শাহরিয়ার কবির, পাইকগাছা : খুলনার পাইকগাছায় প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ইটভাটা ও কয়লার চুল্লি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরেও যেনো নড়েচড়ে বসেছে ইটভাটা ও কয়লা গোলার মালিকরা। অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে ইটভাটা ও কয়লা তৈরীর চুল্লি গড়ে ওঠায় পরিবেশ বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে গত বছর ২৫/২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়।খবর প্রকাশে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন পরিবেশ সুরক্ষায় উপজেলার চাঁদখালী অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর কারখানা বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
অবৈধ চুল্লি ধ্বংস বা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেন খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রট মো. আসিফুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম।এসময়ে ৬৯টি চুল্লির মধ্যে স্কাভেটর দিয়ে ৫টি ধ্বংস করা হয়েছিলো। বাকী কয়লা চুল্লি গুলো বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মানবিক কারনে ১ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ ও অপসারণ করার শর্তে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু শাহাজাদা ইলিয়াস মুচলিকা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেন।এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও বন্ধ হয়নি কয়লার চুল্লি, আবারো নড়েচড়ে বসেছেন মালিকপক্ষ।
জানাযায়,একটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মন পর্যন্ত কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিবার কমপক্ষে ২৫ হাজার মন কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে ৩ থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। ফলে প্রতিমাসে কয়লার চুল্লিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হয়। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতি সহ সামাজিক বন। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের। বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্রকৃতি ধ্বংসসহ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও অদৃশ্য কারনে এতদিন কর্তৃপক্ষ্য নিরব ছিলো। অধিক লাভজনক হওয়ায় সবদিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি।অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে ইটভাটা ও কয়লা তৈরীর ক্ষমতার উৎস কি?
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চুল্লির কারনে রাস্তা দিয়ে চলা যায় না। চোখ জ্বালা করতে থাকে।দম বন্ধ হয়ে আসে। এলাকাবাসী আরও বলেন, এ সকল কাঠ কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারনে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যা সহ শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে। চুল্লি ও ভাটার মালিকরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। চাঁদখালী চুল্লি কারখানার পাশে কয়েকটি ইট ভাটা, রাড়ুলী পালপাড়ায়, ও রাড়ুলী ইটভাটা সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সমানতালে বিপুল পরিমাণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়।
ইটভাটা,কাঠের চুল্লিতে ব্যবহার, অধিক জনসংখ্যার চাপ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন উজাড় হচ্ছে। বনজ সম্পদ রক্ষা করা না হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে, যার প্রভাব পড়বে প্রকৃতিতে। দিনের পর দিন এমনি ভাবে বনজ সম্পদ কেটে চলেছে যার কারণে পরিবেশ আজ বিপর্যয়ের মুখে।
উক্ত বিষয়ে কয়লা চুল্লির মালিকদের সাথে কথা করতে চাইলে তাঁহারা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আসিফুর রহমান বলেন, আমরা খুলনা বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও অভিযান পরিচালনা করছি।আমরা গত বছর পাইকগাছায় অভিযান চালিয়ে কয়লার চুল্লি ভেঙে দিয়েছিলাম এবং ইটভাটার মালিক কে জরিমানা করা হয় কিন্তু আমরা চলে আসার পর আবার নতুন করে শুরু করে।আমারা শীঘ্রই অভিযান চালাবো এবং এমন ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যাবো, যে সবগুলো ভেঙ্গে দিতে পারবো।