পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। দেশের ‘অবহেলিত জনপদ’ হিসেবে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চল যুক্ত হলো রেল নেটওয়ার্কে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ট্রেন গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার কমলাপুর থেকে মুন্সীগঞ্জ, পদ্মা সেতু, মাদারীপুর, শরীয়তপুর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশনে গিয়ে থামে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকারের আমলে যেসব ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পদ্মা সেতু দিয়ে রেল নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করবে এই রেল নেটওয়ার্ক। এর ফলে দেশের জিডিপিতে বড় ধরনের অগ্রগতির সূচনা হবে। সারা পৃথিবীতেই রেল নেটওয়ার্ক নতুন করে গতি পাচ্ছে।
ট্রেন পুনরায় জনপ্রিয় গণপরিবহন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সড়কের চেয়ে রেলপথে যাত্রী ও মালপত্র পরিবহন অনেক বেশি সাশ্রয়ী। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসেই প্রায় ভেঙে পড়া রেল নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে মনোযোগ দেয়। খুলনা-মোংলা রেলপথ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
আগামী মাসে চালু হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের নির্মাণকাজও সম্পন্ন হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক রেলপথই নতুন করে চালু হয়েছে। নির্মিত হয়েছে আরো অনেক রেলপথ। ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথটি দেশের অন্যান্য রেলপথ থেকে আলাদা।
ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে নির্মিত এই রেলপথের ধারণক্ষমতা এবং চলাচলের গতিও হবে অনেক বেশি। আগামী বছরের মধ্যে এটি যশোর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে। পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে শিল্প-বাণিজ্যের নতুন হাব হতে চলেছে দক্ষিণাঞ্চল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অদূর ভবিষ্যতে যত শিল্প, কলকারখানা গড়ে উঠবে তার বেশির ভাগই হবে দক্ষিণাঞ্চলে। এ জন্য দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প স্থাপন উৎসাহিত করার জন্য সরকারকে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু শিল্প-বাণিজ্য নয়, দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনেও ক্রমেই গতি সঞ্চারিত হচ্ছে। কুয়াকাটা ও সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পর্যটন সম্ভাবনারও দ্রুত বিকাশ ঘটবে। এ জন্য পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে আরো তৎপর হতে হবে। দ্রুততম সময়ে রেল নেটওয়ার্কের আরো সম্প্রসারণ করতে হবে। রেলপথ পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। সরকারের পরিকল্পনায় তা রয়েছে। তবে কাজটি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের নদীপথগুলোরও সংস্কার করতে হবে। নদী ও সমুদ্র কেন্দ্রিক পর্যটন সম্ভাবনা বাড়াতে হবে।
পদ্মা সেতু ও পদ্মা রেল সেতু দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থায় এটি অবশ্যই এক মাইলফলক অগ্রগতি। আমরা আশা করি, উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। দেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলার পথে।