# তদন্ত কমিটি গঠন
# হাসপাতালে ভোগান্তি
#মোমবাতি ও মোবাইলের আলোয় চলল হাইকোর্টের বিচারকাজ
# টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘিœত
# পোশাক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত
# মোমবাতি সংকট
জন্মভূমি ডেস্ক
জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট হলে মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৫ মিনিট থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এছাড়া খুলনার আংশিক এলাকা দীর্ঘসময় বিদ্যুৎহীন ছিল। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে অনেকগুলো জেনারেশন প্লান্ট বন্ধ হয়ে যায়।
তবে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর রাজধানী ঢাকার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সচিবালয়ের গেট, চারপাশ ও সচিবালয় চত্বরের বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করা হয়। ওই সময় বিদ্যুৎ আসে বিদ্যুৎ ভবনেও। সোয়া ৬টায় সচিবালয়ের ভবনগুলোতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার গুলশান, বারিধারা, উত্তরা ও মিরপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে সরবরাহ আরও বিভিন্ন এলাকায় বাড়ানো হচ্ছে।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির কাউসার আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এখন ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন। ধীরে ধীরে সরবরাহ শুরু করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ও পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা ও আশেপাশের অঞ্চলে বিদ্যুৎ ‘রিস্টোর’ হচ্ছে। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে। এছাড়া সরবরাহ চালু হয়েছে ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জের আংশিক এলাকায়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. শামীম হাসান জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় ঘটে। এতে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহের বড় অংশ ও খুলনার আংশিক এলাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, দুপুর দেড়টায় জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেওয়ার কারণে সিলেটে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইন্টেন্যান্স) মো. মাসুম আলম বকসী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ আমরা এখনও জানি না, কী হয়েছে। যত দ্রæত সম্ভব বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছি।’
পিজিসিবির একটি সূত্র বলছে বেলা ৩টার পর যমুনা নদীর পাড় থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা গেছে। তবে সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
\ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ \
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। মঙ্গলবার বিকালে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি এবং তৃতীয়পক্ষের একটি কমিটি বিভ্রাটের কারণ খুঁজে বের করতে কাজ করবে।
\ মোমবাতি ও মোবাইলের আলোয় চলল হাইকোর্টের বিচারকাজ \
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের প্রভাব পড়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টেও।
বিদ্যুৎ না থাকায় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ-এ এজলাস কক্ষে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও মোবাইলের আলোতে বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন বিচারপতিরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতে উপস্থিত থাকা একাধিক আইনজীবী জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারকাজ পরিচালনা করছিলেন। দুপুরের দিকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সুপ্রিম কোর্ট। এ সময় এনেক্স ভবনের জেনারেটরও বন্ধ ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে বিচারকাজ বন্ধ না করে মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং এজলাস কক্ষে থাকা আইনজীবীদের মোবাইলের লাইটের আলোতে বিচারকাজ চলতে থাকে। প্রায় সোয়া ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে অনেক মামলা নিষ্পত্তি করেন সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ।
\ হাসপাতালে ভোগান্তি \
বিদ্যুৎ না থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেও প্রভাব পড়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর থেকেই ভোগান্তিতে পড়ে ভর্তি রোগীরা। এদিকে, বিশেষ ব্যবস্থায় চলছে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। বিকেলে সরেজমিনে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাড়াও অন্যান্য হাসপাতালেও সমসায় পড়ে রোগীরা। বিশেষ করে অপারেশর ও জরুরি পরীক্ষা করতে না পারায় অনেক রোগী দুর্ভোগে পড়েন।
\ টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘিœত \
জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘিœত হচ্ছে। মোবাইল থেকে কল, এসএমএস ও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারেও সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
দেশের মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) দেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘিœত হওয়ার কথা জানিয়েছে।
টেলিকম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক চালু রাখা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে সাময়িক অসুবিধার জন্য গ্রাহকদের প্রতি এমটবের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
\ পোশাক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত \
জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়ায় দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ নেতৃত্ব দেওয়া পোশাকখাতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিটি কারখানায় জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। তবে জেনারেটর দিয়ে কাজ চালাতে হলে পণ্যের কোয়ালিটি, উৎপাদন ও খরচ বেড়ে যায়।
\ তেল কিনতে পাম্পে ভিড় \
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। জরুরি কাজ চালিয়ে নিতে জেনারেটরের সচল রাখতে ভিড় করে তেল পাম্পে। কনটেইনার হাতে ডিজেল কিনতে পাম্পে লাইনে দাঁড়ায় মানুষ।
নীলক্ষেত মোড় এলাকায় পথের বন্ধু ফিলিং স্টেশন, মালিবাগ অটো সার্ভিস, নীলক্ষেত এলাকায় কাজী গোলাম সামদানী পাম্প, উত্তর বাড্ডা এলাকায় আল-মক্কা পাম্পে গ্যালন হাতে তেল নিতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তারা বলেন, বিদ্যুৎ নেই। এখন জেনারেটরই ভরসা। বিদ্যুৎ গেলে কী হবে, অফিস বা বাসার জেনারেটর তো চালাতে হবে। এজন্য তেল কিনতে এসেছি।
\ মোমবাতি সংকট \
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের খবর পাওয়ার পর পরই বিভিন্ন এলাকায়ও মোমবাতির সংকট দেখা দেয়।
মঙ্গলবার রাজধানীর শান্তিনগর, ফকিরাপুল ও সেগুনবাগিচা এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। সেখানে পাড়া-মহল্লার দোকানে যারাই আসছেন তারা মোমবাতি খোঁজ করছেন। কোনো কোনো দোকানে মিললেও অধিকাংশ দোকানে সন্ধ্যায় মোমবাতি ছিল না। আর ৫টাকার মমোবাতি ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পাঁচ ঘন্টা পরে ফিরতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ
Leave a comment