দশমিনা(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের দক্ষিন আদমপুর গ্রামে অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকা প্রাচীন ঐতিহ্যের আমির উল্লাহ মুন্সী জামে মসজিদটি অবশেষে সংস্কার করা হয়েছে। চোঁখ ধাধানো স্থাপত্য ও পুরাকীর্তির শৈল্পিক নিদর্শনের পুরাতন এই মসজিদটি সংস্কার করার পর আলোকিত হয়ে উঠেছে। মুঘল শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এক গম্বুজ ও ৪ মিনার বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ৫শত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও টিকে আছে। যা দেখে দর্শনার্থীদের বিম্ময়ের শেষ নেই। এই রকম একটি পুরাকীর্তির নিদর্শনের মসজিদ থাকলেও তার প্রচার না থাকায় কোন দিন খবর পাওয়া যায়নি। উপজেলার দক্ষিন আদমপুর গ্রামের মুন্সি আমির উল্লাহ জামে মসজিদটি প্রাচীন পুরাকৃতির অপুর্ব নিদর্শন। প্রাচীন এই মুসলিম স্থাপত্যের চোঁখ ধাধানো স্থাপত্য ও পুরাকীর্তির শৈল্পিক নিদর্শনটি ৫’শত বছর আগে নির্মান করা হয়ে ছিল বলে ধারনা করা হয়। তবে এলাকার অনেকেই এই মসজিদটি ৫’শত বছরের বেশী পুরাতন বলে মনে করছে। মসজিদটিতে ১২টি পিলার বিশিষ্ট প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতায় বিশাল গোল আকৃতির একটি গম্বুজ রয়েছে। এছাড়া মসজিদটির চারকোনে দৃষ্টিনন্দন ৪টি মাঝারি মিনার আছে। প্রতিটি দেয়াল প্রায় ৫ ফুট চওড়া হওয়ায় বাইরের পাশ দিয়ে এটি উত্তর-দক্ষিনে সাড়ে ২৫ফুট দৈর্য্য ও পূর্ব-পশ্চিমে২৫ ফুট প্রস্থ রয়েছে।
সরেজমিন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের দক্ষিন আদমপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুন্সি বাড়িতে মুন্সি আমির উল্লাহ এই মসজিদটি নির্মান করেছিলেন। ৫’শত বছরের পুরনো মুসলিম ঐতিহ্যের প্রাচীন ও অন্যতম নিদর্শন এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি মুন্সি আমির উল্লাহ জামে মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটি প্রাচীন পুরাকৃতি এবং প্রত্বতত্ত্ব স্থাপত্য শিল্পের এক অপরূপ সৌন্দর্যের দৃষ্টান্ত হয়ে মাথা উচু করে স্বগৌরবে দাড়িয়ে রয়েছে। মুন্সি আমির উল্লাহর সপ্তম বংশধরদের আর্থিক দৈন্যতার কারনে রক্ষনাবেক্ষন করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে মসজিদের সৌন্দর্য ও জৌলুস দিন দিন কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসে ছিল। চুন-সুরকী দিয়ে নির্মিত মসজিদটির মূল ভবন চারপাশে ২০০ বর্গফুট বিশিষ্ট এবং উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। এক গম্বুজ বিশিষ্ট একতলা মসজিদের ভিতরে ২৫ থেকে ৩০ জন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের ভেতরে বাইরে সমস্ত পলেস্তার ফেটে ভেঙে ইট বের হয়ে ছিল। পরিচর্যা ও রক্ষনাবেক্ষন না করায় মসজিদের বাহিরের আস্তর নষ্ট হয়ে অধিকাংশ জায়গা থেকে খসে পড়ছিল। বৃষ্টির পানিতে দেয়ালে শেওলা জমে বিবর্ন হয়ে মসজিদের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে ছিল। মসজিদটির পাশেই ৫’শত বছরের পুরানো একটি দিঘি রয়েছে। এলাকাবাসী মনে করেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর উদ্যোগ নিলে এটি হতে পারে একটি দর্শনীয় স্থান। মুন্সী আমির উল্লাহর সপ্তম বংশধর শাহ আলম মুন্সি (৮২) জানান, অনেকবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কেউই এটি সংস্কার বা রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব নেয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। মসজিদটি পরিদর্শন শেষে সাবেক গণমাধ্যমকর্মী ও দশমিনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নেছার উদ্দিন আহমেদ বলেন, মসজিদটির চোঁখ ধাধানো স্থাপত্য ও পুরাকীর্তির শৈল্পিক নিদর্শন দেখার মত। এই অজপাড়া গ্রামে এই ধরনের নান্দনিক মসজিদ নির্মান করা বেশ আশ্চর্যজনক। মসজিদটিকে অবশ্যই সংরক্ষন করা প্রয়োজন।
দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যর অংশ হিসেবে এই মসজিদটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সরকার এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব নেয়া প্রয়োজন বলে উপজেলাবাসী মনে করছে।
দশমিনায় প্রাচীন ঐতিহ্যের আমির উল্লাহ মসজিদটি সংস্কারের পর দৃষ্টি কাড়ছে
