
এম সাইফুল ইসলাম
খুলনার দৌলতপুরের ছাত্র ইউনিয়ন কর্মি তপন দাস। একাত্তরের রনাঙ্গনে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রচন্ড নির্যাতনে পর তাকে হত্যা করা হয়। তিনি শহীদ হন। তার লাশ পাকিস্তানি ক্যাম্পের ভেতরেই পড়ে থাকায় কেউ উদ্ধার করতে সাহস পায়নি। ফলে এখানের কুকুর ও শকুন খুবলে খেয়েছে তার মরদেহ।
জানা যায়, তপন কমার দাসকে ২৯ জুলাই স্থানীয় রাজাকার ও আলবদরদের সহযোগিতায় পাক হানাদারদের দিয়ে আটক করিয়ে দৌলতপুরের বিখ্যাত পানচাষীর বিল্ডিংয়ে রাখা হয়। এরপরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশা পুলিশ ফাঁড়ির অদূরে ছিল নারায়ণ মজুমদারের বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে নারায়ণ মজুমদার ভারতে পালিয়ে গেলে তার বাড়িটি লুটপাট হয়। এরপর হানাদার বাহিনী এ বাড়িতে ক্যাস্প করে। এ ক্যাম্পে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। এই বাড়িতেই নির্যাতনের পরে হত্যা করা হয় তপন দাসকে।
তার হত্যার প্রত্যাক্ষদর্শী শেখ আঃ রাকিব। নারায়ন মজুমদারের সামনের বাড়িটিই তাদের। রাকিব তখন লুকিয়ে তার ওপর নির্যাতনের খন্ডাংশ দেখতে পায়। এছাড়া হত্যার পরে লাশ ও শকুনের রেখে যাওয়া লাশের খÐাংশ তিনি সমাধিস্থ করেন।
শেখ আঃ রাকিব এ প্রতিবেদককে জানান, পেছনে হাত বাঁধা একটি ছেলেকে পাশের ড্রেনে ফেলে দেয়। কষ্ট করে সে উঠে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় কোমর বেঁধে তাকে টানতে টানতে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়। দু’দিন পর ঝড়-বৃষ্টির সন্ধ্যায় তিনটি গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে তিনটি ছেলের লাশ দেখা যায়। পরে জানা যায় তাদের মধ্যে একজন ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী তপন কুমার দাশ।
তিনি আরও জানান, হত্যার পরে লাশ ক্যাম্পেই পড়ে থাকে। কয়েকদিন পরে পাক সেনারা ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেলে আমি গিয়ে দেখি লাশ শেয়াল ও কুকুর কেয়ে নিয়েছে এতদিনে। শুধু মাত্র কয়েকটা হাড় ও মাথার খুলি পড়ে আছে। এ ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী নারী নেত্রী শামীমা সুলতানা শিলু বলেন, যুদ্ধের সময় আমি কিশোরী ছিলাম। ঘটনার দিন বিকালে বারান্দায় বসে খেলছিলাম।
তপন দাসকে সারাদিন নির্যাতনের পর সেদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় মহেশ্বরপাশা বিলে অর্থাৎ কৃষি বিভাগের নার্সারি (প্রস্তাবিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
তপন কুমার দাসের ছোট ভাই স্বপন কুমার দাস বলেন, আমার ভাই যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্ব। তবে কষ্টকর হলো হলো আমরা তার লাশ খুঁজে পাইনি।