাকায় কাচারি ঘরের কোন কক্ষে সময় কম থাকার কারনে রাতিযাপন করতো। এক সময় এই ঘর ছিল গ্রামের অভিজাত,সম্পদশালী,অবস্থাপন্ন ও মদ্যবিত্ত গ্রহস্থের আভিজাত্যের প্রতীক। কাচারি ঘরটি টিন দিয়ে চারদিক বেড়া এবং কাঠের কারুকাজ করা থাকতো। এছাড়া উপরে টিন অথবা ছনের ছাইনি দিয়ে এই ঘর তৈরি করা হতো। গ্রামীন পরিবেশ ও প্রকৃতি বান্ধব গাছপালা দিয়ে চারদিক যিরে রাখা হতো। তখনকার যুগে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা না থাকলেও কাচারি ঘরে আরামদায়ক শীতল পরিবেশ ছিল। তীব্র গরমে কাজিারি ঘরের খোলা জানালা দিয়ে হিমেল বাতাস বয়ে যেত। ফলে অতিথিরা কাচারি ঘরে থাকতেই বেশী পছন্দ করতেন।
দশমিনা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও গণমাধ্যমকর্মী আহাম্মদ ইব্রাহিম অরবিল বলেন,অত্র জনপদের ধনাঢ্য গৃহস্থের বাড়ির সামনের রাস্তার পাশে এই কাচারি ঘর ছিল। এই ঘরে দূরদূরান্তের মানুষের বিশ্রামসহ থাকার ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাচারি বাড়ি এখন তেমন আর নেই যা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অত্র উপজেলার গ্রামীন জনপদে এখনও জরাজীর্ন অবস্থায় কয়েকটি ঘর ভগ্নদশায় স্মৃতিময় হয়ে টিকে রয়েছে।