
আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল।
দীর্ঘ ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে যেভাবে চোখের পানি ফেলে বিদায়ের বার্তা দেন তিনি, স্বভাবতই দেশজুড়ে ভক্ত-সমর্থকদের মনে তা গভীর দাগ কাটে। ওঠে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের পর শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ডাকে তার সঙ্গে গণভবনে দেখা করেন তামিম। এরপর প্রত্যাহার করেন অবসরের ঘোষণা। সাক্ষাতের পর বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে ফিট রাখতে দেড় মাসের ছুটি চেয়েছেন তামিম। ছুটি শেষে তিনি আবার জাতীয় দলে যোগ দেবেন।
দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি অবদান যাদের, স্বাভাবিকভাবেই যথাযথ সম্মান তাদের প্রাপ্য। কোনো কারণে একজন খেলোয়াড় যখন দল ছাড়ার ঘোষণা দেন, তখন তা দেশ ও ক্রিকেটভক্তদের জন্য দুঃখের কারণ হয়ে ওঠে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ই চান আগাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে খেলার মাঠ থেকে বীরোচিতভাবে বিদায় নিতে, যা সেই খেলোয়াড়কে ভক্তদের মণিকোঠায় স্থান করে দেয়। অতীতে অনেক খেলোয়াড়ের জীবনেই তা ঘটেছে। তবে আমাদের দেশে ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে কেন তা ঘটছে না?
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং ক্রিকেট বোর্ড ও খেলোয়াড়দের মধ্যে নানা কারণে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কথা অনেকদিন ধরেই ওপেন সিক্রেট। অতীতে নানা বিষয়ে খেলোয়াড় ও বোর্ড কর্তাদের কথা থেকেও তা বেড়িয়ে এসেছে। তবে কখনো কখনো সভাপতিসহ বোর্ড কর্তারা টাইগারদের নিয়ে প্রকাশ্যে যেসব বিষোদ্গার করেছেন, তা খেলোয়াড়দের তো বটেই, ভক্তদেরও আহত করেছে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সফলতা মূলত খেলোয়াড়দের ওপরই নির্ভর করে থাকে। টাইগাররা ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে হারালে তা যেমন বোর্ডের সাফল্য হিসাবে বিবেচিত হয়, তেমনই ব্যর্থতার দায়ভারও তাদেরই ওপর বর্তায়।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরের ওই দাওয়াতে তামিমের কাছ থেকে অবসরের কারণ ছাড়াও অনেক কথাই জেনেছেন প্রধানমন্ত্রী। কী কী জেনেছেন, তা জানা না গেলেও বিসিবির কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের মধ্যে যে অসন্তোষ বিদ্যমান, প্রধানমন্ত্রী তার কিছুটা হলেও জেনেছেন, এ আশা করা যেতেই পারে। ক্রিকেট দুনিয়ায় বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা এবং ভাবমূর্তি বজায় রাখার স্বার্থে খেলোয়াড় ও বোর্ডের মধ্যে দূরত্ব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা উচিত বলে মনে করি আমরা। আতাহার, ফারুক, দূর্জয়, বাশার, নাফিস, আশরাফুল, মাশরাফিরা যেভাবে ক্যারিয়ার থেকে বিদায় নিয়েছেন, তামিম সেপথে হাঁটতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা হয়নি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। ক্রিকেট বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বাড়িয়েছে। তাই ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক। বোর্ড কর্তাদের কারণে ভবিষ্যতে টাইগাররা আর মনে খেদ নিয়ে মাঠ ছাড়বেন না-এটাই প্রত্যাশা।