টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনের অন্যতম শর্ত সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা। ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। ২০১৮ সালে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল জানিয়েছিল, সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১.৬ শতাংশ। গত কয়েক বছরে সড়ক দুর্ঘটনার হার ও সংখ্যা উভয়ই বেড়েছে।
সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনগণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। কয়েক বছর আগের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ চালকেরই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আবার বৈধ লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন এমন চালকদের ৩১ শতাংশ কোনো অনুমোদিত ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নেননি। ফলে চালকদের বেশির ভাগই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত নয়। আবার দেশের সড়ক-মহাসড়কে যেসব যানবাহন চলছে তার বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই। ফিটনেসবিহীন গাড়িও দুর্ঘটনার কারণ হয়। চালকদের মাদকাসক্তিও সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ।
কত পরিবার যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
রবিবার টাঙ্গাইলে অটোরিকশা-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৪ হয়। গত শুক্রবার দুপুরে শেরপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আলালপুর এলাকায় বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ অটোরিকশার সাত যাত্রী প্রাণ হারায়। গত শুক্রবারই সড়কে ১৮ জনের প্রাণ গেছে। এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারী শনিবার বিকেলে খুলনার ডুমুয়িায় বেপরোয়া ডাম্প ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ইজিবাইক চালক ও নারী শীশুসহ একই পরিবাররের ৪জনসহ মোট পাঁচজন নিহত হয়।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে যত আন্দোলন হয়েছে, যত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, যত সুপারিশ এসেছে, সম্ভবত আর কোনো বিষয়ে তা হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দেশে নতুন আইন হয়েছে। মহাসড়কে শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিভাইডার বসানো হয়েছে, কিন্তু কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার যানবাহনের চালক ও মালিকদের মানসিকতারও কোনো পরিবর্তন হয়নি। নেই কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতাও। সারা দেশে চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে থাকছে গাড়ির স্টিয়ারিং। যখন কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়, তখন রুট পারমিট ও ফিটনেস সনদবিহীন যানবাহন সরিয়ে ফেলা হয়। অভিযান শেষে আবার রাস্তায় নামানো হয়। যেসব গাড়ির মান ভালো নয়, সেগুলোর কারণেই দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। প্রতিদিন কতসংখ্যক ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তায় চলাচল করে তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান কারো কাছে আছে বলে মনে হয় না।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। আমরা কোনোমতেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। যেকোনো মূল্যে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।