বিধান চন্দ্র ঘোষ, দাকোপ : খুলনার দাকোপে বিভিন্ন নদ-নদীতে আহরণ করা হচ্ছে গোলদা চিংড়ির রেণু পোনা। বিভিন্ন বয়সের লোক নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে এ পোনা আহরণ করছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে কয়েক লক্ষ মিটার নেটজাল জব্দ করলেও থেমে নেই রেণু পোনা আহরণ। ফলে চিংড়ির পোনার সঙে দেশীয় প্রজাতির অন্যান্য মাছের পোনাও প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে। এদিকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নাম ভাঙিয়ে আবার এসব জেলেদের কাছ থেকে প্রতি গোনে স্থানীয় একটি চক্র রীতিমত চাঁদাও তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় উপজেলার কাজিবাছা, পশুর, চুনকুড়ি, ঢাকি, কালাবগী ও শিপসাসহ বিভিন্ন নদীতে গোলদা চিংড়ির এ রেণু পোনা আহরণ করা হচ্ছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে শিশু নারীসহ বয়ঃবৃদ্ধ লোক প্রকাশ্যে আহরণ করছেন এ পোনা। এতে একটি রেণু পোনা আহরণ করতে গিয়ে প্রায় শতাধিক প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। আর প্রতিদিন এভাবে লাখ লাখ পোনা নিধন হওয়ায় দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞদের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রতিটি চিংড়ির রেণু পোনার সঙে অন্য প্রজাতির অন্তত ১২০টি পোনা নিধন হয়। তাদের মতে নেটজাল টেনে তীরে উঠিয়ে বেছে বেছে চিংড়ির রেণু পোনা রেখে অন্য পোনা ফেলে দেয় তীরে যা পরে কাকের খাবারে পরিনত হয়। যুগ যুগ ধরে এমন চিত্র প্রদর্শিত হওয়ায় দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ নেই বললেই চলে। আহরণ করা এসব রেণু পোনা আবার প্রকাশ্যে উপজেলা সদর চালনা বাজারসহ বিভিন্ন আড়তে বেচা কেনাও হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালাবগি এলাকার একাধিক রেণু পোনা আহরণকারীর সঙে আলাপকালে তারা জানান, তারা অনেকেই জানেন যে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে রেণু পোনা আহরণ করা সম্পূর্ণ বে-আইনি। তারপরও তাদের অন্য কোন আয় না থাকায় শিবসা নদীতে নেটজাল ধরে বা নদীর তীর দিয়ে টেনে যে রেণু পোনা পায় তা বিক্রি করে সংসার চালান। এসব পোনা প্রতি হাজার ২৮০০ টাকা দরে স্থানীয় বিভিন্ন ফড়েদের কাছে তারা বিক্রি করে থাকেন। তবে বর্তমানে পোনা পরিমানে বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে দাম অনেক কমে গেছে বলে তারা জানান। জাল ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কথা বলে স্থানীয় একটি চক্র তাদের কাছ থেকে প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার গোনে নেটজাল প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন। জাল ধরা বন্ধ করে দেওয়ার ভয়ে প্রতিবাদও করতে পারেন না বলে তারা জানান।
এব্যাপারে উপজেলা সিনিয়ার মৎস্য কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার বলেন, নদীতে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে কোন প্রকার মাছ ধরা যাবে না। তাই মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ ও অন্যান্য আইন বাস্তবায়নে গত এক বছরে ১৫০টি অভিযান পরিচালনা করেছি। আর ৫০টি মোবাইল কোর্ট। এতে ২ লাখ ৫০ হাজার মিটার নিষিদ্ধ নেটজাল জাল জব্দের পর পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। দুই হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। এছাড়া দুই লাখ বাগদা চিংড়ি ও পারসে মাছের পোনা জব্দের পর নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। ১৫ হাজার গলদার পোনাও। তা ছাড়া কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশও পৃথক পৃথক অভিযান পরিচালনা করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল সংকটের কারণে অনেক কাজে অসুবিধা হচ্ছে। আর প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তোলা চক্রের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নেটজালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানান।
দাকোপে নিষিদ্ধ নেটজালে মাছের পোনা নিধনের অভিযোগ
Leave a comment