জন্মভূমি ডেস্ক : পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা-ঢাকা রুটে প্রথম কমিউটার ট্রেন নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার ও রাজধানী ঢাকার মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে শুক্রবার থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিন খুলনা থেকে ৩৮টি স্টেশন ধরে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে ১০ ঘন্টা ৩০ মিনিট। পদ্মা সেতু দিয়ে বাণিজ্যিক ট্রেন চালুর মাস পূর্তিতেই আরেকটি ট্রেন বাড়ানো হলো। প্রথমবারের মত চালু হলো কমিউটার ট্রেন। খুলনা-ঢাকা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং বেনাপোল-ঢাকা রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস নিয়মিত চলাচল করছে। বিজয়ের মাসের প্রথম দিন পদ্মা সেতু পার হয়ে শুক্রবার থেকে যুক্ত হয়েছে রাজশাহী-ঢাকা রুটে মধুমতি এক্সপ্রেস এবং খুলনা-ঢাকা রুটে কমিউটার ট্রেন নকশীকাঁথা।
নতুন রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়া মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মা ও মাদারীপুরের শিবচর স্টেশনসহ সবগুলো স্টেশনে যাত্রী উঠানামা করা এবং ভাড়া কম হওয়ায় যাত্রীরা অনেক খুশি। প্রথম কমিউটার ট্রেনের যাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।
মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার হাসানুর রহমান জানান, নতুন স্টেশনগুলোতে যাত্রীসেবা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রথম কমিউটার ট্রেনে ৩৬২ সিটের বিপরীতে ৫শতাধিক যাত্রী ভ্রমণ করেন।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকৌশলী ইউসুফ আলী বলেন, খুলনা থেকে ৩৮৩ কিলোমিটার পথে ৩৮টি স্টেশন ধরে ১০ ঘন্টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর কমলাপুর ষ্টেশনে সকাল সাড়ে ১০ টায় ট্রেন পৌঁছায়। সপ্তাহে সাতদিন খুলনা থেকে রাত ১১টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে যাবে নকশী কাঁথা এক্সপ্রেস। ট্রেনটি ঢাকা পৌঁছাবে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে। আর ঢাকা থেকে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে খুলনা পৌঁছাবে রাত ১০টা ২০ মিনিটে।
এদিকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও রাজধানী ঢাকার মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার থেকে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকার পথে যাত্রা শুরু করে ১৩ বগির কক্সবাজার একপ্রেস ট্রেনটি। কক্সবাজারের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ চালুর লক্ষ্যে কক্সবাজার শহরের ঝিলংজায় ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ আইকনিক রেল স্টেশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজারে নবনির্মিত আইকনিক স্টেশনে এই রেলপথ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর ট্রেনের সময়সূচি নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে রেল বিভাগ।
এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসতে ইতোমধ্যে হোটেল বুকিং দিয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই রুটে ট্রেনের সব টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে ৭৮০ জন যাত্রী নিয়ে প্রথম ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পরদিকে, রাত সাড়ে ১০টায় সমসংখ্যক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে আরেকটি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এই রুটে আপাতত দুটি ট্রেন চলাচল করবে। কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন ট্রেন ছাড়বে দুপুর সাড়ে ১২টায়। চট্টগ্রাম হয়ে এটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। অন্যদিকে, ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। এটি কক্সবাজার পৌঁছাবে পরদিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসি চেয়ার আসন ৩৩০টি এবং নন এসি শোভন শ্রেণিতে আসন সংখ্যা ৪৫০। চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত থাকবে দুটি কোচ। এই রুটে এসি স্নিগ্ধা শ্রেণি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৩২৫ টাকা। নন এসি শোভন শ্রেণির ভাড়া ৬৯৫ টাকা। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া এসি ৪৭০ টাকা এবং নন এসি ২৫০ টাকা।