শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা
জন্মভূমি রিপোর্ট : নগরীর তালতলা উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কিরীটী রায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ সালের ১০ ধারায় মামলা হয়েছে। সোমবার দুপুরে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসী এই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে স্কুলে গণআন্দোলন শুরু করে। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শিক্ষককে বেদম প্রহার করে পুলিশে সোপর্দ করে। তার বিরুদ্ধে খুলনা থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়াও এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঐ বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকদের একাধিক ছবি এডিট করে জালিয়াতি করার প্রমাণ মিলেছে।
পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, তালতলা উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কিরীটী রায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া দুই জন ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ঘটনাটি অভিভাবকরা প্রথমে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানায়। কিরীটী রায় ঘটনাকে মিথ্যা বলে দাবি করে। একপর্যায়ে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার দুপুরে স্কুলে আন্দোলন শুরু করে এবং শিক্ষককে স্কুল থেকে বের করে আনতে চায়। তখন এলাকাবাসী পুলিশে খবর দিয়ে তাকে উদ্ধার করে। বর্তমানে তাকে সদর থানায় আটকে রাখা হয়েছে।
কিছুদিন আগে কিরীটী রায়ের বিরুদ্ধে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ চারজন নারী সহকারী শিক্ষক বিভিন্ন বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগের অনুলিপি তারা জেলা প্রশাসক, মেয়র, প্রেসক্লাব, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিডি, ডিপিও, টিও ও এটিও বরাবর জমা দিয়েছেন। গত রোববার এই শিক্ষকের বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে তাকে এই স্কুল থেকে অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশ আটক করার আগে এলাকাবাসী তার মোবাইল কেড়ে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, এই শিক্ষকের মোবাইলে স্কুলের পাঁচজন নারী শিক্ষকদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের একাধিক অপ্রস্তুত ছবি পাওয়া গেছে। প্রতিটি ছবি তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদের শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। তার সাথে কয়েকজন অসাধু শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষক নেতাদের সু-সম্পর্ক আছে। তিনি তাদেরকে ব্যবহার করে অপকর্ম চরিতার্থ করতেন। তিনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সবসময় অপচেষ্টা করেন বলে প্রধান শিক্ষক মোঃ মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন। এই স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নুরুন্নাহার খাতুন জানিয়েছেন, আমি এই স্কুলে ২০০৬ সালে যোগদান করি। কিরীটী রায় ২০০৯ সালে যোগদান করেন। তিনি ২০১০ সালে স্কুল কমিটির একজন পরিচালকের সাথে আমার ছবি এডিট করে আমার পরিবারকে দেখান, এতে আমি পারিবারিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হই। সহকারী শিক্ষক সুলতানা রাজিয়া জানিয়েছেন আমি ২০১৫ সালে অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করি। তিনি নারী শিক্ষকদের প্রচণ্ডভাবে ঘৃণা করেন এবং চারিত্রিকভাবে মিথ্যা অপবাদ দেন। তিনি প্রায়ই বলেন, নারী শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষের সামনে দিয়ে হাঁটলে পতিতার খরিদ্দার খোঁজার মত মনে হয়। তিনি বহুবার আমাদেরকে হিজড়ার সাথে তুলনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালের স্কুলের একজন ছাত্রকে অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগে তাকে এই স্কুল থেকে শাস্তিযোগ্য বদলি করে দৌলতপুরের কার্তিককুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে দুই জন নারী সহকারী শিক্ষক তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেখান থেকে তাকে দাকোপের কালাবগী সালেহা হাফেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২০১৬ সালে পুনরায় এই স্কুলে যোগদান করেন। কিরীটী রায়ের বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ মোসলেম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।