পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা : পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি নদীতে লতা-দেলুটি খেয়াঘাট পাকাকরণ না থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। অবহেলিত এই খেয়াঘাটটি স্থানীয় সরকার বিভাগের তালিকা ভূক্ত। প্রতি বছর ইজারায় রাজাস্ব আদায় হলেও খেয়াঘাটের উন্নয়নে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। খেয়াঘাটটি দ্বীপ বেষ্টিত দেলুটি ও লতার মেলবন্ধন। নদীটির এক পাশে দেলুটি এবং অপরপাশে লতা ইউনিয়নের মানুষ নদী পার হচ্ছে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। যুগ যুগ ধরে এ অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। শিশু, নারী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত নিজেদের কাজ কর্ম ও গন্তব্যে পৌঁছাতে নদী পারাপার হতে হয় নিত্যদিন। আর এ নদীতে খেয়ার নৌকা থাকলেও খেয়াঘাট না থাকায় চরম ভোগন্তি পোহাতে হয় তাদের। জনগুরুত্বপূর্ণ খেয়াঘাটটি পাকাকরণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। ওই খেয়াঘাট সরজমিনে পরিদর্শন কালে দৈনিক জন্মভূমি এ প্রতিনিধির কাছে দীর্ঘদিনের চরম ভোগান্তির তথ্য তুলে ধরেন অত্র এলাকার মানুষ। উপজেলা সদর থেকে লতার বাজার পর্যন্ত পিচের রাস্তা হওয়ায় ওই খেয়াঘাট পার হয়ে দেলুটি সহ আশেপাশের গ্রামের মানুষ অতি সহজে উপজেলা সদরে পৌঁছাতে পারে। দেলুটিতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাছারিবাড়ি, বাজার অবস্থিত হওয়ায় ওপারে লতা ইউনিয়নের মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ নিয়ে এবং মাধ্যমিক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শত শত ছাত্র -ছাত্রী ওই খেয়াঘাটের উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও জীবিকা নির্বাহে এঅঞ্চলের মানুষরা মৎস্য লীজ ঘরের উপর নির্ভর হওয়ায় খেয়াঘাটটি আরও জনগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরজমিনে আরও দেখা যায়, দেলুটির অংশে ঘাট পাকাকরণ হলেও নদীর নাব্যতা কমে চর জেগে উঠেছে। ঘাট থেকে বেশ কিছু দূর কদমোক্ত অবস্থা নৌকায় উঠানামা করতে হয়। ওপারে লতা’র সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মন্ডলের বাড়ি সংলগ্ন পূর্ব লতা দেলুটি খেয়াঘাট অবস্থিত। অনেকে বিজয় মেম্বার এর বাড়ি সামনে বলে থাকেন। দ্বীপ বেষ্টিত এঅঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক দূরে দূরে থাকায় নিকটবর্তী খেয়া পার হয়ে শিক্ষার্থীরা দেলুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা করেন। সরকারি, বেসরকারি, চাকুরীজীবী সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ খেয়াঘাট পার হয়ে সহজে পাইকগাছা উপজেলা সদরে চলাচল করেন। দেলুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়াও দেলুটি জিরবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, জেলা পরিষদের পুকুর ও সাপ্তাহিক বাজার অবস্থিত এ গ্রামটিতে। লবণাক্ত এ অঞ্চলের মানুষের সুস্বাদু পানির বড়ই অভাব। প্রতিদিন সকাল-বিকেলে লতা গ্রাম থেকে বহু মহিলা খেয়াপার হয়ে দেলুটি সরকার পুকুর এবং সালাউদ্দিনের ঘের সংলগ্ন টিউবওয়েলের পানি খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনিতা রায় বলেন, প্রতিদিন লতা গ্রাম থেকে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী খেয়া পার হয়ে আমাদের দেলুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেতে হয়। আমাদের খেয়াঘাটের পূর্বপাড় কিছু অংশ পাকা থাকলেও পশ্চিম পাড়ে কোন পাঁকা ঘাট নাই। জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো উপর ভর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় প্রতিদিন। অনেক সময় পা পিছলে কাদায় পড়ে বই খাতা, পরনে পোষাক নষ্ট হয়। পিচ্ছিল কর্দমাক্ততায় পড়ে শরীরের আঘাত লাগে, স্কুলে না যেয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়। ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রমেশ বলে, নদীতে জোয়ারের সময় কিছুটা পারাপার সহজ হয়, ভাটা হলে হাঁটু কাদা ভেদকরে স্কুলে যাওয়া খুবই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দেলুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার সানা বলেন, খেয়াঘাটের পশ্চিমপাড়ে পাঁকা ঘাট না থাকায়, ২ থেকে ৩ রশি জরাজীর্ণ বাঁশের সাকো ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। খেয়ামাঝি পরিমল দাশ বলেন, লতা থেকে প্রতিদিন স্কুল পড়ুয়া দুই শতাধিক মানুষ পার হয়, নদীতে ভাটায় সাঁকো ছাড়াও চরে কাঁদায় হেঁটে খেয়া নৌকায় উঠতে দুর্ভোগে স্বীকার হতে হয় যাত্রীদের। ইউপি সদস্য কিংশুক রায় বলেন, সরকারিভাবে লতা দেলুটি পশ্চিম পাড়ে খেয়াঘাটটি সংস্কার হয়নি। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পার হতে হয় শত শত মানুষের। দ্রুত ঘাটটি সংস্করণ করার দাবি জানায়। লতা ১নং ইউপি সদস্য মো. বাবুল সরদার জানান, খেয়াঘাটটির ব্যাপারে ইউএনও স্যার কে অবহিত করা হয়েছে। দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন মন্ডল বলেন, নদীর নাব্যতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে, নদী ভরাটের কারণে চর বেড়ে গেছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে মাসিক সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, সরকারি বরাদ্ধর মাধ্যমে ঘাটটি সংস্করণের চেষ্টা করবো।