হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মহসিন ওরফে বাবু কবিরাজের বিরূদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য সহ সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৭ আগষ্ট) দুপুরে সরজমিন গিয়ে জানা যায়, বিগত সময়ে তুলারামপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী হিসাবে কর্মরত ছিলেন এই মহসিন ওরফে বাবু কবিরাজ। তার একাডেমিক কোন সনদ নাই। কেবলমাত্র নিজের নাম লিখতে পারেন। .তার বাড়ির পাশেই এ বিদ্যালয়। সে কারনে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি প্রভাব খাটিয়ে আসছেন। এক পর্যায়ে চাকরি ছেড়ে বিদ্যালয়ে দাদাগিরি করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ দখল করেন।
সভাপতি হয়ে মহাসিন ওরফে বাবু কবিরাজ বেপরোয়া হয়ে উঠেন। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে খামখেয়ালি ভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। সহকারী শিক্ষকদের সাথে বিভিন্ন সময় অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। শিক্ষকরা মাসিক বেতন পেলে বিভিন্ন অজুহাত তাদের নিকট হতে টাকা ধার নেন। পরে আর দেন না। পাওনা টাকা ফেরত চাইলে তাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখান। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই সাবেক সভাপতি মহসিন। তার আপন ভাই টিপু সুলতান এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে যা খুশি তাই করেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফজলুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের নামে মোট ৭৫ শতক জায়গা থাকলেও বিদ্যালয়ের দখলে আছে মাত্র ২৫ শতক জায়গা। বাকি জায়গা জবর দখল কওে ভোগ দখল করছেন সাবেক সভাপতি বাবু কবিরাজ। এমনকি বিদ্যালয়ের জমির দলিল ও প্রয়োজনীয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রধান শিক্ষকের নিকট নেই। সাবেক সভাপতি কুক্ষিগত করে রেখেছেন অসৎ উদ্দেশ্যে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে তার সভাপতি পদ বাতিল হলেও তার বাহাদুরি কমেনি। খবরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন রীতিমত। এ যাবৎকাল কোন শিক্ষক কর্মচারী এমনকি স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। এছাড়াও বিগত সময়ে জেলা পরিষদ ও বিভিন্ন দপ্তরের বরাদ্দকৃত অর্থ নামমাত্র কাজ করে সমুদয় টাকা আতসাৎ করা হয়েছে।
এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জণ রয়েছে গ্রন্থাগার পদে জেসমিন আরাকে নিয়োগ দিয়ে তার নিকট হতে ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। একই ভাবে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে শান্তা ইসলামকে নিয়োগ দিয়ে ৭ লক্ষ টাকা, আয়া পদে পাপিয়ার কাছ থেকে ৭ লক্ষ টাকা এবং নিরাপত্তা কর্মী পদে অনুপ বিশ্বাস এর কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা নিয়েছেন।
একাধিক শিক্ষক ও এলাকাবাসি জানান, দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যালয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম চলে আসছে। সন্ত্রাসী হামলা ও হয়রানীর ভয়ে কেউ তার অনিয়মের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না । এখন সরকার সভাপতি বাতিল করেছেন। দু’একজন একটু মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধু চৌধুরী বলেন তিনি হিন্দু মানুষ হওয়ায় তাকে কেউ মূল্যায়ন করে না। আর ভয়ে তিনি কোন কিছু বলেন না। তবে বর্তমান সভাপতি ইউএনও মহেদায় ইচ্ছা করলে বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধার করতে পারবেন। কারন এই মুহুর্তে ভয়ে মহাসিন ওরফে বাবু কবিরাজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সাবেক সভাপতি মহসিন ওরফে বাবু কবিরাজ সকল অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, এলাকার কিছু মানুষ তার বিরূদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করছেন। তিনি দাবি করেন যা কিছু করেছেন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে করেছেন। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা সাবেক এই সভাপতির দূর্ণীতি অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতার সঠিক তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।