
এম সাইফুল ইসলাম
করোনার প্রকোপে গত দুই বছর খুলনাসহ সারাদেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ কেটে যাওয়ায় দেশে আবার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নেতারা সক্রিয় হয়েছেন। তবে ইফতার কেন্দ্রিক রাজনীতিতে তরুন নেতারাই এগিয়ে রয়েছেন।
ইফতার আয়োজন ঘিরে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গন আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে আওয়ামী লীগের নেতারা একসঙ্গে বড়-বড় ইফতার পার্টির আয়োজন করেছেন। অপরদিকে বিএনপির নেতাদের আলাদা-আলাদা আয়োজনে দলটির মধ্যে গ্রæপিং প্রকাশ্যে এসেছে। ইফতার পার্টির আয়োজনে পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টিও। প্রতিদিনই থানা ও ওয়ার্ডে বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার আয়োজনে নেতারা বক্তৃতা করছেন।
খুলনায় রাজনৈতিক দলগুলো নগর ও জেলা পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করলেও এক্ষেত্রে ভীন্নতা নিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। সরকারি এ দলের নেতারা ব্যক্তিপর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করছেন। গত ১৭ এপ্রিল সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের সম্মানে খুলনা-২ আসনের এমপি সেখ জুয়েল ইফতারের আয়োজন করেন। এর আগে আওয়ামী লীগ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সুধীজনদের নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন ইফতারের আয়োজন করেন। নিজ আসনের থানা ওয়ার্ড ও অঙ্গ সংগঠনের ইফতার আয়োজনে খুলনা-৩ আসনের এমপি মন্নুজান সুফিয়ান নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন। ২০ এপ্রিল খুলনা-৬ আসনের এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু নিজ আসন কয়রা-পাইকগাছা এলাকার মানুষের সম্মানে খুলনায় ইফতারের আয়োজন করেন। ২৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগ নেতাসহ নিজ আসনের নেতাদের নিয়ে খুলনা-৪ আসনের এমপি সালাম মুর্শেদী ইফতার করেন। এছাড়া খুলনা-১ এবং খুলনা-৫ আসনের এমপিরা নিজ নির্বাচনি এলাকায় উপজেলা ও থানা পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করছেন।
বাকি যাচ্ছেন না এ দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বেলায়। গত ২৮ এপ্রিল যুব মহিলা লীগের সদস্য সচিব আইরিন রায়হান চৌধুরি তার নেত্রীদের নিয়ে খুলনা প্রেসক্লাবে ইফতারির আয়োজন করে। এ ঈফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করেন কেসিসি মেয়র তালুকদারসহ আওয়ামী লীগের মহানগর নেতৃবৃন্দ। এর আগে যুগ্ন আহবায়ক নাসরিন ইসলাম তন্দ্রার আয়োজনে তার নিজস্ব বাসভবনে ইফতার পার্টির আয়োজন করেন।
এদিকে গত ১৪ এপ্রিল খুলনা ক্লাবে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ইফতারের আয়োজন করে। এতে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ নগর ও জেলার আহ্বায়ক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ইফতারের আগে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। অবশ্য একই দিন খুলনা মহানগরের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা ইফতারের আয়োজন করেন। তবে হোটেল টাইগার গার্ডেনে সাবেক বিএনপির নেতাদের ব্যানারে আয়োজিত ইফতারে মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন না। একই দিনে পৃথকভাবে ইফতারের আয়োজন করাটাকে দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল মনে করছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। ২০ এপ্রিল খুলনা ক্লাবে জেলা বিএনপির ইফতার আয়োজনে আধিপত্য বিস্তার ও চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নাদিমুজ্জামান জনিসহ পাঁচ নেতাকর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। ২১ এপ্রিল নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির সাবেক নেতাকর্মীরা ইফতারের আয়োজন করেন।
জাতীয় পার্টি মাঠে সক্রিয় না থাকরেও ইফতার রাজনিতিতে সরব। গত ১৮ এপ্রিল খুলনা ফেরিঘাট মোড়ে হোটেল ক্যাফে ইনে জাতীয় পার্টির জেলা কমিটি ইফতারের আয়োজন করে। এতে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ নগর ও জেলার কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে খুলনা প্রেসক্লাবে মহানগর শাখা ইফতার পার্টির আয়োজন করেন। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলা ও অঙ্গ সংগঠন আলাদা আলাদাভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন করেন।
বরাবরে মতোই ইফতার রাজনিতিতে পিছিয়ে রয়েছে বাম দলগুলো। তাদেও মাঠে কোন সক্রিয়তা ছিল না। তবে একাধিক বাম নেতার দাবি তারা রমজানে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া একাধিক ইসলামিক দল মাঠে থাকলেও ইফতার রাজনিতিতে সক্রিয় ছিল শুধু ইসলামী আন্দোলন। এছাড়া প্রকাশ্যে কোন অনুষ্ঠান করেনি জামায়াত ইসলাম। খুঁজে পাওয়া যায়নি খেলাফত মজলিশ , হেফাজত ইসলামসহ অন্যন্য ইসলামীক সংগঠনগুলো।