দশমিনা(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন এবং কেঁচো ও কেঁচো সার বিক্রি করে কৃষি উদ্যোক্তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উপজেলায় বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচোর উপর কৃষকরা ঝুঁকে পড়ছে। প্রতিনিয়ত উপজেলায় ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচোর প্লান্ট বাড়ছে।
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়নের দক্ষিন যৌতা গ্রামের বাসিন্দা ওবায়দুল সরদার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২টি হাউজ ও ২টি রিং স্লাব দিয়ে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও বানিজ্যিক ভাবে কেঁচো বিক্রি। ধীরে ধীরে সার উৎপাদনের পরিধি বাড়িয়েছেন। বাড়ির পাশে টিনের সেড ও দো-চালা পলিথিনের ঘরে দুটি হাউজ ও দুটি রিং স্থাপন করে বাণিজ্যিকভাবে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও কেঁচো বিক্রি শুরু করেন। প্রতি মাসে ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো বিক্রিতে ওবায়দুল সরদার আয় করবেন ২৫-৩০ হাজার টাকা।
সরেজমিনে কৃষি উদ্যোক্তা ওবায়দুল সরদার ভার্মি কম্পোস্ট সারের প্লান্ট ও কেঁচো উৎপাদনের প্লান্ট ঘুরে দেখা যায়, সার তৈরির জন্য স্থাপন করা প্রতিটি হাউজে ৩ থেকে ৪ মন গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্ট ও কলাগাছের টুকরার মিশ্রন করে প্রতিটি রিংয়ে ৯ কেজি কেঁচো ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর চটের বস্তা দিয়ে রিংটি ঢেকে রাখা হয়। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার। ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের খরচ এবং লাভের বিষয় জানতে চাইলে মজনু প্যাদা বলেন, হাউজ ও রিং স্লাব এবং ঘর নির্মাণসহ মোট খরচ হয় প্রায় ১৩ হাজার টাকা। পরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আরও ৩০ হাজার টাকা খরচ করে হাউজ তৈরি করেছি। এক মাসে উৎপাদন হয় ২ টন কেঁচো সার। প্রতি কেজি সার ১১ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি প্রতি কেজি কেঁচো ৯ শ’ থেকে ১১শ’ টাকা দরে বিক্রি করছি। কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজের চাহিদা পূরণ ও বানিজ্যিকভাবে বিক্রি করে আসছি। বাড়তি কেঁচো এবং সার বিক্রি করে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করা যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কমিউনিটি বেইজড কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরগুলোতে কৃষকদের ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো উৎপাদন প্রদর্শনী দেওয়া হয়। প্রদর্শনীর আওতায় ঘর নির্মাণের জন্য টিন, খুঁটি, রিং এবং কেঁচো দেওয়া হয়। উপজেলায় প্রায় সরকারি ও নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় অর্ধ শতাধিক কৃষক ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও কেঁচো বিক্রি করে আসছেন। এছাড়া ৭০-৮০জন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও কেঁচো বিক্রি করছে। উৎপাদিত কেঁচো সার ও কেঁচো স্থানীয় কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা এসে কৃষি উদ্যোক্তাদের বাড়ি থেকে সার কিনে নিয়ে চাষাবাদ করছে।
গছানী গ্রামের কৃষক মো. কাজী সরোয়ার হোসেন জানান, ভার্মি কম্পোষ্ট সার ফসলে ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছি। আমার মতো অনেকেই এখন চাষাবাদে ভার্মি কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করছেন। এতে রাসায়নিক সারের তুলনায় খরচ কম, ফসলের উৎপাদন বেশি হয়।
ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.জাফর আহমেদ বলেন, পরিবেশ বান্ধব ভার্মি কম্পোষ্ট সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও মাটির উর্বরতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর ফলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে যাবে। ভার্মি কম্পোস্ট সারের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত কৃষি উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
দশমিনায় ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো প্লান্ট বাড়ছে
